ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কাঁচা মরিচের সেঞ্চুরি, তেল মসলা সবজির বাজারও ঊর্ধ্বমুখী

প্রকাশনার সময়: ২০ মে ২০২২, ০৫:৫৫

গেলো রমজানের মাঝামাঝি সময় (১৯ এপ্রিল) থেকে চলতি মাসের ১৯ মে পর্যন্ত এক মাসে বাজারে শুধু ব্রয়লার মুরগি ছাড়া কোনো নিত্যপণ্যের দাম কমেনি। বেড়েছে অধিকাংশ পণ্যের দাম। তবে কিছু নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীলও রয়েছে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বাজারের ৩২ ধরনের খাদ্যপণ্যের দামের ওঠা-নামার হিসাব রাখে। সংস্থাটির গত এক মাসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ সময়ের ব্যবধানে বাজারে ৩২ খাদ্যপণ্যের মধ্যে বেড়েছে ১৯টির দাম। কমেছে শুধু একটি পণ্যের দাম। স্থিতিশীল রয়েছে ১২টির।

টিসিবি বলছে, এক মাসের ব্যবধানে বাজারে মোটা চাল, আটা, ময়দা, সয়াবিন, পাম অয়েল, মসুর ডাল, ছোলা, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, শুকনা মরিচ, হলুদ, আদা, জিরা, তেজপাতা, গুড়া দুধ, চিনি ও ডিমের দাম বেড়েছে। বাজারে শুধুমাত্র কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম, যা গত মাসের থেকে বর্তমানে কেজিতে ৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ মে) রংপুর, নীলফামারীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল এখন ১৯৮ টাকা এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৯৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে খোলা সয়াবিন তেল কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ২০০-২১০ টাকা দরে। খোলা সরিষার তেল গত সপ্তাহের মতোই প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৬০ টাকায়।

নীলফামারীর জলঢাকা মসলাপট্রির ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৯৪ টাকা দিয়ে কিনে ১৯৮ টাকা এবং পাঁচ লিটার বোতল ৯৬৫ টাকায় কিনে ৯৮৫ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। এত টাকা ইনভেস্ট করেও লাভ কম। এর চেয়ে ৩০ টাকা দিয়ে এক কেজি লবণ কিনে ৩৫ টাকায় বিক্রি করাও ভালো।

খোলা সয়াবিনের বিষয়ে জলঢাকার ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এ কারণে কেজিপ্রতি ৫-১০ টাকা লাভে বিক্রি করতে হয়, এর নিচে সম্ভব হয় না।

রংপুর পৌর বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে ১৫৫-১৬০ টাকা বিক্রি হলেও আজ তা ১৬৫-১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খুচরা পর্যায়ে পাকিস্তানি ও দেশি মুরগি আগের মতোই ২৮০-২৯০ এবং ৪৯০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পাকিস্তানি লেয়ার ১০ টাকা বেড়ে ২৭০-২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, গরু ও খাসির মাংসের দামে কোনো সুখবর নেই। গত সপ্তাহের মতো গরুর মাংস ৬৫০-৭০০ টাকা এবং খাসির মাংস ৮৫০-৯০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

জলঢাকা পুুরাতন গরুহাটি পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে কেজিপ্রতি টমেটো পাঁচ টাকা বেড়ে ৩৫-৪০ টাকা, করলা ১৫-২০ টাকা কমে ৩০ টাকা, চিকন বেগুন ৫-১০ টাকা বেড়ে ৫৫-৬০ টাকা, গোল বড় বেগুন ৫৫-৬০ টাকা, শসা আগের মতোই ১৫-২০ টাকা, পেঁপে ২৫ টাকা, লেবু প্রতি হালি ২০-২৫ টাকা, কাঁচামরিচ ২০ টাকা বেড়ে ১২০ টাকা, শুকনা মরিচ ৩৫০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৪০-৪৫ টাকা, কাঁচকলা হালি ২০-২৫ টাকা, ঢেঁড়স ২৫-৩০ টাকা, কচুর লতি ৪০-৪৫ টাকা, বরবটি ২৫-৩০ টাকা, পটল পাঁচ টাকা বেড়ে ৩০-৩৫ টাকা, সজনে ৮০-৯০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া (কেজি) ৩০-৩৫ টাকা, চাল কুমড়া আকারভেদে ৩০-৩৫ টাকা, ঝিংগে গত সপ্তাহের তুলনায় পাঁচ টাকা বেড়ে ২৫-৩০ টাকা, কাঁকরোল ১০ টাকা কমে ৩৫-৪০ টাকা, সব ধরনের শাক ১০ টাকা আটি এবং দেশি পেঁয়াজ ১০ টাকা বেড়ে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আদা ৭০-৮০ টাকা থেকে বেড়ে ৯০-১০০ টাকা, রসুন ৬০-৭০ টাকার জায়গায় ৮০-৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ব্রয়লার মুরগির ডিম হালিপ্রতি ২-৩ টাকা বেড়ে খুচরা বাজারে ৩৮-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ মে) সন্ধ্যায় লালমনিরহাটের পাটগ্রাম বাজারে কেনাকাটা করতে এসেছেন মমিন হাসান মুন তিনি জানান, ব্যবসায়ীরা যতই বুঝ দিক, তাদের সিন্ডিকেট আমাদের কাছে পরিষ্কার। বাজারে জিনিসপত্রের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ানো ব্যবসায়ীদের কারসাজি।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববাজারে এক টাকা বৃদ্ধির খবর পেলে তারা পাঁচ টাকা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এটা কী ধরনের ব্যবসা? পরে বিশ্ববাজারে কমলেও আমাদের এখানে ব্যবসায়ীরা আর দাম কমান না।

লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা বাজারে কথা হয় অধ্যাপক আবদুল্লাহ ইয়ামিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, পণ্যের দাম বেড়ে যখন বাজারে চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তখন হুটহাট কিছু অভিযান চলে। যে পণ্যের দাম বাড়ে, শুধু সেই পণ্যের জন্য দু-চারজন বিক্রেতাকে মাঠপর্যায়ে জরিমানা করে দায়সারা হয়।

এছাড়া রংপুর অঞ্চলে আটা-ময়দার দাম বাড়ায় রুটি, কেক, বিস্কুটের মতো বেকারি পণ্যের দামও অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। আগে চায়ের দোকানে যে রুটি (বনরুটি) ও পিস কেক ৮ টাকা করে বিক্রি হতো, তা এখন ১২ টাকা। আবার ৩০ টাকা দামের ফ্যামেলি রুটি এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহবুব হাসান নয়ন বলেন, কেউ যদি বেশি দামে বা দাম বৃদ্ধি করে বাজারে সংকট তৈরির চেষ্টা করে তবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। নিয়মিত বাজার মনিটরিং এর মাধ্যমে বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি রোধে আমরা তৎপর রয়েছি।

নয়াশতাব্দী/জেডআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ