ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতির তিন সূচকে বাংলাদেশে আশার আলো

প্রকাশনার সময়: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৭:১০

বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের মধ্যে অর্থনীতির তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সূচকে আশার আলো দেখাচ্ছে বাংলাদেশ। ইউরোপীয় পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচকের সর্বশেষ তথ্যে এ কথা জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, বৈশ্বিক সংকট সত্বেও পোশাক রপ্তানিতে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ। বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৪৫% বেড়েছে।

এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে ৬০.৩০%। শুধু ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্র নয়, আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে জুলাই মাসে বাংলাদেশ থেকে সামগ্রিক রপ্তানি ১৪.৭২% বৃদ্ধি পেয়েছে। আর জুনে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৭.১৯%।

শুধু রপ্তানিই নয়, রেমিট্যান্স ও বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধিও সাম্প্রতিক সময়ে ইতিবাচক অগ্রগতি দেখা গেছে। এফওয়াই ২৩ এর প্রথম মাসে ৩.৯৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে প্রথমবারের মতো ৫২ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি করে দেশটি ৫০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যথারীতি প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে তৈরি পোশাক। গত মাসে এই খাতে রপ্তানি হয়েছে ৩.৩৬ বিলিয়ন ডলারের। এই হিসাবে, মোট রপ্তানির ৮৪.৪৯% পোশাক পণ্য। আর গত অর্থবছরের জুলাইয়ের তুলনায় এ পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে ১৬ দশমিক ৬১ %।

এদিকে ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে পোশাক পণ্যের আমদানি বেড়েছে ৪৪.৯৫ %।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সময় পর্যন্ত মোট ৯.৫৮ বিলিয়ন মূল্যের পোশাক পণ্য আমদানি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, জুলাই মাসে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৩.৯৬% বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, অনেকেই নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। আবার অনেকে উৎপাদনশীলতা বাড়াচ্ছেন।

কম সুদের হারের কারণে এ বছর আবাসন, গাড়ি ও ব্যক্তিগত ঋণও বেড়েছে। এছাড়া গত চার মাসে ডলারের দাম ২০% বেশি বেড়েছে।

যদিও ঘোষিত মুদ্রানীতিতে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩.৬%। ফলে ঋণের প্রবৃদ্ধির মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রা আগেই ছাড়িয়ে গেছে। অনেক মূল্যস্ফীতি সত্ত্বেও ভোক্তারা বেশি ঋণ নিচ্ছেন। কারণ ঋণের সুদের হার এখনও ৯% কাছাকাছি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাসে দেশটি ২.০৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স পেয়েছে যা রেমিট্যান্সের এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কমানোর আশা দেখাচ্ছে।

জুলাই মাসে, এফওয়াই২৩ এর প্রথম মাসে প্রবাসীরা ২.০৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে, যা গত ১৪ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। জুলাই মাসে অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল ১.৮৭ বিলিয়ন ডলার ও এফওয়াই২২-এ আগস্টে ১.৮১ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে আরও রেমিট্যান্স আকৃষ্ট করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন প্রক্রিয়া সহজ করেছে।

সরকার রেমিট্যান্স প্রণোদনার পাশাপাশি নীতিগত সহায়তা প্রদান করছে। এখন ডলারের দাম বেশি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

খাতের অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা বলছেন, বৈদেশিক চাকরির বাজারে মহামারী-পরবর্তী প্রত্যাবর্তনের কারণে গত অর্থবছরে জনশক্তি রপ্তানি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে বলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়বে।

ব্যুরোর অফ ম্যানপাওয়ার এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং (বিএমইটি) এর তথ্যে দেখা যায়, ৯ লাখ ৮৮ হাজার কর্মী ২২ অর্থবছরে বিদেশ গেছে যেখানে এই সংখ্যাটি ২১ অর্থবছরে ২ লাখ ৭১ হাজার ছিল।

গত সাত বছরে এটাই সর্বোচ্চ সংখ্যক বার্ষিক বিদেশে চাকরি।

কর্মকর্তারা আশা করছেন, চলতি অর্থবছরে শ্রমিকদের বহিঃপ্রবাহ বাড়বে কারণ মালয়েশিয়া একটি আলোচনা সাপেক্ষে দেশ থেকে জনশক্তি নিয়োগ পুনরায় শুরু করতে যাচ্ছে।

নয়াশতাব্দী/জেডআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ