২০২১-২২ অর্থবছরে মাত্র ২ হাজার ৩১১ জন করদাতা ঘোষণা দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বৈধ করেছেন। ২০২০-২১ অর্থবছরে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ২ হাজার ২৫১ জন। সে হিসাবে এক অর্থবছরের ব্যবধানে কালো টাকা সাদা করা ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েছে মাত্র ৬০ জন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এমন তথ্যই জানিয়েছে।
সবশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে প্রায় ১ হাজার ৬৬৩ কোটি কালো টাকা বৈধ হয়েছে। এর মাধ্যমে ১১৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা কর অর্জন করেছে এনবিআর। অথচ ২০২০-২১ অর্থবছরে রেকর্ড প্রায় ২০ হাজার ৬৫০ কোটি অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বৈধ বা সাদা করা হয়েছিল।
বিগত বছরগুলোতে সরকার দেশের মধ্যে থাকা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে আসছিল। গাড়ি-বাড়ি কিনেও অবৈধ টাকা বৈধ করার সুযোগ ছিল। কি এবারই প্রথম (চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে) বিদেশে পাচার করা অর্থ বা সম্পদের ঘোষণা দিয়ে তা সাদা করার সুযোগও দেয় সরকার। নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল।
অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা মোতাবেক, কেউ যদি বিদেশ পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনেন তাহলে ৭ শতাংশ কর দিলেই চলবে। আর বিদেশের কোনো স্থাবর সম্পত্তি দেশে ফিরিয়ে না আনলে ওই সম্পত্তির মোট মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ এবং বিদেশে থাকা অস্থাবর সম্পত্তি দেশে না আনলে তার ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অর্থবছরের মেয়াদকালে এক বছরের জন্য এ সুবিধা বলবৎ থাকবে।
গত অর্থবছরে পুঁজিবাজার, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, নগদ অর্থ, সঞ্চয়পত্র, জমি ও অ্যাপার্টমেন্ট কেনার ক্ষেত্রেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছিল।
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ গ্রহণ করার বিষয়ে শর্ত হিসেবে বলা হয়েছিল, কেউ উল্লিখিত খাতগুলোতে ২৫ শতাংশ এবং তার সঙ্গে জরিমানা হিসেবে ‘অতিরিক্ত’ ৫ শতাংশ কর দিয়ে টাকা সাদা করার ঘোষণা দিতে পারবেন। এজন্য এনবিআর, দুদক বা সরকারের অন্য গোয়েন্দা সংস্থা আয়ের উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করবে না। যদিও এর আগে কেবল ১০ শতাংশ কর দিয়ে টাকা বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। এ কারণে অনেকেই এগিয়ে এসেছিল।
তবে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ওই বিশেষ সুযোগ রাখা হয়নি। এবার বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে ফেরতে আনার বিশেষ সুযোগের ওপর জোর দিয়েছে সরকার। এনবিআরের পরিসংখ্যান বলছে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি টাকা সাদা হয়েছে নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ ও সঞ্চয়পত্রে। এসব খাতে ২ হাজার ২৫১ জন কালো টাকা সাদা করার ঘোষণা দেন। এর বিপরীতে কর আহরণ হয় প্রায় ১১৩ কোটি টাকা। ওই অর্থবছরে পুঁজিবাজারে টাকা সাদা করেছেন কেবল ৫১ জন। এ খাত থেকে কর আহরণ হয়েছে ৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আর ৯ জন উদ্যোক্তা নতুন শিল্প স্থাপনে সাড়া দেন। এর বিপরীতে কর পরিশোধ করেন ৯ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে রেকর্ড প্রায় ২০ হাজার ৬৫০ কোটি অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বৈধ বা সাদা করা হয়। এর মধ্যে নগদ টাকাই সাদা করা হয়েছিল ১৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। বাকি অর্থ বিনিয়োগ হয় জমি/ফ্ল্যাট কেনা এবং পুঁজিবাজারে। ১১ হাজার ৮৫৯ জন করদাতা এ পরিমাণ কালো টাকা সাদা করেছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও ব্যবসায়ীসহ নানা পেশাজীবী করদাতা। দেশের ইতিহাসে স্বাধীনতাত্তোর কোনো এক অর্থবছরে যা ছিল সর্বোচ্চ পরিমাণ।
এর আগে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুই বছরে ৯ হাজার ৬৮২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা সাদা করা হয়েছিল এবং করদাতার সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ৫৫৮ জন।
বর্তমান সরকারের টানা তিন মেয়াদে একাধিকবার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়। তবে ২০২০-২১ অর্থবছরে বাদে অন্য কোনোবারই এতে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, করোনা মহামারির কারণে বিদেশে টাকা পাচারের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ায় ওই অর্থবছরে দেশে এতো বেশি কালো টাকা সাদা হয়েছে।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ