ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে প্রবাসী আয় দ্বিগুণ

প্রকাশনার সময়: ১২ এপ্রিল ২০২২, ১০:৪০

হাত বাড়াইলেই পাওয়া যায় এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা। গ্রাহকের দোরগোড়ায় চলে আসায় বাড়ে চলছে গ্রাহক। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আমানত ও ঋণের পরিমাণ। গত আট বছরে এজেন্ট ব্যাংকিং ছড়িয়ে পড়েছে দেশের আনাচে-কানাচে। শহরের তুলনায় প্রান্তিক জনগণের কাছেই বেশি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এটি। প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স গ্রহণেও এ সেবা বেশ জনপ্রিয়। গত এক বছরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৮২ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা তার আগের ছিল ৪৮ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা। যা প্রায় দ্বিগুণ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এজেন্ট ব্যাংকিং সহজ হওয়ায় গ্রাহক বাড়ছে। ব্যাংকে ডিজিটাল এই প্লাটফর্ম দেশের অর্থনীতির জন্য নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে।

গত বছরের (২০২১ সাল) শেষে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ৮২ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা। এ অঙ্ক আগের বছরের চেয়ে ৬৮ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি। আলোচিত সময়ে এজেন্টের মাধ্যমে রেমিট্যান্স সংগ্রহের দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। এ ব্যাংকের মাধ্যমেই মোট প্রবাসী আয়ের ৫৪ শতাংশ এসেছে। এর পরেই রয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক (২৪ শতাংশ), ব্যাংক এশিয়া (১১ শতাংশ), আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক এবং রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের অবস্থান।

২০২১ সাল শেষে এজেন্ট ব্যাংকিং হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৪০ লাখ ৪৭ হাজার ৪৯১টি। এসব হিসাবধারীর আমানতের পরিমাণ ২৪ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। যা তার আগের বছরের তুলনায় আট হাজার ৩১৬ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে শহরে দুই হাজার ৩৩ কোটি এবং গ্রামে ২২ হাজার ২৬১ কোটি টাকার আমানত রয়েছে। ২০২০ সালে আমানতের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা।

আমানতের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ঋণ বিতরণও। ২০২১ সাল শেষে এ সেবাটির মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৫৩৫ কোটি টাকা। যা তার আগের বছর (২০২০ সালে) ছিল ১৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৩৪৫ কোটি টাকা। ঋণ বিতরণের শীর্ষে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। এর পরেই রয়েছে ব্যাংক এশিয়া ও সিটি ব্যাংক। গত বছরে এ সবার মাধ্যমে বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল পরিশোধ হয়েছে ১৩৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে এক বছরে গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে ৪৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ। গত বছর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৪০ লাখ ৪৭ হাজার ৪৯১টি। এর মধ্যে শহরে ২৯ লাখ ২৮ হাজার ৮৩৪টি এবং গ্রামে এক কোটি ২১ লাখ ১৮ হাজার ৬৫৭টি। আর তার আগের বছর (২০২০ সালে) এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৯৬ লাখ ৪৩ হাজার ১৬৩টি। এ হিসাবে বছরের ব্যবধানে গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে ৪৪ লাখ ৪ হাজার ৩২৮ জন।

দেশব্যাপী এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের সংখ্যাও বেড়েছে। গত বছর (২০২১ সাল) শেষে মোট ২৯টি ব্যাংক ১৩ হাজার ৯৫২টি এজেন্টের আওতায় ১৯ হাজার ২৪৭টি আউটলেটের মাধ্যমে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে শহরে এজেন্ট রয়েছে ১৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ, আর গ্রামে রয়েছে ৮৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। শহরে আউটলেট রয়েছে ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ আর গ্রাম পর্যায় রয়েছে ৮৬ দশমিক ২৫ শতাংশ।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে বড় ভূমিকা রাখছে এজেন্ট ব্যাংকিং। মূলত দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিতে কাজ করছে এটি। এতে কর্মসংস্থানও তৈরি হচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের ব্যবসাকে নিরাপদ, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর এবং সাশ্রয়ী করতে ব্যাংকিং সেবা তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। এতে বিদেশ থেকে আসা প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স অল্প সময়ের মধ্যে হাতে পাচ্ছেন গ্রামের মানুষ। বিদ্যুৎ বিলসহ নানা ইউটিলিটি বিলও দিতে পারছেন তারা। এসব সেবার কারণে দিন দিন জনপ্রিয়তা বাড়ছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের।

জানা যায়, বিশ্বের প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হয় ব্রাজিলে। আর বাংলাদেশে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হয় ২০১৪ সালে। এর আগে ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংক এশিয়া পাইলট প্রকল্প হিসেবে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, গ্রামীণ সুবিধা বঞ্চিত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতে এজেন্ট ব্যাংকিং চালুর উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ও ব্যয়সাশ্রয়ী এ সেবায় গ্রাহক এজেন্ট আউটলেটে সহজেই তার বায়োমেট্রিক বা হাতের আঙুলের স্পর্শে হিসাব পরিচালনা করতে পারেন। ফলে কম খরচে সহজে ব্যাংকিং সেবা পাওয়ায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ব্যাংকগুলোও এ সেবা প্রদানে আশানুরূপ আগ্রহ দেখাচ্ছে। সঠিকভাবে পরিচালনা করলে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে আগামীতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি ঘরে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে এমন ব্যক্তি এজেন্টশিপ নিতে পারেন। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হয় ন্যূনতম এইচএসসি বা সমমান পাস। এজেন্ট ব্যাংকিং পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে প্রত্যেক এজেন্টের একটি চলতি হিসাব থাকতে হয়। এ সেবার মাধ্যমে ছোট অঙ্কের অর্থ জমা ও উত্তোলন করা যায়। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স স্থানীয় মুদ্রায় বিতরণ, ছোট অঙ্কের ঋণ বিতরণ ও আদায় এবং এককালীন জমার কাজও করতে পারছেন। উপযোগ সেবা বিল পরিশোধের পাশাপাশি সরকারের অধীনে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অর্থ দিতে পারছেন এজেন্টরা। এ ছাড়া নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংক হিসাব খোলা, ঋণ আবেদন, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের নথিপত্র সংগ্রহ করতে পারছেন এসব এজেন্ট।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হিসাব খোলা, টাকা জমা ও উত্তোলন, টাকা স্থানান্তর (দেশের ভেতর), রেমিট্যান্স উত্তোলন, বিভিন্ন মেয়াদি আমানত প্রকল্প চালু, ইউটিলিটি সার্ভিসের বিল পরিশোধ, বিভিন্ন প্রকার ঋণ উত্তোলন ও পরিশোধ এবং সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সরকারি সব প্রকার ভর্তুকি গ্রহণ করা যায়। এজেন্টরা কোনো চেক বই বা ব্যাংক কার্ড ইস্যু করতে পারে না। এজেন্টরা বৈদেশিক বাণিজ্য-সংক্রান্ত কোনো লেনদেনও করতে পারেন না। এ ছাড়া এজেন্টদের কাছ থেকে কোনো চেকও ভাঙানো যায় না। মোট লেনদেনের ওপর পাওয়া কমিশন থেকেই এজেন্টরা আয় করেন।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ