ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মালয়েশিয়া থেকে কমেছে রেমিট্যান্স

প্রকাশনার সময়: ২৪ এপ্রিল ২০২২, ১৩:৪৬

চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে মালেয়শিয়া থেকে রেমিটেন্স আসা কমেছে ৫১ শতাংশের বেশি। তবে একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি ও জার্মানির মতো দেশগুলো থেকে বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রা আসার পরিমাণ। জুলাই-মার্চের মধ্যে সামগ্রিক রেমিট্যান্স প্রবাহ প্রায় কমেছে ১৮ শতাংশ।

মধ্যপ্রাচ্য থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ সবচেয়ে কমেছে, ওমান থেকে রেমিটেন্স কমেছে প্রায় ৪২ শতাংশ। তবে আশার খবরও আছে। সব দেশ থেকে যে রেমিটেন্স কমছে, এমনও নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে হারের এমন অবস্থা জানা যায়।

করোনাকালে প্রবাসী শ্রমিকদের অনেকেই হাতে থাকা জমানো টাকা বৈধ চ্যানেলে দেশে পাঠানোর কারণে গত অর্থবছরে রেমিটেন্স বেড়েছিল। তবে অনেকের চাকরি চলে যাওয়াতে দেশে ফেরত চলে আসতে হয়েছিল। সেইসঙ্গে নতুন শ্রমিকদের বাইরে যাওয়াও প্রায় বন্ধই ছিল। সবকিছু মিলিয়ে প্রভাব পড়েছে রেমিটেন্সের প্রবৃদ্ধিতে।

বর্তমানে শ্রমিকদের বাইরে যাওয়ার হার স্বাভাবিক হয়ে আসলেও তাদের আয় যুক্ত হয়ে রেমিটেন্সে প্রভাব পড়তে আরো কিছুটা সময় লাগবে বলে মত অর্থনীতিবিদদের। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, ইউএই, কুয়েত, কাতার, ওমান ও বাহরাইন থেকে সামগ্রিক আয় কমেছে ২.১৭ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের তুলনায় যেটুকু রেমিটেন্স কমেছে তার ৬৫ শতাংশ কমেছে এই দেশগুলো থেকে।

বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানো দেশগুলোর তালিকায় প্রথম অবস্থানে থাকা সৌদি আরব থেকে চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে দেশটি থেকে রেমিটেন্স এসেছে ৩.৪৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে দেশটি থেকে রেমিটেন্স এসেছিল ৪.৩৬ বিলিয়ন ডলার। শুধুমাত্র এই একটি দেশ থেকেই ঘাটতির পরিমাণ ০.৮৭ বিলিয়ন ডলার।

মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ আরব আমিরাত থেকে আগের অর্থবছরের প্রথম নয় মাসের তুলনায় আয় কমেছে ৩২.৭৬ শতাংশ। আগের অর্থবছরে যেখানে আয় এসেছিল ১.৮৮ বিলিয়ন ডলার, সেখানে একই সময়ে চলতি অর্থবছরে এসেছে ১.২৭ বিলিয়ন ডলার। ওমান থেকে রেমিটেন্স কমেছে ৪১.৭৮ শতাংশ, কুয়েত, বাহরাইন ও কাতার থেকে থেকে যথাক্রমে ১২.৬১, ৩.৫৯ ও ০.২৯ শতাংশ হারে রেমিটেন্স কম এসেছে।

২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে মালয়েশিয়া থেকে রেমিটেন্স এসেছিল ১.৫৬ বিলিয়ন ডলার। তবে চলতি বছরের একই সময়ে রেমিটেন্স এসেছে মাত্র ০.৭৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, আগের অর্থবছরের তুলনায় রেমিটেন্স কমার হার ৫১.৫১ শতাংশ।

সামগ্রিকভাবে রেমিটেন্স কমলেও, কমার হার ৫ শতাংশের নিচে থাকায় তালিকায় পঞ্চম থেকে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে যুক্তরাজ্য। আগের অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত প্রবাসীরা দেশটি থেকে ১.৫২ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছিল। চলতি অর্থবছরে একই সময়ে রেমিটেন্স এসেছে ১.৪৫ বিলিয়ন ডলার।

সিঙ্গাপুর থেকে রেমিটেন্স কমেছে ৩৯.৩৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে যেখানে প্রবাসীরা ০.৪৮ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছিলেন, সেখানে চলতি অর্থবছরের তা ০.২৯ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া থেকে রেমিটেন্সে ৪৬.০৬ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

সব দেশ থেকে আসা রেমিটেন্সে যখন নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি, তখন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি ও জার্মানি থেকে আয় বেড়েছে। রেমিটেন্স পাঠানো দেশের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্র থেকে গত অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ২.৫০ বিলিয়ন ডলার এসেছিল। চলতি অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২.৫২ বিলিয়ন ডলার। দেশটি থেকে আসা আয়ে প্রবৃদ্ধি ০.৮৫ শতাংশ।

ইতালি থেকে গত অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত রেমিটেন্স এসেছিল ০.৬০ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরে গত মাস পর্যন্ত ইউরোপের দেশটি থেকে এসেছে ০.৭৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, আয় বেড়েছে ২৪.৬১ শতাংশ।

রেমিটেন্স পাঠানো দেশের তালিকায় নিচের দিকে থাকা জার্মানি থেকেও আয় কিছুটা বেড়েছে। আগের অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের এই সময়ে রেমিটেন্স বেড়েছে ১৭.৫৩ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইতালির মতো দেশগুলোর অর্থনীতি করোনা পরবর্তী সময়ে ঘুরে দাঁড়ানোর কারণে রেমিটেন্স বেড়েছে বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ডিস্টিংগুইশড ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, এই দেশগুলোতে যারা গেছেন তারা করোনাকালীন সময়ে দেশে ফেরত আসেন নি। তাদের আয় কমলেও দেশে টাকা পাঠানো বন্ধ হয়নি। এসব কারণে দেশগুলো থেকে ইতিবাচক ধারায় রেমিটেন্স আসছে।

মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর থেকে আয় কমা নিয়ে তিনি বলেন, এসব দেশগুলো থেকে অনেক শ্রমিককে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। তারা আর ওসব দেশে ফিরতে পারেননি। এছাড়া নতুনদের যাওয়াও সেভাবে শুরু হয়নি। এ কারণে এই দেশগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য হারে আয় আসা কমেছে।

মধ্যপ্রাচ্য থেকে আয় আবার বাড়বে মন্তব্য করে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, এই অঞ্চলের দেশগুলোতে আবার শ্রমিক যাওয়ার পরিমাণ বেড়েছে। তাই বছরখানেকের মধ্যে সেসব দেশের আয় আবার বেড়ে যাবে।

করোনাকালে হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানো প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। তবে বর্তমানে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসাতে তা আবারো বেড়েছে বলে ধারণা অর্থনীতিবিদদের। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে রেমিটেন্স প্রবাহে। যদিও সরকার অনেক আগে থেকেই রেমিটেন্সে ২.৫ শতাংশ, প্রণোদনা দিচ্ছে, তারপরও অবৈধ পথে টাকা পাঠানো কমছে না।

চলতি অর্থবছর শেষে রেমিটেন্স আয় ২০ থেকে ২১ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলামও মনে করেন রেমিটেন্স প্রবাহ এমন থাকলে বছর শেষে ২০ থেকে ২২ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স আসতে পারে।

তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে আসা রেমিটেন্সের সঙ্গে এ বছরের তুলনা করাটা ঠিক হবে না। চলতি বছরের গত মার্চ মাসেও ফেব্রুয়ারির তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রেমিটেন্স বেড়েছে। সামনে ঈদকে কেন্দ্র করে রেমিটেন্স প্রবাহ আরো বাড়বে বলে আমরা আশাবাদী।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ