ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

লক্ষ্য এখনো বহুদূর

প্রকাশনার সময়: ২৮ মার্চ ২০২২, ১৩:৫১

চলতি অর্থবছরের মার্চ মাসসহ বাকি মাত্র চার মাস। এরই মধ্যে আট মাস পেরিয়ে গেছে। অথচ এই সময়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) তার লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৫৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ রাজস্ব আহরণ করতে সক্ষম হয়েছে। চার মাসে এখনো পাড়ি দিতে হবে বহুদূর। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক বিভাগ মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৪৬ শতাংশ রাজস্ব আদায় করতে হবে। এদিকে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৭০ শতাংশ। বাকি চার মাসে ওই রাজস্ব আদায় প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, প্রবৃদ্ধিতে আশার সঞ্চার হলেও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায়ে বেশ পিছিয়ে আছে প্রতিষ্ঠানটি। সামনের কঠিন সময়ে এমন অর্জন অসম্ভব বলা যায়। সে কারণেই লক্ষ্যমাত্রা কমানোর তোড়জোড় করছে প্রতিষ্ঠানটি। এনবিআর থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, অর্থবছরের আট মাসে এখন পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় এক লাখ ৭৭ হাজার ১৩৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আরো আদায় করতে হবে প্রায় এক লাখ ৫২ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। হাতে সময় মাত্র চার মাস। যদিও গত অর্থবছরে একই সময়ে রাজস্ব আদায়ের হিসাবে বেশ এগিয়ে এনবিআর। গত বছর ওই সময়ে আদায় হয়েছিল এক লাখ ৫৩ হাজার ১০৪ কোটি ১০ লাখ টাকা।

এনবিআরের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমদানি ও রফতানি পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি ২৩.১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে শুল্ক আহরণ করেছে প্রায় ৫৬ হাজার ৯৫৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। যা গত অর্থবছরের তুলনায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি শুল্ক আহরিত হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে আদায় হয়েছিল ৪৬ হাজার ২৩৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। যার মধ্যে শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে শুল্ক আহরিত হয় প্রায় আট হাজার ২৩০ কোটি টাকা।

স্থানীয় পর্যায়ে মূসক বা ভ্যাট বাবদ এনবিআর সংগ্রহ করেছে ৬৬ হাজার ৮৭০ কোটি ৭২ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থ বছরের একই সময়ে আদায় হয়েছিল ৫৯ হাজার ৯৮৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ভ্যাটে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১১.৪৮ শতাংশ। যেখানে ফেব্রুয়ারি মাসে ভ্যাট আসে আট হাজার ৯২৮ কোটি টাকা।

আয়কর বাবদ জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ৫৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এনবিআর আদায় করে ৫৩ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি ১৩.৭২ শতাংশ হলে ঘাটতি ছয় হাজার ৪৯২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে একই সময়ে আয়কর আদায় হয়েছিল ৪৬ হাজার ৮৭৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।

এর মধ্যে শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে সাত হাজার ৭২৪ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রায় ছয় হাজার ৫৪০ কোটি টাকা আয়কর আদায় করতে সক্ষম হয়েছে এনবিআর।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম নয়া শতাব্দীকে বলেন, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারিসহ বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনায় করনেট বৃদ্ধি বড় চ্যালেঞ্জ। এমন সময় করের বোঝা না চাপিয়ে রাজস্ব আয় বাড়াতে এনবিআর তথা সরকারের সবার আগে জোর দেয়া উচিত কর ফাঁকি বন্ধের ওপর। করের আওতা বাড়ানো এবং সব টিআইএনধারীদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে বাধ্য করা যেতে পারে। তাহলে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেতে পারে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ১৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধিতেও রাজস্ব আদায় হয়েছিল এক লাখ ৫৩ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে আদায় হয় ৪৬ হাজার ৭৬৯ কোটি, ভ্যাট থেকে আসে ৫৭ হাজার ৯৭৩ কোটি এবং কাস্টমস বা শুল্ক থেকে আসে ৪৮ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। ৪১ হাজার ১১৮ কোটি ২০ লাখ টাকার রাজস্ব ঘাটতি নিয়ে গত ২০২০-২১ অর্থবছর শেষ করেছিল এনবিআর।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ এক লাখ ২৮ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা, আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে এক লাখ পাঁচ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা এবং আমদানি শুল্ক থেকে ৯৫ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ