ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
চার সপ্তাহের টানা দর পতন

মূলধন কমেছে ৩১ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশনার সময়: ১৩ মার্চ ২০২২, ১০:১২

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ব্যাপক পতন হয়েছে পুঁজিবাজারে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দ্রুত পদক্ষেপে গত সপ্তাহে আরো বড় পতন থেকে ঘুরে দাঁড়ায় পুঁজিবাজার। তবে সপ্তাহের শুরুতে প্রথম দুই কার্যদিবসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি পুঁজিবাজার। আর এতে করে গত সপ্তাহে পুঁজিবাজার থেকে বাজার মূলধন তিন হাজার কোটি টাকার বেশি কমেছে। গত সপ্তাহের শেষের দিকে বাজার ঘুরে দাঁড়ালেও তার আগের কার্যদিবসসহ মোট চার সপ্তাহ ধরে টানা পতন হয়েছে শেয়ারবাজারে। এতে ৩১ হাজার কোটি টাকার ওপরে বাজার মূলধন হারিয়েছে ডিএসই।

গেল সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ১০৬ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল পাঁচ লাখ ৩৮ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ গেল সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে তিন হাজার ৩২১ কোটি টাকা। আগের তিন সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে ২৮ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা। এতে চার সপ্তাহের টানা পতনে ডিএসইর বাজার মূলধন কমল ৩১ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা।

বাজার মূলধন বাড়া বা কমার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে বা কমেছে। অর্থাৎ বাজার মূলধন বাড়লে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা অর্থের পরিমাণ বেড়ে যায়। একইভাবে বাজার মূলধন কমলে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা অর্থের পরিমাণ কমে যায়।

গত সপ্তাহে ৩৮৬ কোম্পানির সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে। এরমধ্যে গত সপ্তাহের মোট লেনদেনের ২৫.১১ শতাংশ হয়েছে ১০ কোম্পানির শেয়ারে। ১০ কোম্পানির মধ্যে সপ্তাহটিতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ারে। কোম্পানিটির এক কোটি ৭৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬৬৩টি শেয়ার হাত বদলের মাধ্যমে ২৬২ কোটি ৪১ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা গত সপ্তাহের মোট লেনদেনের ৬.৬১ শতাংশ। ডিএসইতে গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে— ফরচুন সুজে ৪.১৪ শতাংশ, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনে ৩.৩৭ শতাংশ, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোতে ১.৯৯ শতাংশ, ওরিয়ন ফার্মায় ১.৯৫ শতাংশ, সোনালি পেপারে ১.৫১ শতাংশ, বিডিকম অনলাইনে ১.৪৫ শতাংশ, ড্রাগন সোয়েটারে ১.৩৮ শতাংশ, লাফার্জহোলসিমে ১.৩৬ শতাংশ ও ইউনিয়ন ব্যাংকে ১.৩৫ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ২০৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৫৬টির। আর ২৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসই খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে রয়েছে বস্ত্র খাত। গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট লেনদেনের ১৩.৩ শতাংশ অবদান রয়েছে এই খাতে। আলোচ্য সপ্তাহে বিবিধ খাতে ১৩ শতাংশ লেনদেন করে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ফার্মা খাতে ১২.৫ শতাংশ লেনদেন করে তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে। তালিকায় থাকা অন্য খাতগুলোর মধ্যে প্রকৌশল খাতে ৮.৯ শতাংশ, ব্যাংক খাতে ৭.৭ শতাংশ, খাদ্য খাতে ৭ শতাংশ, আইটি খাতে ৬.২ শতাংশ, সাধারণ বিমা খাতে ৫ শতাংশ, ট্যানারি খাতে ৪.৭ শতাংশ, জ্বালানি-বিদ্যুৎ খাতে ৪.৩ শতাংশ, আর্থিক খাতে ৩.৯ শতাংশ, জীবন বিমা খাতে ৩.১ শতাংশ, কাগজ খাতে ২.৮ শতাংশ, সিমেন্ট খাতে ১.৯ শতাংশ, সেবা-আবাসন খাতে ১.৬ শতাংশ, টেলিকমিউনিকেশন খাতে ১.৪ শতাংশ, মিউচুয়াল ফান্ড খাতে ১.২ শতাংশ, সিরামিকস খাতে ১ শতাংশ, ট্রাভেল খাতে দশমিক ৬ শতাংশ ও পাট খাতে দশমিক ১ শতাংশ দর বেড়েছে।

গত সপ্তাহে ডিএসই সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) প্রায় এক শতাংশ কমেছে। গত সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইর পিই ছিল ১৫.৯৬ পয়েন্টে। যা সপ্তাহ শেষে ১৫.৮৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও ০.১২ পয়েন্ট বা ০.৭৫ শতাংশ কমেছে।

গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৭৯৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৭৪৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৪৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা বা ৬ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে তিন হাজার ৯৭২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় তিন হাজার ৭৪৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন বেড়েছে ২২৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা বা ৬ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।

সপ্তাহে ডিএসই সাপ্তাহিক রিটার্নে দর কমেছে ১৩ খাতে। দর বেড়েছে ৭ খাতে। আলোচ্য সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি দর কমেছে খাদ্য খাতে। এই খাতে ৪.৬ শতাংশ দর কমেছে। জীবন বিমা খাতে ২.৪ শতাংশ দর কমে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। সিমেন্ট খাতে ১.৮ শতাংশ দর কমে তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে। তালিকায় থাকা অন্য খাতগুলোর মধ্যে ফার্মা খাতে ১.৪ শতাংশ, ট্যানারি খাতে ১.২ শতাংশ, বিবিধ ও টেলিকমিউনিকেশন খাতে ১ শতাংশ, কাগজ খাতে দশমিক ৯ শতাংশ, জ্বালানি-বিদ্যুৎ ও সিরামিকস খাতে দশমিক ৩ শতাংশ, পাট খাতে দশমিক ২ শতাংশ এবং সেবা-আবাসন খাতে দশমিক ১ শতাংশ দর কমেছে। দর বেড়েছে ৭ খাতে। খাতগুলো হচ্ছে— আইটি, বস্ত্র, মিউচুয়াল ফান্ড, আর্থিক, ব্যাংক, ভ্রমণ, প্রকৌশল ও সাধারণ বিমা খাত।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ