করোনা মহামারিতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়ায়, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা এখনো ভয়াবহ অবস্থা পার করছেন। তাই ঋণ শ্রেণীকরণ (খেলাপি) সুবিধা ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশনের (বিটিএমএ)
মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী খোকন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বরাবর এ চিঠি পাঠিয়েছেন।
মোহাম্মদ আলী খোকন চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, চলমান কভিড পরিস্থিতিতে ঋণ বিরূপমানে শ্রেণীকরণ প্রক্রিয়া প্রদেয় ঋণের ২৫ শতাংশ পরিশোধের শর্ত শিথিলপূর্বক ৩০ জুন ২০২০ পর্যন্ত স্থগিত চেয়ে চিঠি দিয়েছেন।
এতে তিনি আরো উল্লেখ করেন, কভিড ১৯ পরিস্থিতিতে বিবেচনা ও তা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত বিভিন্ন ধরণের স্টিমুলাস প্যাকেজের বাস্তবায়ন ও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বিদ্যমান কভিড মোকাবেলায় সময়োপযোগী আর্থিক ও নীতি সহায়ক নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য আমরা আপনাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গৃহীত কতিপয় নীতি সহায়তায় মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য নীতি হচ্ছে বিআরপিডি সার্কুলার নম্বর ৫০ তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০২১ ছিল যার মাধ্যমে ঋণ-বিনিযোগ গ্রহীতা কর্তৃক প্রদেয় কিস্তি ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ শেষ কর্ম দিবসের পরিশোধের সময় সীমা নির্ধারণ, ব্যর্থতায় ঋণ বিরূপমান শ্রেণীকরণ সুবিধা বাতিল।
তিনি আরো বলেন, এ প্রসঙ্গে আপনাকে অবহিত করছি যে বিদ্যমান কভিড পরিস্থিতির সাথে ভীতির কারণ হিসেবে আরেকটি ধরন যোগ হয়েছে তা হলো ওমিক্রন। ইতোমধ্যে ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে কভিডের সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে কোন কোন দেশে লকডাউন কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপিত হয়েছে। ফলে উক্ত দেশগুলির অর্থনীতি পাশাপাশি আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রভাব পড়েছে। তাই বিআরপিডি সার্কুলার ৫০ এর শর্ত অনুযায়ী অনেক শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তাদের ঋণের কিস্তি সময়মত পরিশোধ করতে পারছে না মর্মে সমিতি অবহিত হয়েছে।
আমরা মনে করি উক্ত সার্কুলার অনুযায়ী প্রদেয় কিস্তি সমুহের ২৫ শতাংশ পরিশোধের শর্ত শিথিল করে ঋণ শ্রেণীকরণ সুবিধার মেয়াদ পুনরায় বৃদ্ধি করা না হলে গ্রাহকের পাশাপাশি ব্যাংকগুলিও খেলাপিতে পরিণত হবে, যা সমগ্র অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোপূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রাজনৈতিক অস্থিরতাজনিত অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে কৃষিসহ শিল্পখাতের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিরূপ প্রভাব প্রতিরোধেরকল্পে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডাউন পেমেন্ট শিথিল করে বা ডাউন পেমেন্ট ব্যতিরেকে গ্রাহকের ঋণ, বিনিয়োগ পূনঃতফসিলকরণে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে যা প্রশংসনীয়। তাই বর্তমান কভিডজনিত বিরূপ পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক আরো সক্রিয় সগযোগীতা নিয়ে এগিয়ে আসবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
উল্লেখিত প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বেসরকারি খাতে ঋণ-বিনিয়োগ প্রবাহের গতিধারা স্বাভাবিক রাখার মাধ্যমে কাঙ্খিত বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে বিআরপিডি সার্কুলার-১৯/২০২১, বিআরপিডি সার্কুলার-৫০/২০২১ ও ডিএফআইএম সার্কুলার-২৮/২০২১ অনুযায়ী প্রদেয় কিস্তিসমূহের যথাক্রমে ন্যুনতম ২৫ শতাংশ ও ৫০ শতাংশ পরিশোধের শর্ত শিথিল করে নিম্মোক্ত প্রস্তাবনা বিবেচনায় ঋণ বিরূপমানে শ্রেণীকরণ সুবিধা পুনরায় বৃদ্ধিপূর্বক ৩০ জুন ২০২২ পর্যন্ত বর্ধিত করার জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি।
১. ক্ষুদ্র মাঝারি ও অন্যান্য শিল্প এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ১০ কোটি টাকা বা তার কম হলে পরিশোধের ক্ষেত্রে প্রদেয় কিস্তি সমূহ কোন প্রকার ডাউন পেমেন্ট না দিলেও মেয়াদোত্তীর্ণ হিসাবে শ্রেণীকরণ না করে ঋণ হিসাবটি পূনঃ তফসিলকৃত বলে গণ্য করা।
২. ঋণ-বিনিযোগ পরিশোধের ক্ষেত্রে ১০ কোটি টাকার অধিক কিন্তু ৫০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বা প্রদেয় কিস্তিসমূহের ন্যূনতম ২ শতাংশ পরিশোধ করা হলে উক্ত ঋণ-বিনিয়োগ বিরূপমানে শ্রেনিকরণ না করা।
৩. ঋণ-বিনিযোগ পরিশোধের ক্ষেত্রে ৫০০ কোটি অধিক প্রকল্প ঋণ গ্রহণকারী শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রদেয় কিস্তিসমূহের ন্যুনতম ১ শতাংশ পরিশোধ করা হলে উক্ত-বিনিয়োগ বিরূপমানে শ্রেনীকরণ না করা।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ