ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাগামহীন ছোলা ডাল তেলের দাম

প্রকাশনার সময়: ২২ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:৫৬

সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে আবারো আরেক দফা বেড়েছে সবজির দাম। তবে কমেছে ব্রয়লার মুরগি, টমেটো ও আলুর দাম। আবার প্রতিবছরের মতো এবারো রমজান ঘিরে একাধিক সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কারসাজি করে তারা রোজা শুরুর দুই মাস আগেই পরিকল্পিতভাবে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

শুক্রবার রাজধানীর বাজারে বেড়েছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা ও বেগুনের দাম। প্রতি পিস ফুলকপি ৪০-৫০, বাঁধাকপি ৩০-৩৫ টাকা, শসা কেজি ৩৫-৪০ টাকা এবং লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকায়। তবে টমেটো ও আলুর দাম কমেছে। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকায়। ৫ টাকা কমে আলু বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি কেজি শিম ৬০, পেঁপে ৩০, করলা ৬০, মুলা ২০, কাঁচামরিচ ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাল কুমড়া প্রতি পিস ৩৫-৪০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে আরো কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। কেজিতে ১০ টাকা কমে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৭০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, লেয়ার ২২০ থেকে ২২৫, দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা কেজি। এদিকে, বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা, আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৭০ টাকা, আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা, দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা, শুকনো মরিচ ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি করতে দেখা গেছে।

অপরদিকে, রাজধানীর খুচরা বাজারের পণ্যের দাম বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গেল দুই সপ্তাহে রোজায় অতিব্যবহূত পণ্য-ছোলা, মসুর ডাল, মুগডাল ও ভোজ্যতেলের দাম দ্বিতীয় দফায় বাড়ানো হয়েছে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে ভোজ্যতেলের দাম না বাড়াতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। ফলে রোজা শুরুর আগেই পণ্য কিনতে ভোক্তাদের রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠছে। তবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার জানান, ইতোমধ্যে বাজার তদারকি শুরু হয়েছে। অনিয়ম পেলে ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে।

রাজধানীর খুচরা বাজারে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন গত বৃহস্পতিবার বিক্রি হয়েছে ১৪৫-১৪৮ টাকা। যা সাত দিন আগে ১৪০-১৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন এক সপ্তাহ আগে সর্বনিম্ন ৭০০ টাকায় পাওয়া গেলেও এখন ৭১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সর্বোচ্চ বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা।

এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, বরাবর দেখা গেছে ব্যবসায়ীরা রমজান আসার আগেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে মনিটরিংও আগেভাগেই করতে হবে। কঠোর তদারকির মাধ্যমে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক বছর ধরে রোজা শুরুর দুই মাস আগেই অসাধুরা ভোক্তার পকেট কাটা শুরু করে। পরে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় বাজার নিয়ন্ত্রণে তদারকি কার্যক্রম জোরদার করলে অসাধুরা পণ্যের দাম কিছুটা কমায়। তবে কারসাজি করে যে টাকা বাড়ানো হয়, এর চার ভাগের এক ভাগ কমানো হয়। এতে সরকার ক্রেডিট নিলেও এই বাড়ানো-কমানো খেলায় অসাধুরাই জয়ী হয়। তাই এখন থেকেই বাজার তদারকি করে দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। পাশাপাশি অনিয়মের সঙ্গে যুক্তদের চিহ্নিত হরে আইনের আওতায় আনতে হবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ও অধিদফতরের মহাপরিচালকের দিকনির্দেশনায় রমজান উপলক্ষে বাজার তদারকি শুরু হয়েছে। কোনো ধরনের অনিয়ম পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে কোন পণ্য কী দামে কেনা ও বিক্রি কত, তা ইতোমধ্যে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এবার রমজান ঘিরে কারসাজি করলে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। দরকার হলে প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেয়া হবে। এ ছাড়া জরিমানাসহ জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। কোনো ছাড় দেয়া হবে না। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার মূল্য তালিকায় এসব পণ্যের দাম বাড়ার চিত্র দেখা গেছে।

টিসিবি বলছে, রাজধানীর খুচরা বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি ছোলার দাম বেড়েছে ৫ টাকা। মুগডাল ও মসুর ডাল কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া ভোজ্যতেলের মধ্যে খোলা সয়াবিন প্রতিলিটারে ৩-৫ টাকা বেড়েছে। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। সঙ্গে খোলা পাম অয়েল লিটারে ২ টাকা বেড়েছে।

এদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে নিষেধ করলেও এই নির্দেশ তারা মানছে না। ব্যবসায়ীদের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের পর প্রথমবার ৬ জানুয়ারির বৈঠকে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে না বলে সিদ্ধান্ত দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তারপরও সে সময় রাজধানীর খুচরা বাজারে একদিনের ব্যবধানে লিটারে ২ থেকে ৫ টাকা বাড়তি দরে ভোজ্যতেল বিক্রি হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৯ জানুয়ারি বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, আগামী ১৫ দিনে তেলের দাম বাড়ানো যাবে না। কিন্তু একদিনের ব্যবধানে গত বৃহস্পতিবার লিটারে সর্বোচ্চ ৫ টাকা বেড়েছে ভোজ্যতেলে। ফলে ক্রেতাকে বাড়তি দরেই তেল কিনতে হচ্ছে।

রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোজা যত ঘনিয়ে আসছে অসাধুরা ছোলার দাম বাড়াচ্ছে। ১০ জানুয়ারি প্রথম দফায় কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ছোলা ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়। এরপর বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফায় পণ্যটির দাম বাড়ানো হয়েছে। ফলে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ছোলা এখন ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার প্রতিকেজি মুগডাল বিক্রি হয়েছে ১২০-১৪০ টাকা। যা সাত দিন আগে ১১৫-১৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মসুর ডালের মধ্যে প্রতিকেজি মাঝারি আকারের দানা বিক্রি হয়েছে ১০৫-১১০ টাকায়, যা সাত দিন আগে ছিল ১০০-১০৫ টাকা। বড় দানার প্রতিকেজি মসুর ডাল ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক মাস আগে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ছোট দানার মসুর ডাল প্রতিকেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক মাস আগে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

রাজধানীর নয়াবাজারে পণ্য কিনতে আসা মো. শামীম বলেন, করোনা পরিস্থিতির আরো অবনতি হচ্ছে। এর মধ্যে চাল থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে লক্ষ করছি অসাধু বিক্রেতারা রোজা শুরুর দুই থেকে তিন মাস আগ থেকেই পণ্যের দাম বাড়াতে থাকে। এবারো সেটাই করছে। যারা বাজার তদারকির সঙ্গে যুক্ত, তারা এখনো নির্বিকার। কিছুই করছে না। তারা ভালোভাবে তদারকি করলে প্রতিবছর ক্রেতাদের এমন ভোগান্তিতে পড়তে হয় না।

নয়া শতাব্দী/এস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ