চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের দেশে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে। প্রথম চার মাসে (জুলাই- অক্টোবর) কৃষি ও পল্লী ঋণ খাতে ৭ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ব্যাংকগুলো। এটি লক্ষ্যমাত্রার ২৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এবার ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১৯ দশমিক ২৩ শতাংশ বা এক হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে কৃষি খাতে ব্যাংকগুলোর ২৮ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে কৃষি ও পল্লী ঋণ খাতে ছয় হাজার ৬২৯ কোটি টাকা বিতরণ করে ব্যাংকগুলো, যা ব্যাংকগুলোর বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ২৫ দশমিক ২২ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে কৃষিঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও তৃতীয় মাস থেকে পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন ঘটছে। তা অক্টোবরেও অব্যাহত ছিল।
কৃষি খাতে অক্টোবরে দুই হাজার ৬৯৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ হয়েছে। এর আগের মাসে ঋণ বিতরণ হয় দুই হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্য দিয়ে সামগ্রিকভাবে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা দেয়।
গত আগস্টে এক হাজার ৭৩২ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করে ব্যাংকগুলো। জুলাইয়ে বিতরণ করা কৃষিঋণের পরিমাণ ছিল ৯৪২ কোটি টাকা। সব মিলে জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে কৃষি ও পল্লী ঋণ খাতে পাঁচ হাজার ২১০ কোটি টাকা বিতরণ করে ব্যাংকগুলো, যা লক্ষ্যমাত্রার ১৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
এদিকে ঋণ বিতরণ বাড়লেও চার মাসে কৃষিঋণ আদায় কমেছে। এই সময়কালে আদায় হয়েছে সাত হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে কৃষিঋণ আদায় হয়েছিল ৮ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা।
২০২০-২১ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার ৯৭ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে সক্ষম হয় ব্যাংকগুলো। ওই অর্থবছরে কৃষি ও পল্লী খাতে ব্যাংকগুলোর ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ঋণ দেয়া হয় ২৫ হাজার ৫১১ কোটি টাকা।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবারো বাড়তে থাকায় গত এপ্রিলে কৃষি খাতের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ তহবিল থেকে গত ৩০ জুন পর্যন্ত চার হাজার ২৯৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়।
এছাড়া করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর কৃষি খাতের জন্য দ্বিতীয় মেয়াদে প্রণোদনার ঋণ চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার কৃষি খাতের জন্য আরো তিন হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই তহবিল থেকে ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও বর্গাচাষিদের শস্য ও ফসল চাষের জন্য এককভাবে জামানত ছাড়াই দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। ঋণের সুদের হার আগের মতো ৪ শতাংশই থাকছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের এই তহবিলের অর্থও বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব উৎস থেকে সরবরাহ করবে। তহবিলের মেয়াদ আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত।
এদিকে সেবা রফতানির আয় চার মাসের মধ্যে দেশে আনার ব্যাপারে একটি নির্দেশনা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে রফতানি আয় বাবদ অর্থ দিয়ে বিদেশে মূলধনী বিনিয়োগ বা পোর্টফোলিও বিনিয়োগ, স্থায়ী সম্পদ বা ভার্চুয়াল সম্পদ ক্রয় করা যাবে না।
সেবা রফতানি আয় দেশে আনার সুবিধার্থে রফতানিকারক দেশের বাইরে শুধু ন্যাশনাল অ্যাকাউন্ট বা মার্চেন্ট হিসাব পরিচালনা করতে পারবে। এ হিসাবের বাইরে ক্রিপ্টোকারেন্সি বা অন্য মুদ্রায় ভিন্ন হিসাব দেশের বাইরে খোলা যাবে না। এর মাধ্যমে রফতানি আয় চার মাসের মধ্যে দেশে আনার বাধ্যবাধকতার সেবা রফতানির ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, রফতানি আয় বাবদ অর্থ দিয়ে দেশের বাইরে মূলধনীয় বিনিয়োগ, পোর্টফোলিও বিনিয়োগ বা স্থায়ী সম্পদ কিনলে তা বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনের লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হবে।
নয়া শতাব্দী/এমআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ