ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

করোনায় রেকর্ড বাণিজ্য ঘাটতি

প্রকাশনার সময়: ০৩ আগস্ট ২০২১, ২১:১৯

করোনাকালে বেড়েছে আমদানি ব্যয়। তবে সে অনুযায়ী রফতানি করতে পারেনি দেশ। যার প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক বাণিজ্যে। বেড়েছে ঘাটতির পরিমাণ। ২০২০-২১ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) শেষে প্রায় দুই হাজার ২৮০ কোটি ডলার বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। দেশীয় মুদ্রায় ঘাটতির পরিমাণ প্রায় এক লাখ ৯৩ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। বাণিজ্য ঘাটতির এ পরিমাণ ইতিহাসে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-জুন বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) ওপর করা হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের ইপিজেডসহ রফতানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে তিন হাজার ৭৮৮ কোটি ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে ৬ হাজার ৬৮ কোটি ডলার। এ হিসাবে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৮০ কোটি লাখ (২২.৮০ বিলিয়ন) ডলার। ঘাটতি পরিমাণ ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে ২৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি।

এ সময়ে পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ আগের বছরের তুলনায় ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি আয় করেছে। বিপরীতে পণ্য আমদানির ব্যয় আগের বছরের চেয়ে ১৯ দশমিক ৭১ শতাংশ বেড়েছে। এ সময় দেশের প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহও চাঙা ছিল। গেল অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩৬ দশমিক ১১ শতাংশ।

বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাণ করা হয়। করোনাকালীন মানুষ ভ্রমণ কম করেছে।

তবে আমদানি-রফতানি বেশি হওয়া বিমার খরচও বেড়েছে। ফলে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতিও বেড়েছে। গেল অর্থবছরের এ খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩০০ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরের এই ঘাটতি ছিল ২৫৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

মহামারির মধ্যেও প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) পরিমাণ বেড়েছে। গেল অর্থবছরে ৩৫০ কোটি ১০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছে বাংলাদেশ। তার আগের অর্থবছরে যা ছিল ৩২৩ কোটি ১০ লাখ ডলার।

বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকে নিট এফডিআই বলা হয়। আলোচিত সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগও আগের বছরের চেয়ে ৩৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১৭৭ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে যা ছিল ১২৭ কোটি ডলার।

করোনায় বৈশ্বিক অর্থনীতির নাজুক পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স) টান পড়েছে। চলতি হিসাবে ঘাটতির অর্থ হলো সরকারকে ঋণ নিয়ে চলতি লেনদেনের দায় পরিশোধ করতে হচ্ছে।

গত অর্থবছরে প্রথম ৯ মাস অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এ সূচক উদ্বৃত্ত ছিল। কিন্তু এপ্রিল থেকে ঘাটতি (ঋণাত্মক) দেখা দেয়। অর্থবছর শেষে চলতি হিসাবে ৩৮০ কোটি ডলার ঘাটতি রয়েছে।

এদিকে, সার্বিক রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার কারণে ওভারঅল ব্যালেন্স ৯২৭ কোটি ডলারের বেশি উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩১৭ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে দুই হাজার ৪৭৮ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। তার আগের বছর এ পরিমাণ ছিল ১৮২০ কোটি ডলার।

দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) ঋণাত্মক অবস্থায় অর্থবছর শেষ হয়েছে। গেল অর্থবছরে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (নিট) যা এসেছিল তার থেকে প্রায় ২৭ কোটি ডলার চলে গেছে। তার আগের অর্থবছরের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ