ভোজ্যতেলে ২০ শতাংশ ভ্যাট কমানো হয়েছে। তারপরেও বাজারে কমেনি তেলের দাম। আগের বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে। অথচ ভ্যাট কমানোয় সরকারের নির্ধারিত মূল্য থেকে অন্তত ৩৩ দশমিক ৬০ টাকা কমে ১৩৪ দশমিক ৪০ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা প্রতি লিটার তেল। ভ্যাট কমার সুবিধা এখনো পৌঁছেনি ভোক্তা পর্যায়ে।
বাজারে তেলের কৃত্রিম সংকট এখনো কাটেনি। সংকট দেখিয়ে এখনো বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে তেল সরবরাহ নেই বলে দাম কমেনি। ভোক্তাদের অভিযোগ— ভ্যাট মওকুফের সুবিধা ব্যবসায়ীরা নিচ্ছেন ভোক্তাদের দিচ্ছেন না কিছুই। পরিস্থিতি বদলে দরকার কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গতকাল এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১৬৮ টাকায়, তবে সরবরাহ সংকটের কথা বলে কোনো কোনো স্থানে এর চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এ তেল। খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকায়। বোতলজাত পাঁচ লিটারের সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ৮০০ থেকে ৮৪০ টাকায়।
মাইদুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির মুহূর্তেই দেশের বাজারে বেড়ে যায় দাম। অথচ ২০ শতাংশ ভ্যাট কমানোর ফলে দাম যা কমার কথা ছিল তা কমেনি। অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা একবার দাম বাড়ালে আর কমাতে চায় না।’
কারওয়ান বাজারের মুদি দোকানি মুফিদুল ইসলাম জানান, নতুন করে কোনো তেল আসেনি। তাই দাম কমার সুযোগ নেই। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন। তিনি বলেন, প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ লিটার তেলের দরকার হলেও দেয়া হচ্ছে ৫ থেকে ১০ লিটার। চাইলেই বলে দাম বাড়বে। তাই সরবরাহ বন্ধ আছে। সব কোম্পানি তেল দেয় না। আগে ৪ থেকে ৫টি কোম্পানি তেল সরবরাহ করলেও এখন দেয় ১ থেকে ২টি কোম্পানি।
পাইকারি বাজারেও তেলের সরবরাহ কম। কারওয়ান বাজারের দ্বিতীয় তলার তেল ব্যবসায়ী শওকত মিয়া বলেন, ‘দোকান ফাঁকা, তেল নেই। চাইলে দেয় না, বলে দেরি হবে। তেলের দোকানগুলো ফাঁকা। সপ্তাহখানেক ধরে তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। মিল মালিকরা সরবরাহ না করলে, তেলের সংকট দূর করা সম্ভব না।
ঊর্ধ্বমুখী বাজারে আরেক দফা বেড়েছে সবধরনের চালের দাম। কেজিতে এক থেকে দেড় টাকা বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটি। আমদানি না করলে বৈশাখের আগে দাম কমার সম্ভাবনা দেখছেন না ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, গত কয়েকমাস ধরেই উর্ধ্বমুখী চালের বাজার। একটু একটু করে বেড়ে মিনিকেট ৬৪ টাকায়, আটাশ ৪৮, আর নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকা কেজিতে। এক সপ্তাহর ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে এক থেকে দেড় টাকা। সহসাই চালের দাম কমার সম্ভাবনা দেখছেন না চাল বিক্রেতারা।
কয়েক সপ্তাহ ধরে সবজির বাজারেও চলছে অস্থিরতা। সবজির বাজার নিয়ে এ সপ্তাহেও স্বস্তি মেলেনি ক্রেতাদের। সবজির বাজারের অস্থিরতা নিয়ে বিক্রেতারা বলছেন, পরিবহনের খরচ বেড়ে যাওয়ায় রোজার আগেই সবজি বাজারে অস্থিরতা চলছে। যা রোজা শুরু হলে আরো বাড়তে পারে। প্রতি সপ্তাহে কোনো না কোনো সবজির দাম বেড়েই চলছে।
ক্রেতারা বলছেন, কোনো বাজারেই তারা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারছেন না। সবজির বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা আশা করলেও অন্যসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মতো সবজির বাজারের অস্থিরতাও তাদের নাভিশ্বাস বাড়িয়ে তুলছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর উত্তর বাড্ডা ও শাহজাদপুর কাঁচাবাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। খুচরা বাজারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিচিযুক্ত শিম গত সপ্তাহে ৫০ টাকা বিক্রি হলেও চলতি সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে, বিচি ছাড়া শিম ৪০-৪৫ টাকা, কয়েক সপ্তাহে আগে ১৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া আলু এখন ২০ টাকা। রোজার শুরুর আগেই কাঁচামরিচ ও ধনিয়াপাতা পৌঁছেছে কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। টমেটো মান অনুযায়ী ৪০-৫০ টাকা কেজি, মান ও আকার অনুযায়ী বেগুন কেজিপ্রতি ৫০-৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহে মাঝারি সাইজের লাউ প্রতিটি ৬০ টাকা করে বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা করে, লেবুর হালি ৪০ টাকার থেকে ৫০ টাকায় পৌঁছেছে। ফুলকপি প্রতিটি ৫০ টাকা, বরবটি মান অনুযায়ী ৮০-১২০ টাকা কেজি, ঝিঙ্গা কেজিপ্রতি ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ১০০ টাকা কেজি, উস্তের কেজি ১২০ টাকা, শসা কেজিপ্রতি ৬০ ও করলা ১৪০ টাকা কেজি করে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচকলা হালি প্রতি ৪০, এক মুঠো লাল ও পালংক শাক ১০-১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাড়তি মাছের দামও। বেড়েছে ইলিশের দাম। কেজিতে এক থেকে দেড়শ টাকায় বেড়ে এককেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে এগারো’শ থেকে বারো’শ টাকায়। দাম বেড়েছে বেশিরভাগ দেশী মাছের। তাছাড়া গরুর মাংস ছয়শ পঞ্চাশ এবং খাসি বিক্রি হচ্ছে নয়শ পঞ্চাশ টাকায়।
শাহজাদপুরের কাঁচাবাজারে সবজি বিক্রেতা সবুজ বলেন, সবজির সরবরাহ ঠিক আছে। বাজারে প্রচুর সবজি রয়েছে। তবে বিষয় হচ্ছে যে, জমি থেকে সরাসরি সবজি খুচরা বাজারে আসে না। দুই-তিন হাত ঘুরে সবজি খুচরা বাজারে আসে। ওই ২-৩ হাত ঘুরার সময়ই সবজির দাম বেড়ে যায়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা আমাদের বলছেন, এখন নাকি পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই দাম বেশি। উত্তর বাড্ডা কাঁচাবাজারে সবজি বিক্রেতা মো. আনোয়ার বলেন, এই অস্থিরতা শেষ এখানেই শেষ নয়, রোজার শুরুতে সবজি বাজারের অস্থিরতা আরো দেখা যাবে। বিশেষ করে কাঁচামরিচ, ধনিয়াপাতা থেকে শুরু করে সালাদে ব্যবহার হওয়া সব সবজির দাম আরও বাড়বে। বেগুন ও আলুর দামে বৃদ্ধির আশংকা রয়েছে। শাহজাদপুর কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা শাহ আলম শেখ বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় এমন একটা পণ্যও নেই যার দাম বাড়তি নয়। আবার সামনে রোজার মাস। ওই সময়েও ব্যবসায়ীরা নানা অপকৌশলে দাম বাড়িয়ে দেবে। এভাবে বাজারের অস্থিরতা চলছে; কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি কোনো পদক্ষেপ নেই।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ