ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

পণ্য সংকটের গুজব

প্রকাশনার সময়: ১৩ মার্চ ২০২২, ০৮:৩২

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে দেশে একাধিক বিশেষ গোষ্ঠী গুজব ছড়াতে তৎপর রয়েছে। তারা যেন কেউ দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল করতে না পারে— সেজন্য প্রয়োজনে বিভিন্ন প্রচারমাধ্যম ব্যবহার করে জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করতে হবে। সম্প্রতি সরকারের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটি এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সরকারের একাধিক দফতরে পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

একইসঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশের অতি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত চলমান রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রসহ অন্যান্য প্রকল্পের কাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। প্রকল্পগুলোর কাজ ব্যাহত হলে দেশ বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে গার্মেন্টস শিল্পে। চলমান যুদ্ধের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। তাই বিশ্ব পুঁজিবাজারে বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে। এর প্রভাব বাংলাদেশের পুঁজিবাজারেও পড়তে শুরু করেছে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুদ্ধ নিয়ে নানা ধরনের অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে একটি গোষ্ঠী। তারা সরকারবিরোধী বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। বিশেষ করে যুদ্ধ ইস্যুকে কেন্দ্র করে নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে তারা বেশি সক্রিয়। আর এই সুযোগে একটি চক্র বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এরই মধ্যে সরকার বাজারে তেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। তারপরও এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা মজুদ করে তেলের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এরই মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিংয়ে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে মজুদ করা তেলসহ নানা ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। সক্রিয় রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের কর্মকর্তারাও। বেশি দামে মালামাল বিক্রি করার দায়ের জরিমানাও করা হচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত রাখারও তাগিদ দেয়া হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। একই সঙ্গে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটগুলোকেও সক্রিয় থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কঠোর নজরদারির আওতায় আনার তাগিদ দেয়া হয়েছে। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক একটি পক্ষ এই সুযোগ নিতে পারে বলেও আশঙ্কা করে তাদের নজরদারিতে রাখার পরামর্শ রয়েছে ওই প্রতিবেদনে। সূত্রমতে, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও বাজার ব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে এই দুই দেশে তৈরি পোশাক, পাট, হিমায়িত খাদ্য, চা, চামড়াজাত পণ্য, সিরামিক পণ্য, তামাক, মাছ, ওষুধ এবং শাক-সবজি রফতানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয়। অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে খাদ্য চাহিদা মেটাতে গম, ভুট্টা, সূর্যমুখী তেল, খনিজ সামগ্রী, রাসায়নিক পদার্থ, যন্ত্রাংশ ও প্লাস্টিকসহ নানা পণ্য বাংলাদেশে আমদানি করা হয়ে থাকে। কয়েকদিন ধরে ইউরোশিয়ার অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক রুট কৃষ্ণসাগরে কোনো জাহাজ যাচ্ছে না। তাই গম ও ভুট্টা আমদানি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ আছে। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দেশের নিত্যপণ্যের বাজারে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হতেই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বড়েছে। দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা আছে।

গোয়েন্দা পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, সারা বিশ্বের মোট চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ জ্বালানি তেল সরবরাহ করে রাশিয়া। যুদ্ধের কারণে এই দেশটি জ্বালানি তেলের রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। এর প্রভাবে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি আট শতাংশ বেড়েছে। যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে দাম আরো বাড়বে। তাই এ খাতে সরকারকে অতিরিক্ত ভর্তুকি দিতে হবে।

পর্যবেক্ষণে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে রাশিয়া ও ইউক্রেনে সরাসরি গার্মেন্টস পণ্য রফতানি করা হয়। যা দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা পালন করছে। যুদ্ধ পরিস্থিতে এই দুই দেশে তৈরি পোশাক রফতানি করা যাচ্ছে না। তাই এই শিল্প ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ যত গম আমদানি করে তার ৩০ শতাংশই আসে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। ভুট্টা আমদানির ২০ ভাগ আসে এই দুই দেশ থেকে। এই দেশ দুইটি সারাবিশ্বে সূর্যমুখী তেলের ৮০ শতাংশ রফতানি করে। বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেনে আমদানি-রফতানি ব্যাহত হওয়ায় অন্যান্য রফতনিকারক দেশ রফতানিতে সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করেছে। তাই দেশের বাজারে আমদানিনির্ভর পণ্যের পাশাপাশি দেশীয় পণ্যের মূল্য আরো ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চলমান যদ্ধের কারণে, আন্তর্জাতিক মুদ্রার লেন-দেন মার্জিনে সুইফট (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকশন্স) থেকে রাশিয়ার কিছু ব্যাংককে বাদ দেয়া হয়েছে। এ কারণে, রাশিয়ার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রার লেন-দেন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই বাংলাদশে চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম বাধার মুখে পড়তে যাচ্ছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, যুদ্ধের কারণে এরই মধ্যে ৩৬টি দেশের সঙ্গে রাশিয়ার বিমান যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এতে পণ্য পরিবহনও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষ্ণসাগর ব্যবহার করতে না পারায় অনেক জাহাজকে বহুদেশ ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছতে হচ্ছে। এতে পরিবহন খাতে আকাশ ও নৌপথে ব্যয় বেড়েছে অনেক গুণ। তাই গোয়েন্দাদের সুপারিশ, যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আগেই বিভিন্ন দেশ থেকে অধিক পরিমাণে গম ও ভুট্টা এনে মজুদ করা যেতে পারে। রাশিয়া ও ইউক্রেন ছাড়া অন্যান্য দেশে পোশাক শিল্পের বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে। দেশে চলামান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম যেন স্থবির হয়ে না পড়ে সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। গম ও ভুট্টার স্থায়ী সমাধানের জন্য উৎপাদন বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রান্তিক কৃষকদের ভর্তুকি দেয়া যেতে পারে। খাদ্যশস্য ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ