ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
ফার কেমিক্যালের অধিগ্রহণ

যাচাই-বাছাইয়ে পরিদর্শন কমিটি বিএসইসির

প্রকাশনার সময়: ০৫ মার্চ ২০২২, ১২:০১

শেয়ারবাজারের ওষুধ ও রসায়ন খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফার কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালনা পর্ষদ ও তালিকাভুক্ত কোম্পানি এসএফ টেক্সটাইলকে অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আইন অনুসারে কোম্পানিটিকে হাইকোর্ট, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নিতে হবে। এরই প্রেক্ষিতে কোম্পানিটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে অধিগ্রহণের জন্য আবেদন করেছে। কোম্পানিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে অধিগ্রহণের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করতে তিন সদস্যের পরিদর্শন কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি।

সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। একইসঙ্গে বিষয়টি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং এসএফ টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে। এদিকে, হাইকোর্ট, শেয়ারহোল্ডার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনের পর এসএফ টেক্সটাইলকে অধিগ্রহণের কার্যক্রম চূড়ান্ত করবে ফার কেমিক্যাল। তথ্যমতে, বিএসইসির গঠিত তিন সদস্যের পরিদর্শন কমিটির সদস্যরা হলেন— বিএসইসির উপ পরিচালক মোহাম্মদ রতন মিয়া, সহকারী পরিচালক মাহমুদুর রহমান ও ডিএসইর নির্বাহী মহর আলী। এ কমিটির প্রধান দায়িত্ব পালন করবেন মোহাম্মদ রতন মিয়া। আর সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন মহর আলী। বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, গঠিত কমিটি এসএফ টেক্সটাইলের জমি, ভবন, কারখানা, অধিগ্রহণ করার প্রক্রিয়া ও উৎপাদন কার্যক্রম পরিদর্শন করে দেখবে। একই সঙ্গে কমিটি এসএফ টেক্সটাইলের গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি ইত্যাদি সুবিধাদির পর্যাপ্ততা বিষয়ে খতিয়ে দেখবে। এ ছাড়া অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্যাদি যাচাই করে দেখবে। পরিদর্শনের কার্যক্রম শেষে গঠিত কমিটিকে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিএসইসিতে দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, বিএসইসির গঠিত পরিদর্শন কমিটি এরই মধ্যে ফার কেমিক্যালের কাছে এসএফ টেক্সটাইলকে অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত তথ্যাদি চেয়েছে। এর মধ্যে এসএফ টেক্সটাইলের কারখানার ঠিকানাসহ অন্যান্য অফিসের তথ্যাদি, কোম্পানিটির স্থায়ী সম্পদ ও জমি-সংক্রান্ত তথ্য, কোম্পানিটির বিগত পাঁচ বছরসহ বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতার তথ্য, ইউটিলিটি ও লজিস্টিক সাপোর্ট-সংক্রান্ত তথ্য, ফার কেমিক্যাল ও এসএফ টেক্সটাইলের রেজিস্ট্রেশন অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের (আরজেএসসি) তথ্য এবং উভয় কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের বর্তমান শেয়ারধারণ ও সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন তথ্য চাওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির এক কর্মকর্তা নয়া শতাব্দীকে বলেন, ফার কেমিক্যাল বিএসইসির কাছে এসএফ টেক্সটাইলকে অধিগ্রহণ করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। এরই প্রেক্ষিতে আমরা কোম্পানিটির অধিগ্রহণের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করতে একটি পরিদর্শন কমিটি গঠন করেছি। কমিটিকে কিছু নির্দেশনা দেয়া আছে। তারা সে অনুযায়ী, কাজ করে বিএসইসির কাছে প্রতিবেদন জমা জমা দেবে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাব।

উল্লেখ্য, এসএফ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজকে অধিগ্রহণ করার বিষয়ে গত বছরের নভেম্বর মাসের শুরুতে সিদ্ধান্ত নেয় ফার কেমিক্যালের পর্ষদ। এরপর গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর এসএফ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজকে অধিগ্রহণ করার খসড়া স্কিমে অনুমোদন দিয়েছে ফার কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালনা পর্ষদ। অধিগ্রহণের মাধ্যমে এসএফ টেক্সটাইলের সব দায় ও সম্পদ ফার কেমিক্যালের সঙ্গে একীভূত করা হবে। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থা, শেয়ারহোল্ডার ও হাইকোর্টের অনুমোদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়।

এসএফ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজের প্রডাকশন ইউনিট নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ফার কেমিক্যালের নিজস্ব জমিতে অবস্থিত। কোম্পানিটি ২০১৬ সাল থেকে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ৪২ হাজার ২৫০ স্পিন্ডল কটন, ভিসকস ও সিভিসি ইয়ার্ন স্পিনিং উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে এসএফ টেক্সটাইলের।

এদিকে, ফার কেমিক্যালের চলতি ২০২১-২২ হিসাব বছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) শেয়ারপ্রতি লোকসান ৪৩৩ শতাংশ বেড়েছে। কোম্পানিটির ছয় মাসে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১৬ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে লোকসান হয়েছিল ৩ পয়সা। এ হিসাবে কোম্পানিটির মুনাফা ১৩ পয়সা বা ৪৩৩ শতাংশ বেড়েছে।

অপরদিকে, কোম্পানিটির চলতি ২০২১-২২ হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১৩ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে লোকসান হয়েছিল ২ পয়সা। এ হিসাবে কোম্পানিটির লোকসান ১১ পয়সা বা ৫৫০ শতাংশ বেড়েছে। ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৩ টাকা ৫৫ পয়সায়।

প্রসঙ্গত, ফার কেমিক্যাল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০১৪ সালে। বর্তমানে কোম্পানিটি ‘বি’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে। কোম্পানিটির মোট পরিশোধিত মূলধন ২১৮ কোটি ৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা। সে হিসাবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ২১ কোটি ৮০ লাখ ৯৩ হাজার ৪২৩টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৩০.২৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৩.৭৩ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৫৬.০৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। কোম্পানিটি ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য মাত্র ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করেছে।

নয়া শতাব্দী/এস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ