ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কালোটাকা সাদা করার সুযোগে সাড়া নেই

প্রকাশনার সময়: ২৩ নভেম্বর ২০২১, ০৬:৪৭

এবারো কালোটাকা সাদা করার সুযোগ মিলেছে। তবে এতে তেমন সাড়া মিলেনি। অপ্রদর্শিত অর্থকে অর্থনীতির মূল ধারায় যোগ করতে প্রতিবছরই এই সুযোগ রাখা হয়। এবারো এই ব্যতিক্রম ছিল না। চলতি অর্থবছরে যে সুযোগ দিয়েছিল সরকার, তাতে দেখা গেছে, অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মাত্র ১২২ জন টাকা বৈধ করেছেন। তারা মাত্র ১৫ কোটি টাকা সাদা করেছেন। এর বিপরীতে সরকার কর পেয়েছে ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

অর্থনীতিবিদ ও রাজস্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের কঠোর শর্তের কারণে সাড়া মিলছে না তেমন। উচ্চ হারে কর আরোপের কারণে এ সুযোগ নেয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না করদাতারা। এবার যে কয়েকটি খাতে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়, তার অন্যতম হচ্ছে শেয়ারবাজার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে শেয়ারবাজারে মাত্র একজন ৩০ লাখ টাকা সাদা করেছেন। এর বিনিময়ে সরকারি কোষাগারে কর হিসেবে জমা হয়েছে ১ লাখ টাকা। অর্থনীতিবিদরা বলেন, বিদ্যমান নিয়মে কালোটাকা সাদা করতে হলে একজন করদাতাকে প্রায় ২৭ শতাংশ পর্যন্ত কর পরিশোধ করতে হবে। এই হার অত্যন্ত বেশি। এত বেশি উচ্চ হারে কর দিয়ে টাকা বৈধ করতে অনেকেই নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। ফলে প্রত্যাশিত সাড়া মিলছে না। চলতি অর্থবছরের বাজেটে শেয়ারবাজারসহ বিভিন্ন খাতে প্রযোজ্য কর হার এবং তার সঙ্গে ‘অতিরিক্ত’ ৫ শতাংশ জরিমানা দিয়ে টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়। কেউ এই শর্ত মেনে সরকারের দেয়া এ সুযোগ গ্রহণ করলে এনবিআরসহ অন্য কোনো গোয়েন্দা সংস্থা তার আয়ের উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করবে না।

এর আগের অর্থবছরে শেয়ারবাজার, নগদ টাকা, ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা, সঞ্চয়পত্র, জমি ক্রয়ে শুধু ১০ শতাংশ কর দিয়ে ঢালাওভাবে কালোটাকা বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। অর্থাৎ নতুন নিয়মে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বহাল রাখা হলো ঠিকই, কিন্তু শর্ত কঠোর করা হলো।

তবে শেয়ারবাজারে এই সুযোগ নিয়ে কেউ এক বছর পর্যন্ত ‘লকইন’ না রাখলে তাকে ‘অতিরিক্ত’ ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে কালোটাকা সাদা করতে হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ঢালাওভাবে সুযোগ দেয়া ঠিক না। এটা করা হলে যারা নিয়মিত কিংবা সৎ করদাতা, তাদের প্রতি অবিচার করা হয়। সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে জরিমানার বিধান রেখে সুযোগ দেয়া হয়।’ এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, আগের বছর প্রায় ১২ হাজার জন সাদা করেছেন ২০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। ঘোষিত টাকা থেকে সরকার কর পেয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা।

ঢালাওভাবে সুযোগ দেয়ার পরও গতবার তেমন সাড়া মেলেনি শেয়ারবাজারে। মাত্র ২৮৬ জন সাদা করেছিলেন গতবার। আর সাদা হয়েছিল ৪০০ কোটি টাকা। তবে করোনা মহামারির কারণে বেসরকারি বিনিয়োগ চাঙা করাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবারের বাজেটে। বলা হয়েছে, উৎপাদনমুখী যেকোনো শিল্প খাতে নতুন করে বিনিয়োগ করলে ১০ শতাংশ কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে কালোটাকা সাদা করা যাবে।

এনবিআরের সাবেক সদস্য আমিনুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান আইনে ভলান্টারি ডিসক্লোজার বা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে কালোটাকা বৈধ করার যে সুযোগ আছে, এটি প্রায় অকার্যকর। নতুন নিয়মে যে সুযোগ দেয়া হয়েছে, তা একই ধরনের। এতে তেমন সাড়া মিলবে না। তবে উৎপাদনমুখী খাতে নতুন করে বিনিয়োগের যে সুযোগ দেয়া হয়েছে, এটি ভালো উদ্যোগ। এর ফলে অনেকেই বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন।’

এবারের বাজেটের বাইরে আরও তিনটি খাতে আগে থেকেই কালোটাকা বৈধ করার সুযোগ বহাল রয়েছে: ১০ শতাংশ কর দিয়ে হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ করলে আয়ের উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করা হবে না, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে বিনিয়োগে একই সুবিধা দেয়া রয়েছে। এ ছাড়া সিটি ও পৌর করপোরেশনের মধ্যে এলাকাভেদে ফ্ল্যাটে প্রতি বর্গমিটারে নির্ধারিত কর দিয়ে টাকা বৈধ করা যায়। স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে জরিমানা দিয়ে টাকা সাদা করার স্থায়ী সুযোগ অনেক আগে থেকে দেয়া আছে বাজেটে।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ