ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬.৪ শতাংশ : বিশ্বব্যাংক

প্রকাশনার সময়: ১৩ এপ্রিল ২০২২, ২০:৫৯ | আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২২, ২১:০৫

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদ) প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৪ শতাংশ হতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। যা আগামী অর্থবছরে আরও কিছুটা বেড়ে গিয়ে ৬ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। কোভিড-১৯ মহামারি এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এই অর্জন অত্যন্ত শক্তিশালী। তবে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শ্রীলঙ্কার চলমান পরিস্থিতি থেকে তিন বিষয়ে শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন।

বিশ্বব্যাংকের ‘সাউথ এশিয়ান ইকোনমিক ফোকাস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ইকোনমিক আপডেট সম্পর্কে এসব কথা বলা হয়েছে। বুধবার (১৩ এপ্রিল) ভার্চুয়ালি সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় থেকে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে মূল বিষয়বস্তু তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের চিফ ইকোনমিস্ট হ্য্সা টিমার। তিনি বলেন, ‘গত অর্থবছর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৯ শতাংশ হয়েছিল। চলতি অর্থবছর সেটি বাড়বে। আগামী অর্থবছর প্রবৃদ্ধির এ হার আরও বাড়তে পারে। করোনা মহামারি থেকে শক্তিশালী পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে বাংলাদেশ।’

বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ ইকোনমিক আপডেটে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ শক্তিশালী পুনরুদ্ধারে দিকে যাচ্ছে। তবে মূল্যস্ফীতি গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬ দশমিক ২ শতাংশ হয়েছে। খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যেও মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে মূল্যস্ফীতিতে। সেটি আরও বেড়ে যেতে পারে।

বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি মিয়াং টেম্বন বলেন, ‘বাংলাদেশর অর্থনীতি ভালো অবস্থানে রয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ’র ডেবিট সাসটেইনিবিলিট অ্যানালাইসিসে বাংলাদেশের নিম্ন ঋণ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘২০২০ সালে যেভাবে দারিদ্র্য হার বেড়ে গিয়েছিল ২০২১ সালে এসে সেটি কমেছে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাবের দিকে বাংলাদেশকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভুটানের প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছর হয়েছিল মাইনাস ৩ দশমিক ৭ তাংশ। চলতি অর্থবছর সেটি বেড়ে দাঁড়াবে ৪ দশমিক ৪ শতাংশে, যা আগামী অর্থবছর হতে পারে৪ দশমিক ৭ শতাংশ। এছাড়া নেপালের জিডিপি প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছর হয়েছিল ১ দশমিক ৮ শতাংশ, চলতি অর্থবছর হতে পারে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ এবং আগামী অর্থবছর সেটি আরও বেড়ে গিয়ে দাঁড়াতে পারে ৪ দশমিক ১ শতাংশে। পাকিস্তানে গত অর্থবছর প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছর সেটি কমে গিয়ে দাঁড়াতে পারে ৪ দশমিক ৩ শতাংশে এবং আগামী অর্থবছর আরও কমে ৪ শতাংশ হতে পারে।

এদিকে, ভারতে গত অর্থবছর প্রবৃদ্ধি ছিল মাইনাস ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছর বেড়ে হতে পারে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। আগামী অর্থবছর সেটি কমে হতে পারে ৮ শতাংশ (ভারতে অর্থবছর হিসাব করা হয় এপ্রিল-মার্চ)। এছাড়া শ্রীলংকার অর্থবছর হিসাব করা হয় জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। সেই হিসেবে গত অর্থবছর শ্রীলংকার প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। যেটি চলতি অর্থবছর কমে গিয়ে হতে পারে ২ দশমিক ৪ শতাংশ। তবে আগামী অর্থবছর কোনো প্রবৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

বাংলাদেশ সম্পর্কে হ্যান্স টিমার বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা থেকে তিন বিষয়ে শিক্ষা নিতে পারে বাংলাদেশ। প্রথমত, দ্বি-পাক্ষিক বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। বিদেশি ঋণের ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। উৎপাদনশীল খাতে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এছাড়া অনুৎপাদনশীল বিনিয়োগ পরিহার করতে হবে। দ্বিতীয়ত, রিজার্ভ সংরক্ষণে মনোযোগী হতে হবে বাংলাদেশকে। কেননা এখন পর্যন্ত ছয় মাসের ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ আছে। এটি খরচের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। তৃতীয়ত, রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের রাজস্ব আদায় অনেক কম। যেহেতু সরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে সেহেতু রাজস্ব বাড়ানোর বিকল্প নেই।’

বাংলাদেশের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশের রফতানি কমে যেতে পারে। এছাড়া মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। সেটি আরও বেড়ে যেতে পারে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ছে। সেইসঙ্গে জ্বালানি তেলের সংকটও দেখা দিতে পারে। বাইরের চাপের কারণে দেশের বাজারে নিত্যপণ্যেও মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। এজন্য সঠিক নীতি গ্রহণ করতে হবে।

হ্যান্স টিমার আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের রফতানি বাড়ছে। করোনা মহামারি মোকাবিলা করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে অন্যান্য দেশের চেয়ে ভালো করেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ খুব ভালো কাজে লেগেছে। যদিও এই প্যাকেজ সব খাতের উদ্যোক্তারা সমানভাবে সুবিধা নিতে পারেনি।’

নয়া শতাব্দী/এস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ