গ্যাসের পর এবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণাও আসছে। এ সিদ্ধান্ত আসতে পারে আগামী মাসে। শিগগিরই এ নিয়ে পর্যালোচনায় বসবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
দেশের মোট বিদ্যুতের ৫৫ থেকে ৬০ ভাগ গ্যাস দিয়ে উৎপাদন করা হয়। সাধারণত জ্বালানির দাম ১০ ভাগ বাড়লে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হয়। এবার গ্যাসের দাম বেড়েছে ১৩ ভাগের কাছাকাছি। ফলে গ্যাসের সঙ্গে বাড়ছে বিদ্যুতের দামও।
গত ১৮ মে পিডিবির পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ওপর গণশুনানি করে কমিশন। পিডিবির পাইকারি বিদ্যুতের দাম বর্তমানে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ৫ টাকা ১৭ পয়সা। পিডিবি এই দাম ৬৬ ভাগ বাড়িয়ে ৮ টাকা ৫৮ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছিল। তাদের প্রস্তাব মূল্যায়ন করে বিইআরসির কারিগরি কমিটি এই দাম ভর্তুকি দিলে আগের দাম অর্থাৎ ৫ টাকা ১৭ পয়সা এবং ভর্তুকি না দিলে ৮ টাকা ১৬ পয়সা করার সুপারিশ করে। যদিও সরকারের ভর্তুকির ওপর নির্ভর করছে কতটা বিদ্যুতের দাম বাড়বে।
এদিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য নতুন করে আরোপিত হয়েছে ডিমান্ড চার্জ। এতদিন গ্যাসের কোম্পানিগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছ থেকে ডিমান্ড চার্জ চাইলেও তারা বিষয়টিকে পাত্তা দেয় নি। তবে এবারের গ্যাসের শুনানিতে আবারও বিষয়টি তুলে ধরে কোম্পানিগুলো। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধির আদেশে বলা হয়, প্রতি ঘনমিটারে ০ দশমিক ১০ টাকা ডিমান্ড চার্জ পরিশোধ করতে হবে তাদের। এর অর্থ এখন থেকে গৃহস্থালি ছাড়া অন্য সব গ্যাস গ্রাহককে প্রতি ঘনমিটারে ০ দশমিক ১০ টাকা ডিমান্ড চার্জ পরিশোধ করতে হবে।
এর আগে অন্যান্য গ্রাহক শ্রেণি ডিমান্ড চার্জ পরিশোধ করলেও সরকারি বেসরকারি ছোট-বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র ডিমান্ড চার্জ পরিশোধ করতো না।
বিইআরসির সদস্য মোহাম্মদ বজলুর রহমান বলেন, নিয়ম অনুযায়ী শুনানির পরবর্তী তিন মাসের মধ্যেই দাম বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কমিশন পর্যালোচনা করবে। পোস্ট হেয়ারিংয়ের কাগজপত্র জমা পড়েছে। ন্যূনতম বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে কমিশন চেষ্টা করবে। তবে কত বাড়বে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ এটা কমিশনের পর্যালোচনা সভার পর ঠিক করা হবে।
গত ৫ জুন গ্যাসের নতুন দাম ঘোষণার দিন বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নিয়ে বিইআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবু ফারুক বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের দাম বাড়ায় বিদ্যুতের দামও বাড়বে। তবে সেটি কত ভাগ বাড়বে তা এখনও স্পষ্ট হয়নি।
এদিন বিইআরসি জানায়, ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম গড়ে ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। বাসার রান্নায় ব্যবহৃত দুই চুলায় এখন থেকে মাসে ১ হাজার ৮০ টাকা ও এক চুলায় দিতে হবে ৯৯০ টাকা। আর প্রিপেইড মিটার গ্রাহকের প্রতি ইউনিটে (ঘনমিটার) দেবেন ১৮ টাকা, তাদের খরচ বাড়বে ৪৩ শতাংশ। জুন মাস থেকে নতুন এ দাম কার্যকর হবে, যা জুলাইয়ে পরিশোধ করবেন গ্রাহকেরা।
পরিবহন খাতে ভাড়া স্থিতিশীল রাখতে গাড়িতে ব্যবহৃত সিএনজির দাম বাড়ানো হয়নি। তবে সবচেয়ে বেশি প্রায় ২৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে সার কারখানায় ব্যবহৃত গ্যাসের দাম। বৃহৎ শিল্পে বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ।
নতুন ঘোষিত দাম অনুসারে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৯ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে ১১ টাকা ৯০ পয়সা হয়েছে গড়ে। সিএনজির দাম আগের মতো ৩৫ টাকাই থাকছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে প্রতি ইউনিট ৪ টাকা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫ টাকা ২ পয়সা করা হয়েছে। তবে শিল্প উৎপাদিত নিজস্ব বিদ্যুৎ-ক্যাপটিভের গ্যাসের দাম ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা করা হয়েছে। বৃহৎ শিল্পে প্রতি ইউনিটের নতুন দাম ১১ টাকা ৯৮ পয়সা, মাঝারি শিল্পে ১১ টাকা ৭৮ পয়সা এবং ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পে করা হয়েছে ১০ টাকা ৭৮ পয়সা। চা-বাগানে নতুন দাম ১১ টাকা ৯৩ পয়সা, বেড়েছে সাড়ে ১১ শতাংশ। আর সার কারখানায় ৪ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা করা হয়েছে।
হোটেল ও রেস্তোরাঁ খাতে ব্যবহৃত বাণিজ্যিক শ্রেণির গ্রাহকেরা এখন থেকে প্রতি ইউনিটে দেবেন ২৬ টাকা ৬৪ পয়সা, তাদের খরচ বাড়ছে ১৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
এর আগে গত ২ জুন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, সরকার একদিকে ভর্তুকি দিচ্ছে, অন্যদিকে দাম কমানোর চেষ্টা করছে। বিদেশে জ্বালানির দাম বাড়ছে, আমাদের উপায় নেই। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দামের বিষয়টি এখন এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের হাতে। আমি এতটুকু বলতে পারি, প্রধানমন্ত্রী এমন কিছু করবেন না, যাতে তা সাধারণ মানুষের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।
বিইআরসি সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের পাইকারি দর ইউনিট প্রতি ৫.১৭ টাকা নির্ধারণ করে। বিদ্যুতের একক পাইকারি বিক্রেতা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। বিপিডিবি’র পাইকারি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চাহিদা মতো গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে খরচ বেড়ে গেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদ্যুতে গড় উৎপাদন খরচ ছিল ২.১৩ টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.১৬ টাকায়। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, কয়লার মূসক বৃদ্ধির কারণে ২০২২ সালে ইউনিট প্রতি উৎপাদন খরচ দাঁড়াবে ৪.২৪ টাকায়। পাইকারি দাম না বাড়লে ২০২২ সালে ৩০ হাজার ২৫১ কোটি ৮০ লাখ টাকা লোকসান হবে বিপিডিবি’র।
নয়াশতাব্দী/জেডআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ