বিতর্কের মুখে থাকা ইভ্যালিকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়ে ব্যবসা পরিচালন সংক্রান্ত ছয়টি বিষয় জানতে চেয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে তাদের বিজনেস কোন প্রক্রিয়ায় এগিয়ে নিয়ে যাবে, সে বিষয়েও বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছে চিঠিতে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ওই চিঠির জবাবের ওপরে নির্ভর করেই প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
সোমবার (১৯ জুলাই) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিএ) সেল থেকে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ইভ্যালি গ্রাহক ও মার্চেন্ট পর্যায় থেকে যে চার শ কোটি টাকা নিয়েছে তা কোথায় রাখা হয়েছে, সেটি জানাতে হবে। যদি অন্য কোনো খাতে বিনিয়োগ করে থাকে, তাও জানাতে হবে। ইভ্যালি তাদের গ্রাহকদের পণ্য কিভাবে দেবে, মার্চেন্টদের বকেয়া কোন উপায়ে পরিশোধ করবে, তাদের বর্তমান ব্যবসায়িক নীতি কী— চিঠিতে এসব বিষয়ও জানতে চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে তাদের ব্যবসায়িক কৌশল সম্পর্কেও জানতে চেয়ে বলা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনি ব্যবস্থায় যাওয়া যাবে না, সেটিও ব্যাখ্যা করতে হবে।
অবিশ্বাস্য ছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রি করে তুমুল আলোচিত ই কমার্স সাইটটি নিয়ে সম্প্রতি নানা আলোচনা চলছে। সম্পদের চেয়ে বেশি দায় থাকা, অর্ডার করা পণ্য সরবরাহ করতে না পারাসহ নানা বিষয় নিয়ে এখন তর্ক বিতর্ক তুঙ্গে।
চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে দেখেছি যে ইভ্যালির গ্রাহক ও মার্চেন্ট পর্যায়ে অর্থের একটা বড় ধরনের গরমিল রয়েছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পণ্য না দেওয়া, অন্যদিকে মার্চেন্টদের বকেয়া রাখা— দুই জায়গায়তেই তারা বাকি রেখেছেন।
কোনো কারণে ইভ্যালি গ্রাহকদের অর্থ বা পণ্য ফেরত দিতে না পারলে কী হবে?— এমন প্রশ্নের জবাবে হাফিজুর রহমান বলেন, ডেসটিনি ও যুবকের ক্ষেত্রে যা হয়েছে, তেমন হতে পারে। তবে সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ সরকার হুট করে কাউকে তার সবকিছু বিক্রি করে গ্রাহকদের টাকা দিতে পারে না। এর কিছু প্রক্রিয়া আছে।
যে ৬ প্রশ্নের জবাব দিতে হবে
কারণ দর্শানোর সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিকে আরও ছয়টি বিষয় জানাতে বলা হয়েছে বলে জানান বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ তপন।
এগুলো হলো
১. গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত গ্রাহক ও মার্চেন্টদের নিকট মোট ৪০৭ কোটি টাকা দায়ের বিপরীতে ইভ্যালির কাছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকা চলতি সম্পদ থাকার কারণ কী? বাকি টাকা ইভ্যালির কাছে আছে কি না। থাকলে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে, না থাকলে দিতে হবে পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা।
২. ১৫ জুলাই পর্যন্ত গ্রাহকের কাছে মোট দায়ের পরিমাণ কত, গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া অর্থের বিনিময়ে যে পণ্য দেওয়ার কথা, সেগুলোর বর্তমান অবস্থা কী এবং এ বিষয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
৩. ১৫ জুলাই পর্যন্ত মার্চেন্টদের নিকট দায়ের পরিমাণ কত এবং তা পরিশোধের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
৪. ব্যবসা শুরুর পর থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত গ্রাহকদের কাছ থেকে ইভ্যালি কী টাকা নিয়েছে, মার্চেন্টদের কত অর্থ পরিশোধ করেছে এবং প্রশাসনিক ও অন্যান্য খাতে কী পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ।
৫. ইভ্যালির ব্যবসা পদ্ধতি এবং বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের পরিকল্পনা।
৬. ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা এবং ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন কোনো ব্যবসা পদ্ধতি বা কার্যক্রম ইভ্যালিতে এখনো আছে কি না, থাকলে কী—এসব বিষয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা।
কারণ দর্শানোর নোটিশে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, ‘সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে যে ইভ্যালি গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ নিয়েও যথাসময়ে পণ্য সরবরাহ করছে না। যেসব মার্চেন্টের কাছ থেকে পণ্য নেওয়া হয়েছিল, তাদেরও অর্থ পরিশোধ করছে না ইভ্যালি। এসব কার্যকলাপের ফলে বিপুলসংখ্যক ক্রেতা এবং বিক্রেতার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
এর আগে, গত ৪ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ইভ্যালির বিষয়ে তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) চিঠি পাঠায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার অধিদফতরসহ মোট চারটি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি পাঠানো হয়।
নয়া শতাব্দী/এসইউ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ