ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে সুবাতাস

প্রকাশনার সময়: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯:৪৫

হাওয়া লেগেছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে। বাড়তি খরচ ও কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই সেবা দিতে ব্যাংকগুলো এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ঝুঁকছে। মিলছে সুফলও। ব্যাংকগুলো নতুন নতুন এলাকায় খুলছে আউটলেট। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন— করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির প্রভাবে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের পালে হাওয়া লেগেছে। সহজে হাতের নাগালে সেবা পাওয়ায় গ্রাহকরা এদিকে ঝুঁকছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুসারে, এক বছরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানত বেড়েছে ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি।

পাশাপাশি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। মাত্র সাত বছরেই এজেন্ট ব্যাংকের গ্রাহক বেড়ে হয়েছে দেড় কোটির কাছাকাছি। ব্যাংকগুলোর এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা ইউনিয়ন পর্যায়েও চালু হয়েছে। আমানত রাখা, ঋণ বিতরণ ও প্রবাসী আয়ের পাশাপাশি স্কুল ব্যাংকিং চালু করেছে এজেন্টরা।

ব্যয় কম হওয়ায় প্রচলিত শাখা খোলার চেয়ে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ফলে এজেন্ট আউটলেটের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে ২৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ১৩ হাজার ৯৫১টি এজেন্টের আওতায় ১৯ হাজার ২৪৭টি আউটলেটের মাধ্যমে এ সেবা দিচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকিং সেবা ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও বড় ভূমিকা রাখছে এজেন্ট ব্যাংক। এ ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জনগণকে ব্যয়সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে। গ্রাহকরা সুপ্রশিক্ষিত এজেন্ট ব্যাংকারের মাধ্যমে বিদেশ থেকে আসা রেমিট্যান্স অল্প সময়ের মধ্যে হাতে পাচ্ছেন। বিদ্যুৎ বিল দিয়ে যাচ্ছেন সবাই। হাজার হাজার গ্রাহক প্রতি মাসে এসে আমানতে টাকা জমা দিচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির ভাতাও বিতরণ করছে এজেন্টরা। ফলে শহরের চেয়ে গ্রামেই বেশি জনপ্রিয় এজেন্ট ব্যাংকিং। বর্তমানে শহরের তুলনায় গ্রামে পাঁচ গুণ বেশি গ্রাহক রয়েছে।’ দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি চালু হয় এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম। মূলত যেসব এলাকায় ব্যাংকের কোনো শাখা নেই বা শাখার মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা বেশি ব্যয়বহুল ও লাভজনক নয়, সেসব এলাকায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতেই এই সেবা চালু করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে সারা দেশে আউটলেটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ২৪৭টি। এসব আউটলেটে ১৩ হাজার ৯৫১ এজেন্ট কাজ করছে। ২০২০ সাল শেষে আউটলেট ছিল ১৫ হাজার ৯০৮টি। সেই হিসাবে এক বছরে ব্যাংকগুলোর এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট বেড়েছে ৩ হাজার ৩৩৯টি। এগুলোর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৩টিই গ্রামাঞ্চলে সেবা কাজ পরিচালনা করছে।

শীর্ষে রয়েছে রাজধানী ঢাকার অবস্থান। ঢাকায় মোট আউটলেট ৪ হাজার ৭৫৭টি। এরপরই ৪ হাজার ৮১টি আউটলেট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে চট্টগ্রাম। খুলনায় ২ হাজার ৩৯৬, রাজশাহীতে ২ হাজার ৩৭২, রংপুরে ২ হাজার ১৯, বরিশালে ১ হাজার ২৭৬, সিলেটে ১ হাজার ১৮১ ও ময়মনসিংহে ১ হাজার ১৬৫টি আউটিলেট রয়েছে।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের শীর্ষে রয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি চালু হয় এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম। বর্তমানে ২৯টি ব্যাংক এ সেবা চালু করেছে। ব্যাংক এশিয়া প্রথম কার্যক্রম শুরু করলেও বর্তমানে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে শীর্ষে রয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। ব্যাংকটির এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আউটলেট সংখ্যা ৫ হাজার ৫০৩টি। এর পরের অবস্থানে আছে ব্যাংক এশিয়া। ব্যাংকটির এজেন্ট আউটলেট ৪ হাজার ৮৯৮টি। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইসলামী ব্যাংকের আউটলেট ২ হাজার ৬৭৬। এরপর সিটি ব্যাংকের ১ হাজার ১৮২ ও আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের ৫৭২টি আউটলেট রয়েছে।

আমানত ও ঋণ : গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এজেন্ট ব্যাংকে হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ ৪৭ হাজার ৩৯৬টি। এসব হিসাবে আমানতের পরিমাণ ২৪ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে শহরাঞ্চলে ১৯ হাজার ৪৩ কোটি এবং গ্রামাঞ্চলে ৫ হাজার ১১ কোটি টাকার আমানত রয়েছে। ২০২০ সালে আমানত ছিল ১৫ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরে আমানত বেড়েছে ৮ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। আমানতের পাশাপাশি ঋণ বিতরণও বেড়েছে। এ সময়ে ৫৫২ কোটি ৪০ লাখ টাকার ঋণ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে শহরাঞ্চলে ৩৫৪ কোটি ২০ লাখ এবং গ্রামাঞ্চলে ১৯৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। ২০২০ সাল শেষে ৪৮৩ কোটি ১০ লাখ টাকার ঋণ দেয়া হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে ঋণ বেড়েছে ৬৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ২০২১ সালজুড়ে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ১৩৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা হয়েছে। একই সময়ে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে গ্রামাঞ্চলেই এসেছে ১ হাজার ৬৬২ কোটি টাকার প্রবাসী আয়।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ