ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ

প্রকাশনার সময়: ২৫ মার্চ ২০২২, ১১:৩৩

পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সাপোর্ট দেয়ার জন্য ৬১টি ব্যাংককে বিদ্যমান সক্ষমতার মধ্য থেকে বিনিয়োগ করার জন্য চিঠি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যে ব্যাংকগুলোর ৪০-৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক, ৪২টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, ৩টি বিশেষায়িত ব্যাংক ও ৯টি বিদেশি ব্যাংকসহ বাংলাদেশে মোট তালিকাভুক্ত ৬১ ব্যাংককে উল্লিখিত নির্দেশনা জানানো হয়েছে। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এই চিঠি ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর পাঠানো হয়েছে। দুই ফরমেটে ৬১টি ব্যাংককে এই চিঠি দেয়া হয়েছে।

বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। যা বিনিয়োগ সীমার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে না। এ ছাড়া ব্যাংকিং কোম্পানিজ আইনে প্রতিটি ব্যাংকের মূলধনের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ আছে। এই মূলধনের মধ্যে পরিশোধিত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, স্ট্যাচুরি রিজার্ভ ও রিটেইন আর্নিংস অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু অনেক ব্যাংক বিনিয়োগ সীমা ও ২০০ কোটির বিশেষ তহবিলের থেকে অনেক কম বিনিয়োগ করেছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অধিকাংশ ব্যাংক এখন পর্যন্ত ২০০ কোটির বিশেষ তহবিল গঠনই করেনি। এই পরিস্থিতিতে ৩৩ ব্যাংককে বিনিয়োগ সীমা অনুযায়ী ও বিশেষ তহবিল থেকে বিনিয়োগের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিশেষ তহবিল গঠন না করা ২৮ ব্যাংককে গঠন করে বিনিয়োগের জন্য বলা হয়েছে। বিএসইসির চিঠি অনুযায়ী, ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে পুঁজিবাজারে মাত্র ৩৩টি ব্যাংক ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। এখনো ২৮টি ব্যাংক এই তহবিল গঠন করেনি।

এ ছাড়া অধিকাংশ ব্যাংক বিনিয়োগ সীমার ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করেনি। একটি বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর এখনো সবমিলিয়ে ৪০-৫০ হাজার কোটি টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এরমধ্যে বিনিয়োগ সীমা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো প্রায় ৩০-৪০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে। আর ৯ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে বিশেষ তহবিল থেকে। কারণ ৬১টি ব্যাংকের প্রতিটির ২০০ কোটির বিশেষ তহবিল বিবেচনায় ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ থাকলেও করা হয়েছে মাত্র তিন হাজার ১০০ কোটি টাকার।

সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এই বিনিয়োগ না করা ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বিনিয়োগের জন্য চিঠি দিয়েছে বিএসইসি। দেশের বৃহৎ স্বার্থে ব্যাংকগুলোর কাছে এই বিনিয়োগ প্রত্যাশা করা হয়েছে। নিম্নের ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য এখনো ২০০ কোটির বিশেষ তহবিলই গঠন করেনি। বিনিয়োগ তো দূরের কথা। এই ব্যাংকগুলোকে তহবিল গঠন করে বিনিয়োগের জন্য বলা হয়েছে। এদিকে, ৩৩টি ব্যাংক বিশেষ তহবিল গঠন করলেও পুরোপুরি বিনিয়োগ করেনি। এখনো ব্যাংকগুলোর অনেক বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।

উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারের তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধি করে অস্থিরতা দূর করতে ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তহবিল গঠন করতে পরামর্শ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরমধ্যে ৩৬টি ব্যাংক ছয় হাজার ৫০০ কোটি টাকার ফান্ড গঠন করেছে। তবে সেই ফান্ড সেকেন্ডারি মার্কেটের বদলে বেক্সিমকো সুকুকেই বিনিয়োগ করেছে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ মার্চ পর্যন্ত ৩৬টি ব্যাংক সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। যার মধ্য থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছে তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এই বিনিয়োগ থেকে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকারও বেশি গেছে বেসরকারি খাতে দেশের প্রথম সুকুক বন্ড বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক আল ইস্তিসনায়।

বেক্সিমকোর সুকুকে ব্যাংকগুলোর মোট বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় দুই হাজার ২২০ কোটি টাকা, যা বন্ডটির মোট আকারের ৭৪ শতাংশ। পুঁজিবাজারের জন্য গঠিত বিশেষ তহবিলের বাইরে আরো প্রায় ৯০০ কোটি টাকা নিজস্ব তহবিল থেকে বিনিয়োগ করেছে ব্যাংকগুলো। বিশেষ ফান্ড থেকে সুকুকে ব্যাংকের বিনিয়োগের কারণে অন্যান্য তালিকাভুক্ত শেয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ কিছুটা কমে গেছে। গত নভেম্বরে বিভিন্ন শেয়ারে বিশেষ তহবিল থেকে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ ছিল প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা, যা এখন প্রায় এক হাজার ৫৫০ কোটি টাকায় নেমেছে।

২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের জন্য ব্যাংকগুলোর গঠন করা বিশেষ তহবিলের ৭০ শতাংশ সৌর, বায়ু, জল, বায়োমাসের মতো নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্পে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে বেসরকারি উদ্যোক্তার আনা গ্রিন সুকুক বন্ডেও বিনিয়োগ সুযোগ দেয়া হয়। এজন্য বিশেষ তহবিলের মেয়াদ ২০২৫ সাল থেকে বাড়িয়ে ২০২৮ সাল পর্যন্ত করা হয়। ব্যাংকগুলোর এই বিনিয়োগ পুঁজিবাজারে ব্যাংক কোম্পানি আইনের বর্ণিত বিনিয়োগ গণনার বাইরে থাকবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, তফসিলি ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল ও বন্ড রেপোর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করতে পারে। ব্যাংকগুলো চাইলে নিজস্ব উৎস থেকেও এমন তহবিল গঠন করতে পারে।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ