ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কার্ডে লেনদেনে রেকর্ড

বছরে কার্ড বেড়েছে ৩৯ লাখ ৮ হাজার ৫৬৮টি
প্রকাশনার সময়: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৪:৫১

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) থেকে বাঁচতে মানুষ ঘরবন্দি হয়। তখনই গুরুত্ব বাড়ে কার্ডে লেনদেন। ভাইরাসের প্রকোপ কমে এলেও কেনাকাটায় কার্ডের ব্যবহার কমেনি, উল্টো ব্যাপক হারে বেড়েছে। শুধু বাড়েইনি-যেকোনো সময়ের তুলনায় কার্ডে লেনদেন বেশি হয়েছে। গ্রাহকরা এটিএমে টাকা তোলা এবং ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে খরচ—দুটোই বেড়েছে।

ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় অর্থনীতির বিভিন্ন খাত ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। সব খাতেই কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। তাই মানুষ খরচও বেশি করছে। এখনো দেশের বড় অংশের মানুষের ব্যক্তিগত লেনদেন নগদ টাকায় হচ্ছে। পাশাপাশি কার্ডের মাধ্যমেও প্রতি মাসে প্রায় ২৫ থেকে ২৬ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়, যা আর্থিক খাতের মোট লেনদেনের তুলনায় হয়তো সামান্যই। তবে দিনকে দিন কার্ডে লেনদেন বাড়ছে। বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, আগে অনেক গ্রাহক কার্ড নিতে চাইতেন না। এখন অনেকে কার্ডে ঝুঁকছেন। সম্প্রতি কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার কারণে ই-কমার্সে লেনদেন অনেক কমে গেছে। সেটি না হলে কার্ডে লেনদেন আরও বাড়ত।

করোনার সময়ে প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকদের উৎসাহিত করেছে ব্যাংকগুলো। রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি খাতের সব ব্যাংকই এখন প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। এসব সেবায় যোগ হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম, অনলাইন সিআইবি রিপোর্ট, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, প্রি-পেইড কার্ড, ভিসা কার্ড এবং বিভিন্ন প্রযুক্তির এটিএম। এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে টাকা উত্তোলন ও জমা, রেমিট্যান্স বিতরণ, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ ও বেতন-ভাতা প্রদান সবই সম্ভব।

এখন কার্ডে যে লেনদেন হচ্ছে, তার প্রায় পুরোটাই হচ্ছে দেশে। করোনা আসার আগে কার্ডের ব্যয়ের একটি বড় অংশ হতো দেশের বাইরে। তবে করোনায় বিদেশে ভ্রমণ কমে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেনও বেশ কমে গেছে।

২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে ডেবিট কার্ডের সংখ্যা ছিল ২ কোটি ১৩ লাখ ৭৭ হাজার ২৯১টি। ২০২১ সাল শেষে সেটা বেড়ে হয়েছে ২ কোটি ৫২ লাখ ৮৫ হাজার ৮৫৯টি। এক বছরের ব্যবধানে কার্ড বেড়েছে ৩৯ লাখ ৮ হাজার ৫৬৮টি। কার্ড বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনও। ডিসেম্বরে ডেবিট কার্ডে লেনদেন হয়েছে ২৪ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। এর আগে কখনো ডেবিট কার্ডে এক মাসে এত লেনদেন হয়নি।

২০২১ সালের পুরোটা সময়ে ডেবিট কার্ডের সংখ্যা ও লেনদেন বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, জানুয়ারিতে কার্ড ছিল ২ কোটি ১৬ লাখ ৭০ হাজার ৫২৬টি। এসব কার্ডে লেনদেনের পরিমাণ ১৮ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। গত মার্চ শেষে কার্ডের সংখ্যা বেড়ে হয় ২ কোটি ২৪ লাখ ৪৯ হাজার ৮৪৭টি। লেনদেনও বেড়ে হয় ২২ হাজার কোটি টাকা।

এর তিন মাস পর জুন শেষে ডেবিট কার্ড ব্যবহার আরো বাড়ে। এ সময় কার্ড ছিল ২ কোটি ৩৩ লাখ ৬৩ হাজার ৭০২টি। এসব কার্ডে ২১ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়। সেপ্টেম্বর শেষে কার্ডের লেনদেন ও ব্যবহার আরো বেড়ে যায়। এ সময় কার্ডের সংখ্যা দাঁড়ায় ২ কোটি ৪২ লাখ ২৫ হাজার ১৬৪টিতে, লেনদেন হয় ২২ হাজার ৫২২ কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে কার্ড আরো বেড়ে ২ কোটি ৫২ লাখ ৮৫ হাজার ৮৫৯টিতে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হয়েছে ২৪ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা।

ডেবিট কার্ডের লেনদেন যে হারে বেড়েছে সে হারে ক্রেডিট কার্ডের লেনদেন বাড়েনি। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা ছিল ১৬ লাখ ৭৬ হাজার ৮১৬টি। ২০২১ সাল শেষে সেটা বেড়ে ১৮ লাখ ৭৪ হাজার ৩৬২টিতে দাঁড়িয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে কার্ড বেড়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫৪৬টি।

ডিসেম্বরে ক্রেডিট কার্ডে রেকর্ড ২ হাজার ২২৯ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এর আগে কখনো ক্রেডিট কার্ডে এক মাসে এত লেনদেন হয়নি। নভেম্বরে লেনদেন হয় ২ হাজার ৯২ কোটি টাকা। তার আগে লেনদেন কখনো দুই হাজার কোটি টাকার ঘর অতিক্রম করেনি।

ক্রেডিট কার্ডের বিল সময়মতো দিতে না পারলে জরিমানার পাশাপাশি অনেক বেশি হারে সুদ দিতে হয়। ব্যাংকে সুদহার ৯ শতাংশ হলেও কার্ডের সুদ ২০ শতাংশ পর্যন্ত আছে। ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্য সব ঋণে সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মানে ক্রেডিট কার্ডে সর্বোচ্চ সুদ হওয়ার কথা ১৪ শতাংশ। তবে এই নির্দেশনাও অমান্য করে অনেক ব্যাংকই বিভিন্নভাবে এর চেয়ে বেশি টাকা আদায় করত।

ফলে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে কোনো ব্যাংক ক্রেডিট কার্ডে ২০ শতাংশের বেশি সুদ নিতে পারবে না বলে নতুন নির্দেশনা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি ওই বছর ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়।

এক বছরে প্রিপেইড কার্ড ব্যবহারকারী বেড়েছে ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৭১৭ জন। ২০২১ সাল পর্যন্ত দেশে প্রি-পেইড কার্ডের গ্রাহক ১১ লাখ ৫৪ হাজার ৯০১ জন। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে যা ছিল ৬ লাখ ৯৯ হাজার ১৮৪ জন। এ সময়ে এসব কার্ডে লেনদেন হয়েছে ২১৫ কোটি টাকা।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ