ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ডলারের দাম ফের ১০০ টাকা ছাড়াল

প্রকাশনার সময়: ১৭ জুলাই ২০২২, ২২:১৪

খোলাবাজারে ডলারের দর আবার ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। রোববার (১৭ জুলাই) দুপুরে এক ডলার কিনতে ১০০ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১০০ টাকা ৩০ পয়সা লেগেছে।

তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। তবে কার্ব মার্কেটের ব্যবসায়ীরা প্রতি ডলার কিনেছেন ৯৯ টাকা দরে। এছাড়া বর্তমানে ব্যাংকে নগদ ডলার সর্বোচ্চ ৯৮ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, খোলাবাজারে ডলারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সে কারণেই ডলারের দাম ফের ১০০ টাকার ওপরে উঠেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা ডলার পাচ্ছি না। আজ আমি এক ডলারও কিনতে পারিনি। আগে কিছু ডলার কেনা ছিল, সেগুলোই বিক্রি করেছি আজ।

এর আগে গত ১৭ মে খোলাবাজারে ১০০ টাকা ছাড়িয়েছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দর। ১০৪ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল।

গত বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) প্রতি ডলারের আন্ত ব্যাংক বিনিময়মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৩ টাকা ৯৫ পয়সা, আগে যা ছিল ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা। এটি চলতি বছরে টাকার ১৯তম অবমূল্যায়ন। বৃহস্পতিবার আমদানির জন্য গ্রাহকের কাছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ডলার বিক্রি করছে ৯৪ টাকা করে, যা এক সপ্তাহ ধরে ৯৩ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি করেছিল।

বৃহস্পতিবার রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে ১৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতি ডলারের দাম ধরা হয় ৯৩ টাকা ৯৫ পয়সা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত দেড় মাসের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৫ শতাংশের বেশি। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ।

ডলারের বাড়তি দামের কারণে আমদানি ব্যয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। বাড়ছে মূল্যস্ফীতিও। এমন পরিস্থিতিতে বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ডলার সাশ্রয়ের পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা।

এদিকে গত অর্থবছরের জুলাই থেকে মে মাসের মধ্যে আমদানি ব্যয় ৩৯ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৭৫.৪০ বিলিয়ন ডলার। সেই তুলনায় রপ্তানি আয় ৩৩ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪৪.৫৮ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে গত অর্থবছরে (২০২১-২২) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী সোয়া কোটির মতো প্রবাসী দুই হাজার ১০৩ কোটি ১৬ লাখ (২১.০৩ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। এই অঙ্ক আগের বছরের চেয়ে ১৫.১২ শতাংশ কম। রিজার্ভের পরিমাণ কমে আসার পেছনে সবচেয়ে বড় দায় রেমিট্যান্সের। মূলত বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আসার প্রধান দুটি দেশ সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া। গত অর্থবছরে এ দুটি দেশ থেকে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এতে চাপ পড়েছে রিজার্ভে। টাকার মান আরেক দফা অবমূল্যায়নের কারণে আমদানি ব্যয় আরও বাড়বে, আর লাভবান হবেন রপ্তানিকারকরা। সাধারণত রপ্তানিকারকদের সুবিধা দিতেই স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা হয়।

আন্তর্জাতিক মুদ্রাবিনিময়ে ডলারের দাম বেড়ে দুই দশকে সর্বোচ্চ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ট্রেজারি ইল্ড (যে সুদের হারে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিভিন্ন মেয়াদে অর্থ ঋণ করে) বাড়ার পাশাপাশি চীনের লকডাউনে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ইউরোর দাম ডলারের সমান হয়ে গেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার বাড়ার যে গতি তা অন্যদের চেয়ে বেশি। যেমন- ব্যাংক অব ইংল্যান্ড ও ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চেয়েও দ্রুতগতিতে সুদের হার বাড়াচ্ছে ফেড। সুদের হার বাড়ায় ডলার ঊর্ধ্বমুখী থাকবে।

দ্য ইউএস ডলার ইনডেক্স অনুযায়ী, ২০ বছরের মধ্যে ডলারের মান এখন সবচেয়ে বেশি।

নয়াশতাব্দী/জেডআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ