ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জুতা শিল্প বাঁচাতে নতুন উদ্যোগ

প্রকাশনার সময়: ২৩ ডিসেম্বর ২০২১, ০৫:৫৮
সংগৃহীত ছবি

দেশে পোশাক শিল্পের পরই রফতানিতে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে দেখা দিয়েছিল জুতা শিল্প। ধারাবাহিকভাবে বিগত বছরগুলোতে ভালো প্রবৃদ্ধি পাচ্ছিল পণ্যটি। কিন্তু সেই ধারাবাহিকতায় ভাটা পড়ে গত বছর। চামড়াজাত পণ্যটির উৎপাদন ও রফতানি আগে থেকেই কমার দিকেই ছিল, করোনা আসাতে তা আরো কমে যায়।

গত এক বছরের ব্যবধানে জুতার রফতানি প্রায় ১৪ শতাংশ কমেছে। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক মোট উৎপাদনে বাংলাদেশের অংশ ১ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে কমে ১ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। এতে বাংলাদেশ শীর্ষ ১০ উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় ষষ্ঠ থেকে অষ্টম অবস্থানে নেমে এসেছে ।

এই খাতকে বাঁচাতে উৎপাদন ও রফতানি বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাই শতভাগ রফতানিমুখী জুতা ও চামড়া শিল্পে শুল্কমুক্তের নতুন সুবিধা যোগ হয়েছে। এখন থেকে এই ধরনের শিল্পে একই মালিকানাধীন বা একই প্রতিষ্ঠানের আওতায় একাধিক স্থানে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন স্তরের উৎপাদন ইউনিটের কার্যক্রমকে মূল বন্ডেড প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করে বন্ড সুবিধা পাওয়া যাবে। লেদার অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি) ও বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্প্রতি এ বিষয়ে বিশেষ আদেশ জারি করেছে।

নিট, ওভেন, ডাইং ও প্রিন্টিং, টাওয়েল, লিলেন, হোম টেক্সটাইল, লেদার ও ফুটওয়্যার ট্যানারি খাতের উপযুক্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ সুবিধা প্রযোজ্য হবে বলে জানা গেছে। এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এনবিআর সূত্র জানায়, বিভিন্ন সংগঠনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ নভেম্বর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শতভাগ রফতানিমুখী বন্ডের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে একই মালিকানাধীন বা একই প্রতিষ্ঠানের আওতায় একাধিক স্থানে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন স্তরের উৎপাদন ইউনিটের কার্যক্রমকে মূল বন্ডেড প্রতিষ্ঠানের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

লেদার অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি) ও বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর পর্যালোচনা শেষে ২০০৮ সালের ১০ জুন জারি করা সাধারণ আদেশ অধিকতর সংশোধন করে বন্ডেড সুবিধা দেয়া হয়েছে। এ সুবিধা একই বন্ড কমিশনারেটের আওতায় যেসব এলাকায় বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিটিএলএমইএ, বিটিএমএ, এলএফএমইএবি ও বিটিএভুক্ত প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালু রয়েছে ওই সব এলাকায় দূরত্ব নির্বিশেষে মূল প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কনটিনিউওয়াস বন্ড সুবিধা প্রদান করা যাবে।

লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বে জুতার বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮তম। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের এ খাতে অবদান মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ। বিশ্বে জুতার মোট বাজারের ৫৫ শতাংশ চীনের দখলে। ভারত ও ভিয়েতনামেরও ভালো অবস্থান আছে। করোনার পর তৈরি পোশাকের মতো চামড়া খাতের রফতানিতেও নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। প্রধান রফতানিকারক দেশ চীনের কিছু অর্ডার বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে। ভিয়েতনাম থেকেও অর্ডার আসছে। এসব সুযোগ ভালোমতো কাজে লাগাতে পারলে ভবিষ্যতে এ খাতের রফতানি আরো বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বৈশ্বিকভাবে জুতা শিল্পের প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলারের বাজার সংকুচিত হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে ধারণা খাত সংশ্লিষ্টদের। বাংলাদেশের তুলনামূলক কম উৎপাদন খরচের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। বেশিরভাগ বড় কারখানাই পূর্ণ উৎপাদন সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারছে না। তবে ইটিপির সমাধান হলে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ সব বাজারেই রফতানি বাড়ানো সম্ভব। আমাদের বিদেশি মিশনের কমার্শিয়াল উইংগুলো বাণিজ্য বাড়াতে ভূমিকা নিলে রফতানি আরো বৃদ্ধি পাবে। শুধু রফতানি নয়, ২০১৯ সালে জুতার বৈশ্বিক উৎপাদনেও বাংলাদেশের অংশ অনেক কমেছে। ওয়ার্ল্ড ফুটওয়্যার ইয়ারবুক-২০২০-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ প্রায় ৪৬ কোটি ১০ লাখ জোড়া জুতা উৎপাদন করেছিল। কিন্তু গত এক বছরের ব্যবধানে ২০১৯ সালে এ সংখ্যা কমে ৪০ কোটি ৭০ লাখ জোড়ায় নেমে এসেছে।

এই ব্যাপারে রফতানিকারকরা জানান, ফুটওয়্যার রফতানিতে প্রধান বাধা লিড টাইম অনেক বেশি হওয়া। সেই সাথে আমাদের দেশে ফুটওয়্যারের ক্রয়াদেশ আসলে সিংহভাগ ক্ষেত্রেই জাহাজীকরণ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক বিলম্বিত হয়। কিন্তু গ্লোবাল ভ্যালু চেইনের অংশ হতে হলে সঠিক সময়ে রফতানি নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে পরবর্তী সময়ে রফতানি পাওয়া বেশ কষ্টকর হয়। এক্ষেত্রে ভিয়েতনামসহ অনেক দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে চীনের শ্রম ব্যয়ের কারণে অনেক ব্র্যান্ড চীনে উৎপাদন থেকে সরে আসছে। আর সেই স্থানটি বাংলাদেশ নিতে পারলে দেশের জুতা শিল্প আরো সমৃদ্ধ হতে পারে।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ