বিশ্ব পুঁজিবাজারে রাতারাতি বড় ধরণের ধস নেমেছে। পুঁজিবাজারের এই ধসের কারণে বিশ্বমন্দার আভাস দিচ্ছে বিশ্লেষকরা। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান পুঁজিবাজারগুলো এরিমধ্যে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের পতনে বাজারগুলো পতনশীল বাজারের অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। একই অবস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও।
যুক্তরাষ্ট্রে ৪০ বছরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মার্কিন কেন্দ্রীয় রিজার্ভ ব্যাংক সুদের হার বাড়াতে পারে। এই আশঙ্কাই বাজারের সাম্প্রতিক এই পতনের মুখ্য কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মঙ্গলবার জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচকের ১.৮২ শতাংশ পতন হয়েছে। জাপানের বহুজাতিক শিল্পগোষ্ঠী সফটব্যাংকের শেয়ারের দর ৩ শতাংশ কমে যাওয়ার বড় প্রভাব পড়েছে নিক্কেই ২২৫ সচকে। এদিকে, টোকিও পুঁজিবাজারের সূচক টোপিক্স ইন্ডেক্সের পতন হয়েছে ৩ শতাংশ।
এশিয়ার অন্যতম শীর্ষ বাজার হংকং-এর হ্যাং সেং সূচক কমেছে দশমিক ৯১ শতাংশ। চীনের বৃহৎ গ্রুপ আলিবাবার হংকং-এর তালিকাভুক্ত শেয়ারগুলো দর হারিয়েছে ৪.১৯ শতাংশ। সাংহাই পুঁজিবাজারের সাংহাই কম্পোজিট সূচক কমেছে ১.৬ শতাংশ। বড় পতন হয়েছে শেনজেন কম্পোনেন্ট সূচকেও। অন্যতম এ সূচক কমেছে ২.৭২২ শতাংশ। এর ফলে চীনের বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দর হ্রাস পেয়েছে।
এই অঞ্চলে সবচেয়ে সূচনীয় পতন হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার পুঁজিবাজারে। এসঅ্যান্ডপি/এএসএক্স ২০০ সূচক সোমবার একদিন ছুটির পর মঙ্গলবারে ৪.৩৬ শতাংশ পতন হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার বেঞ্চমার্ক কেওএসপিআই মঙ্গলবার বাজার খোলার সময় আগের দিনের তুলনায় ১.৩৬ শতাংশ কম ছিল। এর আগের দিন সোমবার সূচকে ৩.৫ শতাংশ পতন হয়েছিল।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিটেও রাতারাতি বড় পতন হয়েছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক কমেছে ৪ শতাংশ কমে ৩৭৪৯.৬৩ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ওয়াল স্ট্রিট পতনশীল বাজার হিসেবে সোমবার বন্ধ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অন্যান্য বড় সূচকেও ধাক্কা লেগেছে। শিল্পনির্ভর শেয়ারের সূচক ডাও জোন্স ৮৭৬.০৫ পয়েন্ট বা ২.৭৯ শতাংশ কমে ৩০৫১৬,৭৪ পয়েন্টে নেমেছে। প্রযুক্তিনির্ভর শেয়ারের সূচক নাসদাক কম্পোজিট সূচক কমেছে ৪.৬৮ শতাংশ।
তবে সিএনবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী মঙ্গলবার মিশ্র অবস্থায় খুলেছে ইউরোপের পুঁজিবাজার। যুক্তরাজ্যের এফটিএসই সূচক মঙ্গলবার আগের দিনের তুলনায় ২৩ পয়েন্ট বেশি নিয়ে খুলেছে। জার্মানির ডিএএক্স সূচকে বৃদ্ধি ৪৪ পয়েন্ট এবং ফ্রান্সের সিএসি বেড়েছে ৭ পয়েন্ট। অন্যদিকে, ইতালির এফটিএসই এমআইবি সূচক ৯ পয়েন্ট কমেছে।
গত শুক্রবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব লেবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সেদেশের বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ৮.৬ শতাংশ যা ১৯৮১ সালের ডিসেম্বরের পর যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় বার্ষিক উল্লম্ফন। যুক্তরাষ্ট্র জ্বালানি গ্যাস থেকে শুরু করে খাদ্য, বাসস্থানের দাম বেড়েছে। ঊর্ধ্বমুখী দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়াতে পারে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
ক্যাপিটাল ইকোনোমিক্সের বাজার অর্থনীতিবিদ অলিভার অ্যালেন পুঁজিবাজারে পতনের কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য আমরা যা ভেবেছিলাম তার থেকেও অনেক বেশি সুদের হার বাড়াতে পারে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা বাজারে বিনিয়োগে সতর্ক। এটি অর্থনৈতিক মন্দার ঝুঁকি তৈরি করেছে।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ