ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

রেমিট্যান্সের ২০ ভাগ আবাসনে

প্রকাশনার সময়: ০৬ মার্চ ২০২২, ০৯:৩২ | আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২২, ০৯:৩৪

বাড়ি বানানো বা কেনা-উভয়তেই বরাবরই মানুষের আগ্রহ রয়েছে। বসবাসের জন্য একটু শান্তির আশায় শেষ সম্বল দিয়ে হলেও বাড়ি নির্মাণ করছেন বা কিনছেন। বেশিরভাগই শহরকেন্দ্রিক গড়ে উঠছে এসব নতুন বাড়ি। সঙ্গে এই খাতে বেড়েছে প্রবাসীদের বিনিয়োগও। এক সময় প্রবাসীদের বিচরণ খুবই কম ছিল। সময় ব্যবধানে ধীরে ধীরে বাড়ছে। পরিসংখ্যান বলছে, গত অর্থবছরে ২০ শতাংশ রেমিট্যান্স আবাসন খাতে ব্যয় হয়েছে। যা পূর্বের যে কোনো সময় থেকে অনেক বেশি। খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, আবাসন খাতে এখন আগের থেকে তিনগুণ বিনিয়োগ হচ্ছে রেমিট্যান্স। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অন্যন্য খাতের থেকে আবাসন খাতে বিনিয়োগ অনেক নিরাপদ বিধায় প্রবাসীরা এই খাতে ঝুঁকছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন বলেছে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২ লাখ ১০ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। করোনাকালীন এই রেমিট্যান্স দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পরিমাণের রেমিট্যান্স বলে জানিয়েছেন ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে আসা এই বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্সের প্রায় ২০ শতাংশ বিনিয়োগ হয়েছে আবাসন খাতে। যা আগের থেকে প্রায় তিনগুণ। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানারস-এর (বিআইপি) সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা অনুসারে, প্রায় ২০ শতাংশ বিনিয়োগ, যা প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা, রেমিট্যান্স রিয়েল এস্টেট খাতের সর্বোচ্চ পরিমাণ বিনিয়োগ। ২০১৯-২০ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ২২ হাজার কোটি ও ২০ হাজার কোটি টাকা।

বিআইপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, এনবিআর, বিভিন্ন আবাসন প্রতিষ্ঠান ও এ-সংক্রান্ত গবেষণা থেকেই এই তথ্য সংগ্রহ করেছে বিআইপি। রেমিট্যান্সের টাকা কোন কোন খাতে বিনিয়োগ হয়েছে, তার সঠিক কোনো ডাটা কারো কাছেই নেই।

বিনিয়োগের প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি বলে দাবি করছে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব)। রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, ‘বিআইপির সমীক্ষা ভুল নয়, ঠিকই আছে। তবে আমার ধারণা এর চেয়ে বেশ পরিমাণ বিনিয়োগ হয়েছে রেমিট্যান্সের অর্থ।’

তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর গড়ে ১ লাখ কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগ হয় আবাসন খাতে। কিন্তু গত বছর এই বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়ে দেড় লাখ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে— যা আবাসন খাতকে বেশ চাঙা করেছে। হঠাৎ করে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে প্রবাসীদের বিনিয়োগকেই মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, ‘এই বিনিয়োগের টাকার মধ্যে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন প্রবাসীরা। ফ্ল্যাট ও জমি কেনার জন্য বিনিয়োগ হয়েছে বাকি অর্থ।’ জেমস ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান ও রিহ্যাবের সাবেক পরিচালক শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘তাদের বিভিন্ন প্রকল্পে গত বছর ও এর আগের বছর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন প্রবাসীরা— যা আগের বছরগুলোর তুলনায় তিনগুণ বেশি।’ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ. মনসুর নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘করোনাকালে দেশে রেমিট্যান্স আসায় রেকর্ড গড়েছে। ফলে বিনিয়োগটাও বেড়েছে তাদের। বিদেশ থেকে আসা অর্থ নিরাপদ খাতে প্রবাসীরা বিনিয়োগ করেছে। আবাসন খাত অন্যান্য খাতের তুলনায় তাদের কাছে বেশি নিরাপদ মনে হয়েছে বলে তারা আগের থেকে বিনিয়োগ বাড়িয়ে দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘করোনার সময়ে আবাসন খাতে বিনিয়োগের সুযোগটাও বেশি ছিল। কারণ আবাসন খাতের বাইরে বিনিয়োগ করতে হলে সেটি করতে হবে বিভিন্ন ব্যবসায়। কিন্তু করোনার কারণে সব ব্যবসার অবস্থা খারাপ ছিল। আবাসন খাতে বিনিয়োগ অনেকটাই নিরাপদ। প্রবাসীরা সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠান যাচাই করে জমি বা অ্যাপার্টমেন্ট কিনলে সেখানে প্রতিনিয়ত তাদের ইনকাম বৃদ্ধি পায়। দেখা যায় এখন যে টাকায় ফ্ল্যাট বা জমি কিনেছে, ১০ বছর পর সেটি বিক্রয় করলে এর দ্বিগুণ বা তার চেয়ে একটু কম দামে বিক্রয় সম্ভব।’

রিহ্যাব সূত্র জানায়, ‘দেশের আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় ৬০ শতাংশই হলো রাজধানী ও এর পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর ও সাভার এলাকায়। সারাদেশ রয়েছে বাকি ৪০ শতাংশ। আর বিয়োগের পরিমাণও প্রায় একই। রিহ্যাব পরিচালক নাইমুল হাসান বলেন, রাজধানীর পর চট্টগ্রাম ও সিলেটে সবচেয়ে বেশি ইনভেস্ট করেছেন প্রবাসীরা।’

নিবন্ধন অধিদফতরের তথ্য তুলে ধরে নাইমুল বলেন, ‘গত বছর প্রায় ৮ হাজার ২৩ কোটি টাকার পুরোনো ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে সারাদেশে। এই পুরোনো ফ্ল্যাটগুলোর অর্ধেকের বেশ কিনেছেন প্রবাসীরা। ‘কালো টাকা’ সাদা করা হয়েছে আবাসন খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রাহমাতুল মুনিম বলেন, গত অর্থবছরে যে পরিমাণ কালো টাকা সাদা করা হয়েছে, তার বেশিরভাগ বিনিয়োগ হয়েছে আবাসন খাতে।

একই অর্থবছরে রেমিট্যান্স থেকে সরকার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রাজস্ব পেয়েছে বলে জানান তিনি। প্রবাসীদের আয় আবাসন খাতে বিনিয়োগ করে যেসব জমি ও ফ্ল্যাট ক্রয়ের নিবন্ধন করা হয়েছে, সেখান থেকেও বড় অঙ্কের রাজস্ব পেয়েছে সরকার। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে দেশের আবাসন খাতে বিনিয়োগ এখন বেশ নিরাপদ। বিশেষ করে রাজধানী এলাকায় রাজউক এই আবাসন খাতকে জনবান্ধব ও নিরাপদ হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। রাজধানী ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় নাগরিক সুবিধা বেশি থাকায় প্রবাসীরা এসব এলাকায় আবাসন খাতে বিনিয়োগে উৎসাহ পাচ্ছেন।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ