পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলায় আমদানি-রফতানি বাণিজ্য গতি পেয়েছে। আশপাশে গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্পকারখানা। এতে চাপ বাড়বে বন্দরের ওপর। আগে যেখানে বছরে আগে ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হতো। এখন সেখানে রাজস্ব আয় চারগুণ বেড়ে ২০ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। ঘটবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। মোংলা বন্দর থেকে পণ্যবোঝাই ট্রাক সাড়ে তিন ঘণ্টায় পৌঁছে যাবে রাজধানী ঢাকায়। এছাড়াও অতি দ্রুত সময়েও পৌঁছে যাবে দেশের যে কোনো স্থানে। একদিকে যেমন পণ্য পরিবহন ব্যয় কমবে, অন্যদিকে বাজারে পণ্যের মূল্যও কমে যাবে। এতে বিকাশ ঘটবে শিল্পায়নের ও সহজ হবে জীবন মানের। প্রসার ঘটবে ব্যবসা-বাণিজ্যের। ফলে দেশের অর্থনীতিতে বইতে শুরু করেছে দক্ষিণের সুবাতাস।
সংশ্লিষ্টরা বলছে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এখন রাজধানীর সঙ্গে মোংলা বন্দরের দ্রুত অনেক কমে গেছে। ঢাকা কিংবা চট্টগ্রাম যেতে ১০ থেকে ১৪ ঘন্টা সময় কম লাগছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি এখন বদলে যাবে।
মোংলা বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীরা জানান, পদ্মা সেতু ব্যবসা ও বাণিজ্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে আরো বেশি সহায়ক হবে। বিশেষ করে দেশ থেকে এই বন্দর দিয়ে রফতানি আয় বাড়বে তিন থেকে চারগুণ। পাশাপাশি কনটেইনার ভাড়া কমে যাবে। এরইমধ্যে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরাও মোংলা বন্দর ব্যবহারের কথা বলছে। আগে বন্দর থেকে এক ট্রাক পণ্য ঢাকায় পৌঁছতে সময় লাগত ১২-১৪ ঘণ্টা, কখনো ৪-৫ দিন পর্যন্ত। এবার আর সেই ভোগান্তি থাকবে না। পদ্মা সেতুর কারণে অতি দ্রুতই সময়েই দেশের যে কোনো স্থানে পৌঁছে যাবে পণ্য।
জানতে চাইলে মোংলা বন্দর ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়াডিং অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক কবির আহম্মেদ নয়া শতাব্দীকে বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু মোংলা বন্দরের ব্যবসায়ীদের জন্য একটি আশীর্বাদ। এ বন্দর ব্যবহার করে আমাদের ৪ শতাধিক ব্যবসায়ী, যারা আমদানি-রফতানির সঙ্গে জড়িত। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় মোংলা বন্দরে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে প্রায় চারগুণ। আগে বন্দরে রাজস্ব আয় ছিল ৫ হাজার কোটি টাকা।
তিনি বলেন, আগে মোংলা বন্দর থেকে ঢাকায় আমাদের পণ্য পৌঁছতে সময় লাগত কমপক্ষে ১০ থেকে ১৪ ঘণ্টা। এখন লাগছে সাড়ে ৩ ঘণ্টা। আর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকায় আসতে সময় লাগবে ৫-৬ ঘণ্টা। সময়ের পাশাপাশি আর্থিকভাবেও লাভবান হবেন ব্যবসায়ীরা। যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধার কারণে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা মোংলা বন্দর ব্যবহারের আরো বেশি আগ্রহী হবে। বন্দরে আমদানি ও রফতানিকারকের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। ফলে মোংলা বন্দরে বছরে রাজস্ব ২০ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াবে আশা করি।
বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইম্পোর্টার অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের মোংলা বন্দর বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি আহসান আরজু বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় বন্দর থেকে মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকায় পৌঁছানো যাবে। সেতু কারণে ব্যবসায়ীদের শুধু জ্বালানি তেল বাবদ বছরে আনুমানিক প্রায় ১২ কোটি টাকা সেভ হবে। বারভিটার প্রায় ৩০০ সদস্য মোংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি করেন। কম সময়ে গাড়ি খালাস ও রাখার পর্যাপ্ত জায়গা থাকায় ব্যবসায়ীরা এই বন্দর দিয়ে আমদানি করতে বেশি পছন্দ করেন। পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানিতে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বেড়েছে কয়েকগুণ।
জানতে চাইলে মোংলা বন্দর ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়াডিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. সুলতান হোসেন খান নয়া শতাব্দীকে বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এ অঞ্চলের শিল্প-কলকারখানা প্রসারিত হবে।
বিভিন্ন পণ্যের বাজার আরো বিস্তৃতি লাভ করবে। আমদানি-রফতানি বৃদ্ধি পাবে বহুগুণ। বর্তমানে মোংলা কাস্টমস হাউস থেকে সরকার প্রতি বছর সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে থাকে। তবে পদ্মা সেতুর কারণে এই আয় চারগুণ বৃদ্ধি পাবে। পদ্মা সেতুর কারণে বছরে প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা সরকার রাজস্ব আয় বেড়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছি।
তিনি বলেন, মোংলা বন্দর থেকে পণ্যের পরিবহন ব্যয়ও কমবে। আগে রাজধানী ঢাকায় ট্রাক বা কাভার্ডভ্যান ভাড়া বাবদ ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা ছিল। পদ্মা সেতুর ফলে খরচ কমবে প্রায় ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ এবং কম সময় লাগার কারণে দেশে দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ মোংলা বন্দর ব্যবহারে আমদানি ও রফতানিকারকরা উৎসাহিত হবেন। বন্দরে আমদানি-রফতানির সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংখ্যাও বাড়বে।
মোংলা কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার মাহফুজুর রহমান নয়া শতাব্দীকে বলেন, পদ্মা সেতু কেবল চালু হয়েছে। তাই এখনই বলা যাচ্ছে না ভবিষ্যতে কেমন প্রভাব পড়বে। তবে আমদানি-রফতানি বৃদ্ধি পাবে। এরই মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বলছে বন্দর দিয়ে তারা আমদানি-রফতানি করবে। মাকর্স লাইন জাহাজ বাড়ানোর কথাও শুনছি। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো কিছু না দেখে কিছুই বলা যাবে না।
তিনি বলেন, বন্দরের চেয়ারম্যান স্যারও আশাবাদী মোংলায় আমদানি-রফতানি অনেকগুণ বাড়বে। আগামী এক দুই মাস পরে বোঝা যাবে। জুলাই মাস গেলে বুঝতে পারব কতটা প্রভাব পড়বে। আগের মাসগুলোর রাজস্ব আয়ের সঙ্গে পার্থক্য করে ধারণা পাওয়া যাবে। যতই সময় যাবে ততই বুঝতে পারব কতটা প্রভাব পড়তে যাচ্ছে। কিছুটা চেঞ্জ হবে।
নতুন জায়গা, নতুন ব্যবসায়ীরা এলে তাদেরও মানিয়ে নিতে সময় লাগবে। তবে আমরা ব্যবসায়ীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুতি আছি। আশা করি, নতুন অর্থবছরে ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের টার্গেট পূরণ করতে পারব।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ