দেশে খোলাবাজারে সোমবার (৮ আগস্ট) রেকর্ড দামে বিক্রি হয়েছে ডলার। সরবরাহ কম থাকায় আন্তঃব্যাংক বাজারেও বাড়ছে ডলারের দাম।
সোমবার প্রতি ডলারের দাম ১১৩ টাকা থেকে ১১৫ টাকা ৫০ পয়সায় ওঠে। এদিন আন্তঃব্যাংকে ডলারের বিনিময়মূল্য ৯৪ টাকা।
রাজধানীর মতিঝিল এলাকার কার্ব মার্কেটে সরেজমিনে গিয়ে এ তথ্য জানা গেছে।
মতিঝিলের খুচরা ডলার ব্যবসায়ী বেলাল জানান, খোলা বাজারে ডলারের চাহিদা বেশি, সরবরাহ কম। তীব্র সংকট চলছে। সে কারণেই দর বেড়েছে। আজকে নগদ ডলার বিক্রি করছি ১১৫ টাকা থেকে ১১৫ টাকা ৫০ পয়সা। কিনছি ১১৩ টাকা থেকে ১১৪ টাকায়। একই কথা জানালেন আরেক ব্যবসায়ী বাচ্চু মিয়া।
পাইনিওর এক্সচেঞ্জ হাউজে ডলারের দাম জানতে চাইলে দায়িত্বরত কর্মী জানান, আজ সর্বোচ্চ ১১৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে এখন ডলার নেই। চাইলে অন্য হাউজ থেকে এনে দিতে হবে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতেও ১০৭ থেকে ১০৮ টাকা পর্যন্ত মূল্যে নগদ ডলার বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে নতুন অর্থবছরে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইতোমধ্যে অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১১৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়েছে।
রিজার্ভ থেকে ধারাবাহিক ডলার বিক্রির কারণে ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত। রোববার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৯ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার।
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করেছে ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা দরে। নিয়ম অনুযায়ী এটাই ডলারের আনুষ্ঠানিক দর। এ বছরের মে মাসের শুরুর দিকে এ দর ছিল ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যাংকগুলোতে এখন আমদানির জন্য ১০০ টাকার নিচে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০৭ থেকে ১০৯ টাকায় ডলার কিনে আমদানি দায় মেটাতে হচ্ছে। রেমিট্যান্সের জন্যও ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা দরে ডলার কিনতে হচ্ছে।
দেশে খোলা বাজারে প্রথমবারের মতো ডলার ১০০ টাকার ঘর পেরিয়ে যায় গত ১৭ মে। এরপর আবার কমে আসে। পরে গত ১৭ জুলাই ফের ১০০ টাকা অতিক্রম করে। গত ২৬ জুলাই খোলা বাজারে ডলারের দাম রেকর্ড ১১২ টাকায় পৌঁছেছিল। রোববার (৭ আগস্ট) ১ ডলার বিক্রি হয়েছিল ১১০ থেকে ১১১ টাকায়।
এদিকে সংশ্লিষ্টরা জানান, খোলাবাজার থেকে যে কেউ ডলার কিনতে পারেন। ব্যাংক থেকে কিনতে পাসপোর্ট এনডোর্সমেন্ট করতে হয়। যে কারণে অনেকে এখন খোলাবাজার থেকে ডলার কিনে শেয়ারবাজারের মতো বিনিয়োগ করছেন, যা অবৈধ।
ডলারের কারসাজি রোধে খোলা বাজার ও এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোতে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত সপ্তাহ পর্যন্ত কারসাজির অপরাধে পাঁচ মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি ৪২টিকে শোকজ করা হয়েছে। এছাড়া লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করায় ৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলা হয়েছে।
মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, এখন ডলার বিক্রি আর আগের মতো নেই, তবে ডলার সংকট আগের মতোই রয়েছে। অভিযান শুরুর পর থেকে মানুষের মধ্যে একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। এখন চাইলেও যে কেউ এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো থেকে ডলার নিতে পারছে না। এখন অবশ্যই পাসপোর্ট দেখাতে হবে।
নয়াশতাব্দী/জেডআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ