ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

সহজ হবে জনজীবন

প্রকাশনার সময়: ০৮ জুন ২০২২, ১৫:২৭ | আপডেট: ০৮ জুন ২০২২, ১৫:৩৫

দেশের বাজারে সবকিছুর দামই চড়া। বিশেষ করে নিত্যপণ্ল্যের দামে সাধারণ মানুষের হাসফাঁস অবস্থা। সেবা খাতসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি কমানোর চিন্তা থাকলেও তা থেকে সরে এসেছে সরকার। আসন্ন বাজেটে বাড়ছে ভর্তুকি ও প্রণোদনা। নিত্যপণ্যসহ সেবামূলক সব খাতে ভর্তুকি ও প্রণোদনা দিয়ে জনজীবন সহজ করতে চাইছে সরকার।

সদ্য বিদায়ী বাজেট থেকে আসন্ন বাজেটে ১৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ভর্তুকি বাড়ছে। এ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে প্রায় ৮২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা করতে চান অর্থমন্ত্রী, যা বর্তমানে সংশোধিত ৬৬ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা এখন তলানিতে। নিত্যপণ্যের দাম যেন আর না বাড়ে সে দিকে নজর দেয়া। কৃষি দেশের অর্থনীতির স্বস্তির খাত। জিডিপিতে অবদান বছর বছর কমলেও, বৈশ্বিক ঝুঁকি থেকে, এই খাত সুরক্ষা দেয়। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ সংকটে ফেলেছে বিশ্বকে। এমন বেগতিক দশার মধ্যে, সেই কৃষিতে প্রণোদনা বাড়িয়ে, ফেরাতে হচ্ছে নজর। বাংলাদেশও আক্রান্ত বৈদেশিক লেনদেন সংক্রান্ত সূচকগুলোতে। সরকার এ খাতে গুরুত্ব দিচ্ছে প্রণোদনা দিয়ে। তাই যেন প্রতি বছর বাড়ে বরাদ্দ। নতুন বাজেটে এর প্রাক্কলন ১৫ হাজার কোটি টাকা। ভর্তুকির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। আবার কৃষি খাতের ভর্তুকির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সার। বিদ্যুৎ, কৃষি উপকরণ, উন্নত মানের বীজ কেনায়ও কৃষকদের ভর্তুকি দেয়া হয়। বিদ্যুৎ খাতের মধ্যে বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি খাতের মধ্যে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) হচ্ছে অন্যতম। আর প্রণোদনা দেয়া হয় পাট ও পোশাক রফতানি খাত এবং দেশে প্রবাসী আয় আনার ক্ষেত্রে।

ভর্তুকি ব্যবস্থাপনায় নগদ ঋণ নামেও একটি অধ্যায় রয়েছে, যা শেষ বিচারে ভর্তুকিই। এ ঋণ দেয়া হয়ে থাকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি), বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ইত্যাদি সংস্থাকে।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ভর্তুকি ও প্রণোদনা বাবদ বরাদ্দ ছিল ৪৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কৃষি ভর্তুকি ছিল ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় চলতি অর্থবছরে তো বেড়েছেই, আগামী অর্থবছরেও ভর্তুকি বাড়বে। সারের কারণেই চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ভর্তুকি বাড়িয়ে ৬৬ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। মূল বরাদ্দকে বিবেচনায় নিলে আগামী অর্থবছরে ভর্তুকি বাড়ছে ২৪ হাজার কোটি টাকা।

কৃষি ফার্ম শ্রমিক ফেডারেশনের এক সম্মেলনে গত ১৪ মে কৃষিমন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক তার বক্তব্যে জানান, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এবং করোনা মহামারির কারণে পটাশিয়াম সারের দাম প্রতি টন ৩০০ ডলার থেকে বেড়ে ১ হাজার ২০০ ডলার হয়েছে। তাতে সাড়ে ৭ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি বেড়ে এখন ৩০ হাজার কোটি টাকা হবে।

ভর্তুকিতে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বিদ্যুৎ খাত। আগামী অর্থবছরে এ খাতে ভর্তুকি বরাদ্দ থাকছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। বেসরকারি খাত থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে কম দামে বিক্রি করার জন্য পিডিবিকে ঋণও দেয় সরকার। এ ঋণও ভর্তুকি। কারণ, সরকার তা ফেরত পায় না।

ভর্তুকির টাকা সরাসরি জনগণের দেয়া করের টাকা। তাই ভর্তুকি নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পাশাপাশি একশ্রেণির অর্থনীতিবিদেরও সমালোচনা রয়েছে। তবে প্রতিযোগী দেশগুলো ভর্তুকি দিলে, বাংলাদেশ যদি না দেয় তাহলে ক্ষতির শিকার হবে দেশের জনগণ— সরকারের পক্ষ থেকে এমন যুক্তি দেয়া হয়।

এলএনজি আমদানি মূল্য পরিশোধ ও প্রণোদনা প্যাকেজে সুদ ভর্তুকিসহ অন্যান্য ভর্তুকি খাতে রাখা হচ্ছে ১৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। প্রকৃত দামের চেয়ে কম দামে এলএনজি বিক্রি করতে হবে বলে এ ভর্তুকি লাগবে। অর্থ বিভাগ হিসাব করে দেখেছে, যে দামে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে, সেই দামে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের কাছে বিক্রি করলে তাদের পণ্য উৎপাদন খরচ বেশি পড়বে। তাই এ খাতে ভর্তুকি রাখা হচ্ছে।

আগামী অর্থবছরে খাদ্যে ভর্তুকি রাখা হচ্ছে ৬ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি, খোলাবাজারে চাল বিক্রি ইত্যাদি কারণে এ ভর্তুকি রাখা হচ্ছে। ভর্তুকি একটু কমাতে ১০ টাকার চাল ১৫ টাকা করার উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ বিভাগ। রফতানি খাতে প্রণোদনা, প্রবাসী আয় দেশে আনায় প্রণোদনা এবং পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানিতে বরাবরের মতো আগামী অর্থবছরেও বড় আকারের ভর্তুকি থাকছে।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এতে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। তার আগের, অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য সরকার ৬ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে। নতুন এই বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হচ্ছে। এতে মূল্যস্ফীতি ধরা হবে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। বাড়ছে ভর্তুকির পরিমাণও।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশিষ্ট ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান নয়া শতাব্দীকে বলেন, দাম বাড়ানো ঠিক হবে না। কারণ, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা এমনিতেই কমে গেছে। এ বছরটাকে ব্যতিক্রম হিসেবেই দেখতে হবে। কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারের এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি খুব বেশি দিন চলবে না।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ