করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর ঘরে বসেই ঈদ উদযাপন করেছে দেশের মানুষ। দুই বছর পর জমতে শুরু করেছে ঈদ বাজার। মূল্যছাড় এবং আকর্ষণীয় অফারের ছড়াছড়ি বিপণি বিতানগুলোতে। ব্যাংকগুলোর আকর্ষণীয় সব অফারে ডেবিড-ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীদের আনন্দ আরো বাড়িয়েছে। কার্ডে শপিংয়ের বিল পরিশোধ করলেই মিলছে গিফটসহ নগদ মূল্যছাড়। মোবাইল ব্যাংকিং সেবাগুলোও দিচ্ছে নানা ক্যাশব্যাক অফার। ফলে ঈদ কেনাকাটায় আগ্রহের শীর্ষে ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড। এ ছাড়া আগে থেকেই কেনাকাটায় ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের আগ্রহ দেখা গেছে। গত জানুয়ারি মাসে কার্ডে ২৬ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। ঈদ বাজারে আগের সব রেকর্ড ভেঙে যাবে ধারণা করছে সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত জানুয়ারি মাসে ডেভিড এবং ক্রেডিট কার্ডে ২৬ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এ থেকে অনুমান করা যায় দেশে কেনাকাটা বা লেনদেনে নগদ অর্থের পরিবর্তে কার্ডের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। আর কার্ডে কেনাকাটা সহজ ও সুলভমূল্যে পাওয়ার সহযোগিতা করছে ব্যাংকগুলো। এ ছাড়া ঈদে ঘরে ফেরা ও বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে আকাশপথে বিমান ভাড়ায়ও ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে। রমজানের ইফতারেও দেয়া হচ্ছে বিশেষ অফার। জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন ব্যাংক তাদের কার্ডধারীদের জন্য নির্দিষ্ট শোরুম থেকে কেনাকাটায় ১০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ের সুবিধা দিচ্ছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো নতুন গ্রাহক আকর্ষণের পাশাপাশি পুরোনো গ্রাহকদের দিচ্ছে ‘ঈদ উপহার’।
ঈদের অফার সম্পর্কে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের (ইউসিবি) কার্ড ডিভিশনের প্রধান নেহাল এ হুদা বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও ঈদ কেনাকাটা ও ইফতারে বিশেষ অফর পাচ্ছে ইউসিবি কার্ড হোল্ডাররা। ৮০০টির মতো পার্টনার মার্চেন্টে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক অফার রয়েছে। স্বপ্ন, আগোরা, মীনাবাজার, চালডাল ডটকম, ডেইলি শপিংসহ বিভিন্ন সুপারসপে ১০ শতাংশ ক্যাশব্যাক দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি আড়ংয়ে কেনাকাটায় ২৫ শতাংশ, এপেক্সে, আর্টিসান, টাইম জোন, সেইলর লাইফস্টাইলে কেনাকাটা ১৫ শতাংশ নগদ মূল্য ছাড় পাচ্ছেন গ্রাহক। এছাড়া রমজান উপলক্ষে ইফতার ও ডিনারে বাই ওয়ান গেট টু অর্থাৎ একটি পণ্য কিনলে দুটি ফ্রি সুবিধাসহ নগদ মূল্য ছাড় দেয়া হচ্ছে। ওয়েস্টিন, শেরাটন বনানী, রেডিসন ব্লু, লা-মেরিডিয়ান, আমারি ঢাকাসহ নামিদামি সব হোটেলেই এ অফার রয়েছে বলে জানান ইউসিবি এ কর্মকর্তা।
ব্যাংকগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের কেনাকাটায় ক্রেতাদের নগদ মূল্য ছাড়ের পাশাপাশি আকর্ষণীয় সব অফার দেয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
ঈদ ও রমজান উপলক্ষে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য, দেশীয় ফ্যাশন হাউস কিংবা খাবার ক্রয়ে কার্ডহোল্ডাদের আকর্ষণীয় অফার দিচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংক। প্রায় ৪৩৩টি পার্টনার মার্চেন্টের সঙ্গে অংশীদারিত্বে ব্যাংকটির কার্ড হোন্ডাররা এক হাজারেরও বেশি আউটলেটে এই অফার গ্রহণ করতে পারবেন।
৫ তারকাসহ ৬২টি নামিদামি হোটেলে ইফতার ও ডিনারে বাই ওয়ার গেট ওয়ান, টু ও থ্রি অফার। এ ছাড়া স্বনামধন্য ১০৫টি রেস্তোরাঁয় চলছে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য ছাড়। ১১৭টি লাইফস্টাইল পার্টনারে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ছাড় পাচ্ছে ব্যাংকটির কার্ডের গ্রাহক। এছাড়া ৪২টি ট্রাভেল পার্টনারের সঙ্গে চলছে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়। এ ছাড়াও ৮০টির অধিক অনলাইন মার্চেন্টে গ্রাহকরা পাবেন ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং নগদ ক্যাশব্যাক অফারসহ বাড়ি থেকে সহজেই ঈদের বিশেষ কেনাকাটার সুযোগ। ক্যাশব্যাক অফারে ১০ শতাংশ ছাড় পাবেন ব্র্যাক ব্যাংকের গ্রাহক।
লাইফস্টাইল অফারে ১০০টির মত ব্র্যান্ড শপে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ মূল্য ছাড় পাচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের কার্ড হোল্ডাররা। এ ছাড়া আমারি ঢাকা, শেরাটন, প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ হোটেল, রেডিসন ব্লু, লা-মেরিডিয়ানসহ বিভিন্ন হোটেলে রমজান উপলক্ষে ইফতার ও ডিনারে বাই ওয়ান গেট ওয়ান অফার দিয়েছে ব্যাংকটির কার্ড হোল্ডারদের জন্য।
প্রাইম ব্যাংকের ভিসা কার্ড ও মাস্টার কার্ড হোল্ডারদের জন্য কেনাকাটায় বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে। লাইফস্টাইলে কেনাকাটা ১৫ শতাংশ নগদ মূল্য ছাড়। এ ছাড়া রমজান উপলক্ষে ইফতার ও ডিনারে বাই ওয়ান গেট ওয়ান অফার। প্রাইম ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে ফুডপান্ডায় রমজানে অর্ডার করলে দেয়া হচ্ছে ২০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য ছাড়। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফার্নিচার কেনাকাটায় রয়েছে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্যাশব্যাক অফার।
রমজানে লাইফস্টাইল বিউটি ও জুয়েলারি পণ্য কেনাকাটায় বিশেষ অফার দিয়েছে ইস্টার্ন ব্যাংক। ৫০টি বেশি আউটলেটে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় পাচ্ছেন ইবিএল কার্ড হোল্ডাররা।
আড়ংয়ে কেনাকায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাচ্ছেন দি সিটি ব্যাংকের কার্ড হোল্ডাররা। অন্যান্য লাইফস্টাইল কেনাকাটা ১০ থেকে ২৬ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে নগদ মূল্য ছাড়। এ ছাড়া স্বপ্ন, চাল-ডাল, ইউনিমার্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রোসারি পণ্য কেনাকাটায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় পাচ্ছেন ব্যাংকটির কার্ড হোল্ডাররা। এছাড়া রমজানে সিটি ব্যাংক আমেরিকান এক্সপ্রেস কার্ড ব্যবহার করে ইফতার, রাতের খাবার, খুচরা কেনাকাটা, অনলাইন শপিং এবং ভ্রমণে ৭৬ শতাংশ পর্যন্ত আকর্ষণীয় অফার।
ডাচ বাংলা ব্যাংক তাদের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডধারীদের জন্য ফাইভ স্টার হোটেলে রমজান উপলক্ষে ইফতার ও ডিনারে বাই ওয়ান গেট ওয়ান অফার দিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠানে ঈদ কেনাকাটায় রয়েছে ২৫ শতাংশ মূল্য ছাড়। পবিত্র রমজান, বাংলা নববর্ষ ও ঈদ উপলক্ষে গ্রাহকের কেনাকাটা আরো বেশি সাশ্রয়ী করতে গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারো ক্যাশব্যাক অফার নিয়ে এসেছে মোবাইলে আর্থিক সেবাদানকারী (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’। গ্রাহকরা দেশজুড়ে প্রায় ১০ হাজার ব্র্যান্ড আউটলেট, এলাকার ছোট-বড় দোকান, সুপারশপ, রেস্টুরেন্ট, বেকারিসহ দেশসেরা অনলাইন ও ফেসবুক শপে কেনাকাটায় বিকাশ পেমেন্টে পাচ্ছেন ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ইনস্ট্যান্ট ক্যাশব্যাক। আগামী ৩ মে পর্যন্ত গ্রাহকরা বিকাশ অ্যাপ, ইউএসএসডি কোড *২৪৭# কিংবা পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে এ সুবিধা পেতে পারেন। রমজান ও ঈদ উপলক্ষে নির্দিষ্ট মার্চেন্টে, কেনাকাটার পেমেন্ট ‘নগদ’-এ করলে পাচ্ছেন দারুণ ক্যাশব্যাক বা ডিসকাউন্ট। এখন নির্দিষ্ট মার্চেন্ট থেকে যেকোন পছন্দের ফ্যাশন প্রোডাক্ট কিনে নগদ পেমেন্টে পাচ্ছেন ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত ইনস্ট্যান্ট ক্যাশব্যাক। রোজা ও ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে মাস্টারকার্ড নতুনভাবে নিয়ে এসেছে ফ্ল্যাগশিপ ‘রমজান স্পেন্ড-অ্যান্ড-উইন ক্যাম্পেইন’। গত ২০ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ৮ মে পর্যন্ত চলমান এ ক্যাম্পেইনে রয়েছে পবিত্র রমজান মাসজুড়ে মাস্টারকার্ডের ক্রেডিট, ডেবিট এবং প্রিপেইড কার্ড ব্যবহার করে কেনাকাটায় অফার দিয়ে কার্ডহোল্ডারদের আকর্ষণীয় পুরস্কার জেতার সুযোগ। এ বিষয়ে মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, সবাই এই সময়টাতে বিভিন্ন বিলাসি পণ্য ও পোশাক কেনাকাটা এবং ডাইন আউটের মাধ্যমে ছুটি কাটানোর পরিকল্পনা করে। তাই কার্ডহোল্ডারদের নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন শপিং অভিজ্ঞতা দেয়ার লক্ষ্যে ‘মিস্টিক্যাল মালদ্বীপ’ ক্যাম্পেইন ঘোষণা দিতে পেরে মাস্টারকার্ড আনন্দিত।
স্পেন্ড-অ্যান্ড-উইন ক্যাম্পেইনে মাস্টারকার্ডের যেসব পার্টনার ব্যাংকের কার্ডহোল্ডাররা অংশ নিতে পারবেন, সেসব ব্যাংকগুলো হলো:- এবি ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড, প্রাইম ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক এবং লঙ্কাবাংলা ফিন্যান্স।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ