ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভ্যাট কমানোর সুফল কবে

প্রকাশনার সময়: ১৮ মার্চ ২০২২, ১০:৩০ | আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২২, ১০:৩৩

আজ শবেবরাত। এরপরই শুরু হবে রোজার বাজার। তবে এবার রোজার বাজার কতটা স্বত্বির হবে তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। এরইমধ্যে ভোজ্যতেলসহ নিত্যপণ্যের দাম নিম্নআয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না বাজার। এমন অবস্থায় সয়াবিন ও পাম তেলে আমদানি পর্যায়ে ১০ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) শিগগির প্রজ্ঞাপন জারি করবে বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। তবে ভোক্তারা ভ্যাট কমানোর সুবিধা কতটা পাবেন— তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। এদিকে দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদারও বেশি অর্থবছরের প্রথম সাড়ে আট মাসে আমদানি করা হয়েছে। অন্যদিকে যেদিন ভ্যাট কমানোর প্রজ্ঞাপন জারি হবে, সেদিন থেকেই তা কার্যকর হওয়ার কথা।

ভোজ্যতেলে এখন আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। তা থেকে ১০ শতাংশ কমালে কেজিপ্রতি কমবেশি ১২ টাকা খরচ কমতে পারে দাবি ব্যবসায়ীদের। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই দাম কমা নির্ভর করবে কত দামে ভোজ্যতেল আমদানি করা হয়েছে তার ওপর। এদিকে খাতুনগঞ্জে কিছুটা দাম কমলেও খুচরা বাজারে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এর প্রভাব পড়েনি। বাজারে ১৬৮ টাকা কেজিপ্রতি সয়াবিন তেল আমদানি করা হয় ১১৮ থেকে ১২২ টাকায়। সেই হিসেবে কেজিপ্রতি সয়াবিনের দাম ১২ টাকা করে কমবে বলে বলছেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে, চট্টগ্রাম বন্দরে এতদিন ১১৮-১২২ টাকা কেজিপ্রতি খালাস হওয়া অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের আমদানিমূল্য থেকে ৫-৬ টাকা দাম বেড়েছে। যা বর্তমান মূল্যে ১২৭ টাকা পড়েছে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা। সেই হিসেবে কেজিপ্রতি ভ্যাট বাবদ ১২ টাকার কিছু বেশি মওকুফ হবে। একইভাবে পাম তেল আমদানিতেও খরচ কমতে পারে ১২ টাকার কাছাকাছি। তবে এখন যেসব তেল বাজারজাত হচ্ছে, সেগুলো ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়েই খালাস হয়েছে। নতুন চালান খালাস করে বাজারজাত করতে করতে রোজা চলে আসবে। সেক্ষেত্রে ভ্যাট কমানোর কতটুকু প্রভাব পড়বে তা নির্ভর করবে বাজারের ওপর।

বাজারে ভোজ্যতেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানতে অর্থ মন্ত্রণালয় পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন এবং পাম তেল আমদানিতে ভ্যাট কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্ত আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এর আগে এনবিআর গত সোমবার বিকেলে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পরিশোধিত পাম তেলের স্থানীয় উৎপাদন ও ব্যবসায় পর্যায়ে সব ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে। সয়াবিন ও পাম তেলের উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং ব্যবসা পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট ছিল। এই ভ্যাট— অব্যাহতি আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে। এতে দাম এক থেকে দেড় টাকা কমতে পারে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। নতুন করে আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট কমানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে, সব মিলিয়ে ১৩ থেকে ১৪ টাকা খরচ কমতে পারে বলে তারা ধারণা দেন।

অবশ্য ভ্যাট কমানোর জন্য কয়েক দফা সরকারের উচ্চপর্যায়ে সভা হয়েছে। এরপরও এনবিআর গত সোমবার উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট কমালেও আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট কমায়নি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখেনি। গত সোমবারের প্রজ্ঞাপন জারির পরপরই এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমকে চিঠি পাঠায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আসন্ন পবিত্র রমজান ও মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনা করে শুধু উৎপাদন ও ব্যবসায়িক পর্যায়ে নয়, আমদানিসহ সব পর্যায়েই ভোজ্যতেলের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের অনুরোধ করা হয়।

এদিকে বছরে দেশে ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকলেও অর্থবছরের প্রথম সাড়ে আট মাসে আমদানি হয়েছে এর চেয়েও বেশি। এর মধ্যে গত আড়াই মাসে আমদানি হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টন। যার বেশিরভাগ আমদানি করেছে দেশের শীর্ষ পাঁচ শিল্প গ্রুপ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে দাম বাড়লেও আমদানিকারকদের হাতে থাকা ভোজ্যতেলের দাম বাড়েনি। সম্প্রতি যে পরিমাণে আমদানি হয়েছে, আগামী রমজানে ভোজ্যতেলের সংকট হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

তবে আমদানিকারকরা বলছেন, দেশে অভিযানের নামে মফস্বল এলাকার ব্যবসায়ীদের যেভাবে হয়রানি করা হচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও মাঠ পর্যায়ের বিক্রেতাদের অনীহার কারণে রমজানে সংকটের আশঙ্কা রয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত সাড়ে আট মাসে ২৪ লাখ ৪৬ হাজার ৪৭ টন ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে পাম অয়েল ক্রুড এসেছে ১৫ লাখ ৮৫ হাজার ৮৬৭ টন। পরিশোধিত পাম অয়েল খালাস হয়েছে ১০ হাজার টন। অন্যদিকে সয়াবিন অয়েল ক্রুড এসেছে আট লাখ ৫০ হাজার ১৮৭ টন। এর মধ্যে দেশের শীর্ষ পাঁচ শিল্প গ্রুপ আমদানি করেছে ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ১৬২ টন ভোজ্যতেল। এছাড়া এখনো শুল্কায়ন হয়নি এমন ভোজ্যতেল নিয়ে দুটি জাহাজ বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করছে বলে বন্দর সূত্রে জানা গেছে। তাতেও প্রায় ৬০ হাজার টন ভোজ্যতেল খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে গত আড়াই মাসে (১ জানুয়ারি থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত) বন্দর থেকে ভোজ্যতেল খালাস হয়েছে তিন লাখ ৫৮ হাজার ৮৯৯ টন। যার বেশিরভাগই আমদানি করেছে পাঁচ শিল্প গ্রুপের আটটি প্রতিষ্ঠান। তথ্যানুযায়ী, গত আট মাসে দেশের শীর্ষ ভোজ্যতেল আমদানিকারকদের মধ্যে এস আলম গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেড ও এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড অর্থবছরের প্রথম সাড়ে আট মাসে বন্দর থেকে খালাস করেছে চার লাখ ৪৭ হাজার ৪০১ টন ভোজ্যতেল। এর মধ্যে গত ১ জানুয়ারি থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত খালাস করেছে এক লাখ দুই হাজার ১৫৪ টন। প্রথম সাড়ে আট মাসে টিকে গ্রুপের তিন প্রতিষ্ঠান বে ফিশিং করপোরেশন লিমিটেড, শবনম ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ এবং সুপার অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড খালাস করেছে আট লাখ ৭৩ হাজার ৬৭৯ টন ভোজ্যতেল। এর মধ্যে শেষ আড়াই মাসে খালাস করেছে এক লাখ দুই হাজার ৫৯১ টন।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ