ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ডিমে সোনার দাম!

প্রকাশনার সময়: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৪১

অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে আবার ডিমের দাম বেড়েছে। সরকারের একাধিক কঠোর পদক্ষেপে মাসের শুরুতে ডিমের দাম কমলেও নতুন করে আবার তা বেড়েছে।

শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকার বাজারে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। ডজন ১৫০ টাকা। ডিমের দাম এমন অস্বাভাবিক বাড়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্তের এখন নাভিশ্বাস অবস্থা। অনেকেই ডিম কিনে বলতে শুরু করেছেন, ‘সোনার দামে’ ডিম কিনেছেন তারা।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, শুধু ডিম নয়, বাজারে সব কিছুর দামই বাড়তি। দামের কারণে অনেকেই মাছ, মাংসের বদলে ডিম, সবজি, ডালের দিকে ঝুঁকেছিলেন। এখন ডিম-সবজির দামও আকাশছোঁয়া। ক্রেতারা বলছেন, সবকিছুর দাম এভাবে বাড়লে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়বে।

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা নূরুল হক নয়া শতাব্দীকে বলেন, যেভাবে ডিমের দাম বাড়ছে, তাতে শিগগিরই ডিম ‘বড় লোকে’র খাবার হয়ে দাঁড়াবে। হুট করেই ১০ টাকা দাম বাড়িয়ে কিছুদিন পর ৩-৫ টাকা কমিয়ে দেয়। এই মূল্য কমে দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না। কিছুদিন পর তো আবার ডিমের দাম বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, এক কথা বলতে গেলে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে জড়িত সরকারি দফতরগুলো ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এখনো দিচ্ছে। এদেশে সরকারের চেয়ে ব্যবসায়ীরাই বেশি শক্তিশালী। মাঝে মাঝে বাজারগুলো ভ্রাম্যমাণ আদালতে পদচারণা দেখা যায়, কিছুদিন পর আবার উধাও। এভাবে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চলতে থাকলেও সাধারণ মানুষকে না খেয়ে মরতে হবে। না পারবে কিনতে, না পারবে খাইতে। তিনি আরও বলেন, নিত্যপণ্যের বাজারে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় শুধু ডিম একাই জায়গা করে নেয়নি। বরং ডিমের পাশাপাশি বাজারের প্রায় অর্ধেকের বেশি পণ্যের দাম বেড়েছে।

বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কাঁচকলা আর পেঁপে ছাড়া সব কিছুর দামই ৬০ টাকার ওপরে। বাজারে কাঁচামরিচের ঝাঁজ কমলেও কমেনি গাজর ও টমেটোর দাম। টমেটো ১৪০ টাকা ও গাজর বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। বেগুন কেজিপ্রতি ৭৫ টাকা। গোল বেগুন ৯০, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা।

গত সপ্তাহেও ঢেঁড়স ছিল ৫০ টাকা, এখন ৬০ টাকা। কাঁকরোলে কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। শসা কেজি প্রতি ৬০ টাকা। লাউয়ের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। কচুর লতি ৬০ টাকা, ১০ টাকা বাড়তিতে করলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। ৫০০ গ্রাম ওজনের ছোট পাতা কপির পিস ৫০ টাকা, ঝিঙ্গা ৭০, চিচিঙ্গা ৭০, পটোল ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুলা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা।

চলতি সপ্তাহে গত সপ্তাহের তুলনায় নতুন করে বেড়েছে আদা ও রসুনের দামও। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে দেশি আদা ও রসুনের দাম কেজিতে বেড়েছে ১৪ শতাংশের বেশি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে রসুনের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকার মতো। গত সপ্তাহের ৮০ টাকা কেজি দরের দেশি রসুন এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি দরে। আর গত সপ্তাহে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া দেশি আদা এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ২১৫ টাকা কেজি দরে।

বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দামও। ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭০ টাকা। এ ছাড়া লেয়ার ৩০০ টাকা এবং সোনালি প্রতিকেজি ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭০০ টাকা, আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা দরে। এর সঙ্গে বেড়েছে চালের দামও।

বাজার করতে আসা শামসুন নাহার নামের এক গৃহিণী নয়া শতাব্দীকে বলেন, যুদ্ধের অজুহাতে বিশ্বব্যাপী সবকিছুর দাম বাড়ানো হলেও এখন সব কিছুর দাম কমছে। কিন্তু ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশে। সবজির দাম এত বেড়েছে, এখন সবজি খাওয়ার অভ্যাস ছাড়ার উপক্রম হচ্ছে।

বাজারে শাকের বাড়তি দাম, আবার আঁটিতে পরিমাণে কম। আঁটিগুলো এমন যে, এক আঁটিতে চারজনের পরিবারে একবেলাও হয় না। দুই আঁটি নেয়া লাগে। শাক কিনতেই ১০০ টাকার মতো খরচ হয়ে যায়। এর সঙ্গে আরও তো বাজার আছেই। এভাবে বাজারের সব জিনিসের দাম বাড়তে থাকলে কোনো কিছুই কেনা সম্ভব হবে না। ফলে বর্তমানে সংসার চালানেই বড় দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাজারের এমন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রথমত সরকারের নীতিগত সহায়তা প্রয়োজন বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের দাম কমে গেলে সরকার আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে উৎপাদকদের স্বার্থ রক্ষা করে থাকে। একইভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে আমদানি শুল্ক কমিয়ে বাজার সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব। তবে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সরকারের নীতিগত সহায়তা যথেষ্ট নয়।

এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কম দামে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকার টিসিবির মাধ্যমে সেটি করেও থাকে। বর্তমানে যেভাবে চালসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে চলেছে, তাতে টিসিবির বিক্রয় কার্যক্রম শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও বিস্তৃত করতে হবে।

জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতিতে নিত্যপণ্যের দামে দিশেহারা হয়ে পড়েছে দেশের প্রান্তিক ও সীমিত আয়ের মানুষ। প্রতিদিনই হু হু করে বাড়ছে কোনো না কোনো নিত্যপণ্যের দাম।

লাগামহীনভাবে বাড়ছে চাল, ডাল ও ডিমের দাম। বাজারে ঢুকে পণ্যের দাম শুনতেই ক্রেতার হাত ওঠে মাথায়। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার বিভিন্ন সময় নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিভিন্ন পর্যায়ে পণ্যের দাম বেঁধে দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বাজার তদারকিতে মাঠে অভিযান চালাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। কিন্তু সরকারের এসব উদ্যোগও যেন বিফলে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশ অমান্য করার সাহস আছে কারও! অথচ সরকারের নির্ধারিত দাম ও নির্দেশনা উপেক্ষা করে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু আইন প্রয়োগে নিয়োজিতরা দিব্যি নির্বিকার। এর থেকে হতাশার আর কী হতে পারে!

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ