ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বিশেষ নজর

প্রকাশনার সময়: ২৬ মে ২০২২, ১২:২৪

আমদানি বৃদ্ধিতে বেকায়দায় দেশের অর্থনীতি। রফতানি বৃদ্ধির পর বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি। ফলে ব্যয় সংকোচনের দিকে হাঁটছে সরকার। তাই আমদানি নির্ভরতা কমাতে মরিয়া। এজন্য এবারের বাজেটে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বিশেষ নজর দিচ্ছে। উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে বেশ কিছু পণ্যের স্বনির্ভরতা আশা করা হচ্ছে। সেজন্য কৃষিতে প্রণোদনা ও সারে ভর্তুকির চিন্তা করছে সরকার। পাশাপাশি কর্মসংস্থান ও অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগে আগের থেকে গুরুত্ব বাড়াচ্ছে।

জানা গেছে, আগামী ২০২২-২৩ সালের অর্থবছরের বাজেটে দেশীয় শিল্পকে প্রাধান্য দিয়ে কৃষি খাত যান্ত্রিকীকরণ, কর্মসংস্থান ও অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়ানোকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরবর্তী পরিস্থিতি ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক সরবরাহ সংকটজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতি মোকাবিলা প্রাধান্য পাচ্ছে নতুন বাজেটে। একইসঙ্গে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়ানোর ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। নতুন বাজেটে কৃষি খাতে প্রণোদনা ধরা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে প্রণোদনা বাড়ছে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা।

কৃষিপণ্য উৎপাদনের ৬ খাতে ১০ বছরের কর অবকাশ থাকছেই। চলতি অর্থবছরে শর্তসাপেক্ষে ফল ও শাকসবজি প্রক্রিয়াজাতকরণ, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন, সম্পূর্ণ দেশীয় কৃষি হতে শিশুখাদ্য উৎপাদনকারী শিল্প এবং কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনে নতুন বিনিয়োগে ১০ বছরের করমুক্তি সুবিধা দেয়া হয়েছে। দেশীয় কৃষিভিত্তিক শিল্পে বাংলাদেশে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষিজাত পণ্যের আমদানি বিকল্প তৈরির মাধ্যমে কৃষিভিত্তিক শিল্পের বিকাশ ও কর্মসংস্থান সম্ভব। অর্থনীতি গতিশীল করার পাশাপাশি নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে এমন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন উদ্যোগ সৃষ্টি ও তরুণদের আরো সেখানে অন্তর্ভুক্ত করাই এর উদ্দেশ্য বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

অর্থাৎ আগামী ২০৩০ সালের ৩০ জুনের মধ্যে যারা এ খাতে বিনিয়োগ করবেন, তারা এই আয়কর অব্যাহতির সুবিধা পাবেন বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা বলেছেন। করমুক্তি সুবিধা নিতে ন্যূনতম এক কোটি টাকা বিনিয়োগ এবং বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে বিডার নিবন্ধন নিতে হবে। কাঁচামাল পুরোটাই দেশে উৎপাদিত হতে হবে।

সরকার আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে রাসায়নিক সারের দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কৃষকের স্বার্থ সুরক্ষা ও খাদ্যদ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জনস্বার্থে সরকারের নেয়া ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে সার প্রণোদনা (ভর্তুকি) বাড়িয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। যদিও অর্থবছর শেষে এই বরাদ্দ বাড়াতে হতে পারে বলে মনে করছেন বাজেট সংশ্লিষ্টরা।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই কৃষককে সার ও বীজসহ কৃষি উপকরণে প্রণোদনা দিচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ২০০৮-০৯ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত তথা বিগত ১৩ বছরে শুধু সারেই ভর্তুকি দেয়া হয়েছে প্রায় ৮২ হাজার কোটি টাকা। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ভর্তুকিতে ৭ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল।

চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সরকার সার বাবদ ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভর্তুকি হিসেবে বরাদ্দ রেখেছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় এপ্রিল পর্যন্ত সরকারের প্রকৃত ভর্তুকি প্রায় ১৩ হাজার ৩৩২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। যদিও ভর্তুকি বেড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনৈতিক আন্দোলন এড়ানো এবং নির্বাচনের আগে খামার খাতে কর্মসংস্থান-সংক্রান্ত কোনো অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা যাবে না। তাই সম্প্রতি অর্থ বিভাগের সুপারিশের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে এক বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাজেট পরিকল্পনায় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে করণীয় সবকিছু করা হচ্ছে।

বাজেট নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে কৃষিমন্ত্রী ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক দাবি করেছেন, এ বছর সরকারের সারে ভর্তুকি বাবদ ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। আগামী ২০২২-২৩ সালের বাজেটে কৃষিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে।

সাম্প্রতিককালের আলোচিত বিষয় ভোজ্যতেলে স্বনির্ভর হওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। পুরোপুরি না হলেও আপাতত আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে অন্তত ৫০ শতাংশ দেশীয় উৎস থেকে ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিত করার কথা ভাবা হচ্ছে। এ কারণে আগামী বাজেটে সরিষা চাষ ও রাইস ব্র্যান ওয়েলের কাঁচামাল ধানের তুষ বা কুড়া সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় বিশেষ প্যাকেজের ঘোষণা আসতে পারে বাজেটে। উৎপাদন বাড়াতে গবেষণা, মানসম্মত বীজ সরবরাহ ও উৎপাদনে বিশেষ প্রণোদনা বা ভর্তুকির জন্য বিশেষ বরাদ্দ থাকবে। যাতে উৎপাদন খরচ কমিয়ে খুচরা পর্যায়ে দাম ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে রাখা যায়। পাশাপাশি ভোক্তাদের এসব তেলের ব্যবহার বাড়াতে উৎসাহমূলক প্রচারণারও ব্যবস্থা করা হবে। অর্থাৎ একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকবে আসছে বাজেটে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্র বলছে, আসছে বাজেটে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলো বাস্তবায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার প্রস্তাবনা থাকছে। এর লক্ষ্য, দেশীয় শিল্প সম্প্রসারণ করা।

অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, আসছে বাজেটে কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি আরো বেশি খাদ্য উৎপাদনের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ কারণে কৃষির আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণ, সেচ ও বীজে প্রণোদনা বাড়ানো, কৃষি পুনর্বাসন ও সারে ভর্তুকি অব্যাহত রাখার প্রস্তাবনা থাকছে। এছাড়াও ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরি করতে পল্লী উন্নয়নের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে। বরাবরের মতো এবারের বাজেটেও করের বোঝা না বাড়িয়ে করের আওতায় বাড়ানোর প্রস্তাবনা থাকছে।

সূত্র জানায়, দক্ষ জনবল তৈরির জন্য আসছে বাজেটে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে বরাবরের মতোই সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতায় সম্প্রসারণ করে এই খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে ও স্বল্পমূল্যে খাদ্য বিতরণের আওতা বাড়ানোর প্রস্তাবনা রাখা হচ্ছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে।

অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, আগামী ৯ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২২-২৩ অর্থবছরের এই বাজেট সংসদে উত্থাপন করবেন। এটি অর্থমন্ত্রীর টানা চতুর্থ এবং বাংলাদেশ সরকারের ৫২তম বাজেট। এবার প্রাথমিকভাবে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। সর্বশেষ চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ঘোষিত বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। সে হিসাবে আগামী অর্থবছরে বাজেটের আকার বাড়ছে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ। নতুন প্রস্তাবিত বাজেটে মোট আয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি থাকছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। ঘাটতির পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ৭৪ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা বেশি।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ