ফুটপাতের বেচাকেনার খোঁজ নিতে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে যেতেই কানে ভেসে এলো ‘দেইখ্যা লন দুইশ’, বাইছ্যা লন দুইশ’, একদাম দুইশ’, যেটাই নেবেন দুইশ’। এ রকম শব্দ শুধু এখানেই নয়, পুরো রাজধানীজুড়েই।
বায়তুল মোকররমের সামনে ফুটপাতে গেঞ্জির ব্যবসা করেন আমজাদ হোসেন। এক দাম ৪০ টাকায় বেচাকেনা করছেন তিনি। পাশেই কয়েকটি জুতার দোকানে গিয়ে দেখা যায়, তারাও এক দামেই ব্যবসা করছেন। যার যে জুতা পছন্দ হচ্ছে এক দাম বলে দিচ্ছেন বিক্রেতারা। ক্রেতার পছন্দ ও সাধ্যের মধ্যে হলে প্যাকেট করছেন আর সাধ্যের মধ্যে না হলে অন্য দোকানে ছুটছেন।
এক দামের বিষয়ে ফুটপাতের ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান জানান, প্রতিদিন অনেক ক্রেতার সঙ্গে কথা বলি। রোজা রাইখা বেশি কথা ভালো লাগে না, সীমিত লাভে মাল (পণ্য) ছাইড়া দিচ্ছি। বছর ঘুরে আবারো আসছে ঈদ উৎসব। তাই শপিং মলগুলোর মতো রাজধানীর ফুটপাতের দোকানগুলোতেও জমে উঠেছে কেনাকাটা। এখানে মানভেদে ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকায় প্রতিটি পাঞ্জাবি, ১৬০ টাকায় শিশুদের টি-শার্ট ও ফ্রক এবং ২৬০ টাকায় শার্ট পাওয়া যাচ্ছে। তবে পুলিশ তাড়া করায় স্বস্তি মিলছে না বেচাকেনায়। গার্মেন্টস ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন বোনাস হয়ে গেলে বিক্রি আরো বাড়বে বলে প্রত্যাশা এসব দোকানির।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সব বয়সি নারী-পুরুষের জন্য রং-বেরঙের বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে ফুটপাতে। সারি সারি এসব দোকান থেকে প্রতিনিয়তই পছন্দমতো জামা-কাপড় ও শার্ট কিনছেন নগরবাসী। এখানে শার্ট বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২৬০ টাকায়। এসব শার্ট রাজধানীর বিভন্ন কারখানা থেকে সংগ্রহ করে এখানে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। ফুটপাতে অল্প আয়ের মানুষ সাধ্যের মধ্যে পণ্য কিনতে পেরে যেমন খুশি, তেমনি দোকানিরাও পণ্য বিক্রি করে খুশি। ঈদ উপলক্ষে ফুটপাতের দোকানগুলোতে শিশুদের ফ্রক, টি-শার্ট ছাড়াও বাহারী ডিজাইন ও নানা রঙের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। যেগুলোর দাম ১৬০ থেকে ২শ’ টাকা পর্যন্ত। দাম নিয়ে সন্তোষ জানান ক্রেতারা। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা সাধ্যের মধ্যে পছন্দের পোশাক খুঁজে নেন এই ফুটপাত থেকে। এখানে পাওয়া যাচ্ছে হরেক রকমের পায়জামা পাঞ্জাবি। রমজানের প্রথম দিকে তেমন জমজমাট না থাকলেও এরই মধ্যে জমে উঠেছে ফুটপাতের ব্যবসা।
নামিদামি শপিং মলে কেনাকাটার ইচ্ছা থাকলেও সামর্থ্য না থাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ফুটপাতের দোকানে ছুটছেন নগরীর অনেকই। রমজানের শেষ ১০ দিন বিক্রি আরো বাড়ার প্রত্যাশা দোকানিদের।
এদিকে, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা সাধ্যের মধ্যে সেরাটা খুঁজে নেন এই ফুটপাতের দোকান থেকেই। আর তাতেই পরিবারের চাহিদাও মেটান অনায়াসেই। রমজানের প্রথম দিকে এই ফুটপাতে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা তেমন জমজমাট ছিল না। এরইমধ্যে পাইকারি বাজার হতে পণ্য কেনার পর পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন ফুটপাতে। আর দুই-এক দিন ধরে বেচাকেনা বেশ জমজমাট জানিয়েছেন ফুটপাতের একাধিক ব্যবসায়ী। জাঁমজমকপূর্ণ আলো ঝলমলে মার্কেটে পোশাকের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষদের একমাত্র ভরসা এই ফুটপাত।
নগরীর অনেক মানুষের নামিদামি শপিং মলে কেনাকাটার ইচ্ছা থাকলেও সামর্থ্য না থাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ফুটপাতের দোকানে ছুটছেন। নিজেদের আদরের ছেলেমেয়ে বা প্রিয়জনকে ঈদের পোশাকসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য পণ্য কিনে দেন এই ফুটপাত থেকে। কী নেই এই ফুটপাতে? শার্ট, প্যান্ট, জুতা, সালোয়ার, কামিজ, রং-বেরঙের থ্রি-পিস, গেঞ্জি, পাজামা-পাঞ্জাবি, কসমেটিকস্, টুপি, আতর সবকিছুই রয়েছে ফুটপাতের দোকানে। দামও রয়েছে নাগালের মধ্যেই।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সব বয়সি নারী-পুরুষের জন্য রং-বেরঙের বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে ফুটপাতে। রাজধানীর ফুটপাতের বাজারে প্রতিনিয়তই ক্রেতারা আসছেন, পছন্দমতো জামা-কাপড় কিনছেন। রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় দেখা গেছে, মার্কেটের বাইরে ফুটপাতের জমজমাট বেচাকেনা। নিউমার্কেটের ফুটপাত থেকে আদুরের মেয়ের জন্য গোলফ্রক কিনেছেন শামিম রহমান। ফুটপাতের এই বেচাকেনা সকাল থেকে শুরু হয়ে চলে রাত ১০টা বা তারও একটু বেশি সময় পর্যন্ত।
ফুটপাতের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ঈদের সময় যত কাছে আসবে এই বেচাকেনা মধ্যরাত ছাড়িয়ে যাবে। মার্কেট ভেদে ছেলেদের শার্ট বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায়, জিন্স প্যান্ট ৩৫০ থেকে সাড়ে ৭০০ টাকায়, টি-শার্ট ২৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা, মেয়েদের থ্রি-পিস ৪৫০ টাকা থেকে হাজার/বারশ’ টাকা, শাড়ি ৪৫০ থেকে ২০০০ হাজার টাকা, বাচ্চাদের থ্রি-কোয়ার্টার জিন্স প্যান্ট ৩০০ টাকা, গেঞ্জির সেট ২০০ থেকে ৫০০ টাকা, ফ্রক ও টপস ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা, ছেলে ও মেয়ে শিশুদের জন্য হাতাকাটা গেঞ্জি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা।
মতিঝিল এলাকার শার্ট বিক্রেতা ইসলাম মিয়া জানান, বাণিজ্যিক এলাকা হওয়ায় এখানে সারাক্ষণই ভিড় লেগে থাকে। বিক্রিও ভালো। বিভিন্ন অফিসের বড় কর্মকর্তারা এখান থেকে কেনেন। ঈদ সামনে রেখে বসে নেই মৌসুমি হকাররাও। বিভিন্ন পণ্য নিয়ে ট্রাফিক সিগন্যালে থামা গাড়িগুলোর দিকে একেকজন ছুটছেন। কারো হাতে আতর, কারো হাতে টুপি, কারো হাতে নামাজ শিক্ষার বিভিন্ন ধরনের বই-সামগ্রী।
রাজধানীর মৌচাক মার্কেটের ফুটপাতের ব্যবসার খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখানে জমজমাট কসমেটিক্স পণ্য। পরিবারের প্রয়োজনীয় পণ্যটি আগে ভাগেই কিনে ফেলছেন সবাই। তবে এখানকার ফুটপাতের জামা বা জুতার ব্যবসায়ীরাও বসে নেই। তাদের বিকিকিনিও বেশ ভালো।
নয়া শতাব্দী/এস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ