ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

খেলাপির ধাক্কায় মূলধন ঘাটতিতে ১০ ব্যাংক

প্রকাশনার সময়: ১২ মার্চ ২০২২, ১০:১৬

খেলাপি ঋণ কমাতে নানা ধরনের ছাড় দেয়ার পরও ব্যাংক খাতে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। এসব ঋণের বিপরীতে বড় অঙ্কের প্রভিশন ঘাটতি রাখতে হয়েছে। এতে ব্যাংকগুলো বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়বে— এমন আশঙ্কা আছে। এই ঝুঁকির বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণে ঘাটতিতে পড়েছে সরকারি-বেসরকারি ১০ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে মূলধন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, জনতা, রূপালী, অগ্রণী, বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে মূলধন ঘাটতি রয়েছে বাংলাদেশ কমার্স, আইসিবি ইসলামিক ও ন্যাশনাল ব্যাংকের। আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং রীতি ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী, ঝুঁকি বিবেচনায় ব্যাংকগুলোকে নিয়মিত মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়।

বর্তমান নিয়মে ব্যাংকগুলোকে ৪০০ কোটি টাকা অথবা ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশের মধ্যে যা বেশি সেই পরিমাণ অর্থ ন্যূনতম মূলধন হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয়। এর বাইরে আপৎকালীন সুরক্ষা সঞ্চয় হিসেবে ব্যাংকগুলোকে ২০১৬ সাল থেকে অতিরিক্ত মূলধন রাখতে হচ্ছে। ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী, ন্যূনতম যে মূলধন থাকা প্রয়োজন, ১০ ব্যাংকের তা নেই।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বড় বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির পর এখন পর্যন্ত ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এ জন্য দীর্ঘদিন ধরেই তাদের মূলধন সংকট চলছে। আর সরকারি মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণে অনিয়ম ও বেশি সুদে তহবিল নিয়ে কম সুদে ঋণ দেয়ায় ঘাটতিতে পড়েছে।

অন্যদিকে, অনিয়ম-জালিয়াতির কারণে বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংক প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকের আমানতের অর্থ থেকে ঋণ দেয়। সেই ঋণ খারাপ হয়ে পড়লে আইন অনুযায়ী, নির্দিষ্ট হারে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। আবার খারাপ ঋণের ওপর অতিরিক্ত মূলধন রাখার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। কাঙ্ক্ষিত মুনাফা করতে না পারা ও লাগামহীন খেলাপি ঋণের কারণে দীর্ঘদিন ধরে বেশ কিছু ব্যাংক মূলধন সংরক্ষণে করতে পারছে না। ফলে মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী, যে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ যত বেশি, ওই ব্যাংককে ততবেশি মূলধন রাখতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক তথ্য বলেছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ তিন হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। হিসাব করলে যা দাঁড়ায় মোট বিতরণকৃত ঋণের ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সেই হিসাবে এক বছরের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৪ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। এতে মূলধনের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে মূলধন ঘাটতি প্রসঙ্গে

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করায় ব্যাংকগুলোতে এই সংকট তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, আদায় না হওয়ায় খেলাপি ঋণ বাড়ছে। নিয়ম অনুযায়ী, খেলাপির বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে গিয়ে মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে এসব ব্যাংক। এই সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরো কার্যকর ভূমিকা রাখা উচিত বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ঘাটতি কমাতে ঋণ আদায়ে বিকল্প কিছু নেই। এ জন্য ঋণ আদায়ে টার্গেট বেঁধে দেয়া উচিত। যদি কেউ তা অর্জন করতে না পারে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে ঢালাও সুযোগ-সুবিধাও কমিয়ে দিতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে বিশেষায়িত খাতের দুইসহ রাষ্ট্রায়ত্ত সাত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৩১ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৪২৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ঘাটতি বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনতার মূলধন সংকট চার হাজার ২৫৬ কোটি ১২ লাখ টাকা। এ ছাড়া অগ্রণী ব্যাংকে তিন হাজার ৮৭৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা, সোনালীর তিন হাজার ৬৩৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা, রূপালীর তিন হাজার ৩৭ কোটি ৭৭ লাখ, বেসিক দুই হাজার ৫২৯ কোটি ৭০ লাখ এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঘাটতি এক হাজার ৬৬৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা।

বেসরকারি খাতের তিনটি ব্যাংকের মূলধন সংকট তিন হাজার ২০৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ঘাটতি এক হাজার ৬৬১ কোটি ৩২ লাখ টাকা, বাংলাদেশ কমার্সের এক হাজার ৮৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা এবং ন্যাশনাল ব্যাংকে ৪৫৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ১০ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ