ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শুধুই ঘোষণা, কমেনি দাম

প্রকাশনার সময়: ০৯ জুলাই ২০২২, ১২:৪৯

আগামীকাল মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তর উৎসব ঈদুল আজহা। এই ঈদে গোশতের কদর সবসময়ই একটু আলাদা। গোশত খাওয়ার উপযোগী করতে তেলের বিকল্প নেই। সেই তেল এখন আকাশছোঁয়া। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাতে দাম বাড়ানো হয় পণ্যটির। অথচ ১২ দিন হলেও কমেনি সয়াবিন তেলের দাম। ঘোষণায়ই আটকে আছে সয়াবিন তেলের দাম। ক্রেতারা বলছেন, একবার কোনো কিছুর দাম বাড়লে সেটা আর ব্যবসায়ীরা কমাতে চান না।

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে ২৭ শতাংশের বেশি দাম কমার পর দেশের বাজারে ৩ শতাংশেরও কম কমায়। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা ছিল। তবে ৬ টাকা কমানোর যে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, তারও বাস্তবায়ন হয়নি। সরকার সিদ্ধান্ত জানানোর ১২ দিন পরও ভোক্তাদের এখনো আগের দাম ২০৫ টাকা লিটার দরেই তেল কিনতে হচ্ছে। অথচ এর আগে যখন তেলের দাম বাড়ানো হয়, তখন দেখা গেছে সরকারের ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তি দাম রাখা শুরু হয়ে যায়। খুচরা পর্যায় থেকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন দামের তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই পুরোনো তেল বিক্রি করা ছাড়া বিকল্প নেই। আবার পাইকারি পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম নির্ধারণের পর নতুন দামের তেল আসতে তিন-চার দিন সময় লেগেছে। তাই খুচরা পর্যায়ে যেতে সময় লাগবে।

বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষের সঙ্গে বৈঠক করে ২৬ জুন ভোজ্যতেলের নতুন দাম কার্যকরের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনারি অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। বলা হয়, পরদিন থেকে নতুন দামে তেল বিক্রি হবে। সেদিন এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৬ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় ১৯৯ টাকা। খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে কমিয়ে আনা হয় ৫ টাকা। অর্থাৎ লিটারপ্রতি নতুন দাম নির্ধারণ হয় ১৮০ টাকা। আর পাঁচ লিটারের বোতলের দাম নির্ধারণ করা হয় ৯৮০ টাকা, যা আগের চেয়ে দাম কম ১৭ টাকা।

তবে পাম অলিন তেলের দাম বেঁধে দেয়া হয়নি। অর্থাৎ আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে পাম অলিন। কিন্তু এই ঘোষণা কার্যকর করা যায়নি। আর এ নিয়ে সরকারি সংস্থার কোনো তৎপরতাই চোখে পড়েনি।

বাড্ডা বাজারের খুচরা বিক্রেতা মামুন মিয়া বলেন, নতুন দামের তেল এখনো সরবরাহ করা হয়নি। কোম্পানির প্রতিনিধি তেল দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। পুরোনো তেলই বিক্রি করতে হচ্ছে। ক্রেতারা নতুন দামের তেল চাচ্ছেন, কিন্ত দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

রামপুরা মুদি ব্যবসায়ী জাহিদ হোসেন বলেন, ‘দাম বাড়লে সেই তেল দ্রুতই বাজারে চলে আসে। কিন্তু কমলে কোম্পানির লোকের দেখা যায় না। পুরোনো দামের তেল শেষ হলে তারপর নতুন দামের তেল দেয়া হবে।’

বাড্ডা বাজারে তেল কিনতে আসা সিদ্দিক হোসেন বলেন, ‘তেলের দাম কমেছে শুনেছি। কিন্তু বাজারে সেটার প্রভাব পেলাম না। দুই লিটার তেল ৪১০ টাকায় কিনতে হলো।’ একই দোকানে তেল কিনতে আসা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়। কিন্তু কমানো হলে সেটা আর দিতে চায় না।’ ব্যবসায়ী তসলিম উদ্দিন বলেন, ‘নতুন তেল আসতে শুরু করেছে। কিন্ত পর্যাপ্ত তেলের সরবরাহ এখনো দেয়া হয়নি। বাজার মনিটরিং না করা হলে দাম কার্যকর করা কঠিন।’ হাতিরপুল বাজারে দুই-একটি দোকানে নতুন দামের তেল এসেছে। ব্যবসায়ী রফিক জানান, পুরোনো তেল থাকায় নতুন দামের তেল নেয়া হচ্ছে না।

পাইকারি বাজারে নতুন দামের তেল পর্যাপ্ত। মৌলভীবাজার এবং কারওয়ান বাজারে তেলের ঘাটতি নেই। কারওয়ান বাজারের ডিলার বিপ্লব কুমার সাহা বলেন, দাম নির্ধারণের তিন-চার দিন পর নতুন দামের থেকে তেল সরবরাহ শুরু করেন মিলমালিকরা। পাইকারি বাজারে এখন তেলের সরবরাহে ঘাটতি নেই। চাহিদামতো তেল এখন পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. গোলাম মাওলা বলেন, বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম নিম্নমুখী। সেই প্রভাব পড়েছে স্থানীয় বাজারে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্ত পাইকারি বাজারে তেলের দাম আরো কম।

মৌলভীবাজারে প্রতি মণ খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৫৯৫ টাকা। আর সুপার পাম তেল বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৬ হাজার ১১০ টাকা এবং পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৪৯০ টাকা।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ