ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

এবার সোয়া লাখ কোটি টাকার ঈদ বাণিজ্য

প্রকাশনার সময়: ০১ মে ২০২২, ১১:১১

স্বরূপে ফিরছে ঈদবাজার। গত দুই বছরের করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারিতে বন্ধ ছিল। এবার গত দুই বছরের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যস্ততা শেষে মনোযোগ দিয়েছেন শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায়। নগরীর ফুটপাত থেকে শুরু করে মার্কেট, বিপণিবিতান, শপিং মলে ক্রেতার উপচেপড়া ভিড়। ফলে ঈদ সামনে রেখে চাঙা দেশের অর্থনীতি। বেড়েছে ঈদ-অর্থনীতির আকার ও অঙ্ক। টাকার অঙ্কে যা প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকা। এই বিশাল অঙ্কের টাকার সিংহভাগই উড়ছে ঈদবাজারে। ইতিবাচক গতি আনছে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এবারের ঈদ বাণিজ্য থমকেপড়া অর্থনীতিকে ফের গতি ফেরাবে। জানা গেছে, এবার রোজায় অতিরিক্ত এক লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন যোগ হবে। পোশাকের বাজারে যোগ হবে ৬০ হাজার কোটি টাকা। নিত্যপণ্যের বাজারে যোগ হবে ২৮ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা। ধনীদের দেয়া জাকাত ও ফিতরা বাবদ যোগ হবে ৩৮ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা। পরিবহন খাতে অতিরিক্ত যোগ হবে ৬৫০ কোটি টাকা। রোজার ঈদকে কেন্দ্র করে ভ্রমণ ও বিনোদন খাতে যোগ হবে চার হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আয়ের হিসাবে সাড়ে ১২ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, বেসরকারি খাতের ৬০ লাখ দোকান কর্মচারী, তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ৭০ লাখ শ্রমিকের বোনাস ঈদ অর্থনীতিতে যোগ হবে।

দেশে মোট পরিবারের (খানা) সংখ্যা তিন কোটি ৯৩ লাখ ৩০ হাজার। যার মধ্যে গ্রামে বাস করে দুই কোটি ৮২ লাখ ৬০ হাজার পরিবার। শহরে বাস করে এক কোটি ১০ লাখ ৭০ হাজার পরিবার। মূলত রোজার প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয় ঈদের কেনাকাটা। চলে ঈদের এক সপ্তাহ পর পর্যন্ত। এই চার-পাঁচ সপ্তাহ দেশের বেশির ভাগ মানুষ খাওয়া-পরা থেকে শুরু করে শৌখিন কিছু পণ্যও কেনে। সামর্থ্য অনুযায়ী, কিছু না কিছু কেনাকাটা করে সবাই। ঈদ কেনাকাটার শীর্ষে থাকে পোশাক। এর পরই জুতা-স্যান্ডেল, লুঙ্গি-গেঞ্জি-গামছা। খাদ্যপণ্যের মধ্যে সেমাই-চিনি, মাংস, মিষ্টি, গ্রোসারি পণ্য। প্রসাধনী, ইলেকট্রনিকস, টিভি, মোবাইলসহ নানা ধরনের পণ্যও কেনা হয় ঈদ উপলক্ষে। অনেকে আবার সোনার গহনা, ঘরের আসবাব কেনেন বলে ঈদে এসব পণ্যের বিক্রি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেড়ে যায়। এর বাইরে ঈদের ছুটিতে পর্যটন খাতেও মানুষ অর্থ ব্যয় করে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটি পরিবার ন্যূনতম পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা ব্যয় করে ঈদকে ঘিরে। সামর্থ্য অনুযায়ী, এই অঙ্ক আরো বাড়ে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ঈদের কেনাকাটার সঙ্গে যদি রোজার বাজার ধরা হয়, তাহলে লেনদেন এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার কম হবে না। সর্বোচ্চ দুই লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি হতে পারে লেনদেন। আর এবার রাজনৈতিক দলসহ নানা ধরনের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইফতার পার্টির আয়োজন করেছে। এটিও অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক দিক।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, খাদ্যপণ্য, পোশাক, বিনোদন ও পরিবহন খাতে বাড়তি এই অর্থ যোগ হবে। সরকারি চাকরিজীবী, দোকানের কর্মচারী, পোশাক ও বস্ত্র খাতের শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণির শ্রমজীবীদের বোনাসও এই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যোগ হবে। উৎসবকে ঘিরে বিভিন্ন খাতে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতবদল হওয়ায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে তেজিভাব এসেছে এরই মধ্যে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের তথ্য মতে— ঈদে পোশাকসহ পরিধেয় খাতে ৬০ হাজার থেকে ৭০ হাজার কোটি, জুতা-কসমেটিকস তিন হাজার কোটি, ভোগ্য পণ্য সাত হাজার কোটি, জাকাত-ফিতরা ও দান-খয়রাত ৩৮ হাজার কোটি, যাতায়াত বা যোগাযোগ খাতে ১০ হাজার কোটি, সোনা-ডায়মন্ড পাঁচ হাজার কোটি, ভ্রমণ খাতে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি, ইলেকট্রনিকস চার হাজার কোটি, স্থায়ী সম্পদ ক্রয় এক হাজার কোটি, পবিত্র ওমরাহ পালন তিন হাজার কোটি, আইনশৃঙ্খলাসহ অন্যান্য খাতে লেনদেন হয় এক হাজার কোটি টাকা।

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বছরের দুই ঈদ দেশের অর্থনীতিকে চাঙা করে। রোজার ঈদ যেমন জমে ওঠে পোশাক, খাদ্যপণ্য, কসমেটিকস, যাকাত-ফিতরাকে কেন্দ্র করে। তেমনি কোরবানির ঈদ অর্থনীতি জমে পশুর বাজারকে ঘিরে। করোনার কারণে গত দুই বছর ঈদে অর্থনীতি ধুঁকেছে। এবার ঈদ বাজারকে ঘিরে দেশের অর্থনীতি আরো চাঙা ও গতিশীল হচ্ছে।

এর বাইরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সও ঈদ অর্থনীতিতে যুক্ত হবে। কারণ ঈদের সময়ে প্রবাসীরা তাদের আত্মীয়-স্বজনের বাড়তি ব্যয় মেটাতে টাকা পাঠান। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি একচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, ‘রফতানি আয়ে ৩২ থেকে ৩৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার এরই মধ্যে চাঙা হয়েছে। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ কিছুটা সংকটে পড়বে।’

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ