ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থ পাচারে আরএসআরএম!

প্রকাশনার সময়: ২৮ মার্চ ২০২২, ০৯:৫৭

পুঁজিবাজারে প্রকৌশল খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস (আরএসআরএম) অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। একইসঙ্গে কোম্পানিটির পাঁচ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন, করপোরেট গভর্ন্যান্স কোড পরিপালন, আইপিও প্রক্রিয়া, নিয়োগকৃত অডিটরের ভূমিকাও যাচাই করতে চায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তারই ধারাবাহিকতায় কোম্পানিটির বিরুদ্ধে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। আদেশ জারির ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে গঠিত কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

গঠিত কমিটির সদস্যরা হলেন— বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহম্মদ আল মামুন মৃধা (টিম লিডার), সংস্থাটির যুগ্ম পরিচালক সাইফুল ইসলাম, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সিনিয়র ম্যানেজার মাসুদ খান ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ডেপুটি ম্যানেজার মোহম্মদ নাজমুল হোসাইন (সদস্য সচিব)। বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়—সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯-এর সেকশন ২১, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অ্যাক্ট, ১৯৯৩ এর সেকশন ১৭ (ক) এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (লিস্টিং) রেগুলেশন, ২০১৫ অনুযায়ী এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিএসইসি ও উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিটিকে এ আদেশ জারির ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হলো।

তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে জানা যায় গঠিত তদন্ত কমিটি রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস অর্থ পাচার সঙ্গে জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখবে। পাশাপাশি কোম্পানিটির ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের আর্থিক প্রতিবেদন খতিয়ে দেখা হবে। এছাড়া কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ও পর্ষদ কমিটি করপোরেট গভর্ন্যান্স কোড যথাযথভাবে পরিপালন করেছে কিনা তাও খতিয়ে দেখবে কমিটি। একইসঙ্গে কোম্পানিটির আইপিও প্রক্রিয়া, ডেবিট ক্যাপিটাল ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন তথ্য যাচাই করা হবে। কোম্পানির নিয়োগকৃত অডিটরের কার্যক্রম খতিয়ে দেখা হবে।

কোম্পানিটির রফতানি সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহের ব্যর্থতার কারণ যাচাই করে দেখবে কমিটি। আর কোম্পানিটির শীর্ষ কর্মকর্তারা, পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কোম্পানি সচিব, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা, হেড অব ইন্টারনাল কন্ট্রোলসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা নানা অনিয়মে জড়িয়ে সরাসরি সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করেছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে।

এর আগে চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি আরএসআরএমের ব্যবসার কৌশল ও কর্ম পরিকল্পনা জানতে চেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। একইসঙ্গে কোম্পানিটির বিএমআরই প্রকল্প দুই মাসের মধ্যে পুনরায় চালু করাসহ একটি বড় কর্ম পরিকল্পনার প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিতে বলা হয়।

এর বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নয়া শতাব্দীকে বলেন, গত চার বছরে কোম্পানিটির ব্যবসা ও মুনাফা ধারাবাহিক কমেছে। তাই কোম্পানিটি অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থা যাচাই করার লক্ষ্যে কমিশন তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তদন্তে কোনো অনিয়ম পাওয়া গেলে আইনানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

চলতি বছরের ফেব্রয়ারি মাসে রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের (আরএসআরএম) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুর রহমানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালত। ৩১২ কোটি ৮২ লাখ টাকা ঋণখেলাপির দায়ে এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।

কোম্পানিটির রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের ৩১২ কোটি ৮২ লাখ টাকা ঋণখেলাপির দায়ে নিষেধাজ্ঞা জারির পাশাপাশি ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মাকসুদুর রহমানের পাসপোর্ট আদালতে জমা দেয়ার এবং আদেশের কপি পুলিশের বিশেষ শাখায় পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য মাকসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করে জনতা ব্যাংক লিমিটেডের লালদীঘি ইস্ট করপোরেট শাখায়। মামলার রায়ে আদালত উল্লেখ করে, বিবাদী মাকসুদুর রহমান একজন ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি। ২০১৯ সালে মাত্র দুই শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে ঋণ পুনঃতফসিল করার সুযোগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সুযোগে ঋণ পুনঃতফসিল করেছেন অনেক খেলাপি। সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও তিনি তা গ্রহণ করেননি। বিবাদী মাকসুদুর রহমান মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতে আরো কয়েকটি মামলা বিচারাধীন। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে রতনপুর গ্রুপের প্রতিষ্ঠান মেসার্স রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের (আরএসআরএম) কাছ থেকে ২০১ কোটি টাকা খেলাপি আদায়ে প্রতিষ্ঠানটির স্থাবর সম্পত্তি নিলামে তুলতে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়েছে সোনালী ব্যাংক। গত ৫ জানুয়ারি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ করা নিলাম বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে— মেসার্স রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলসের কাছে সোনালী ব্যাংকের ২০১ কোটি ৪৩ লাখ ৫২ হাজার ৮৬৫ টাকা পাওনা খেলাপি হয়েছে। এই পাওনার বিপরীতে চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকায় গ্রুপটির কারখানাসহ ১০০ শতক জমি বন্ধক রয়েছে। দীর্ঘদিনেও ঋণ পরিশোধ না করায় অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩ (সংশোধন ২০১০) এর ১২ ধারার বিধান মোতাবেক প্রতিষ্ঠানটির স্থাপনাসহ এসব স্থাবর সম্পত্তি নিলামে তোলা হবে। কোম্পানিটি ২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। গত চার বছরে কোম্পানিটির ব্যবসা ও মুনাফা ধারাবাহিকভাবে সাড়ে সাতগুণের বেশি কমেছে। সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরেও কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ প্রদান করেনি। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি আরএসআরএমের ব্যবসার কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা জানতে চায় বিএসইসি।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ