ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘তলাবিহীন ঝুঁড়ি’ থেকে ৪০৯ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি

প্রকাশনার সময়: ০৩ নভেম্বর ২০২১, ০৪:১৮
ফাইল ছবি

১৯৭১ সালে জন্ম নেয়া বাংলাদেশ পরিচিত পায় ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশ হিসেবে। অতিরিক্ত জনসংখ্যা, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অপুষ্টির সঙ্গে সম্পদের অপ্রতুলতা ভোগায় দেশটিকে। এসব দেখে মার্কিন মুলুকের প্রেসিডেন্ট হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুঁড়ি’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের মাথায় এসে দেশটিই এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠে এসেছে। গত অর্থবছরে জিডিপি হিসাব করে এর আকার দাঁড়িয়েছে ৪০৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশের মোট অর্থনীতির পরিমাণ। ১৯৭২-৭৩ সালে যার পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৩ কোটি ডলার। তবে নতুন করে ভিত্তি বছর নির্ধারণ করায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন ভিত্তি বছর আরো আগে ধরা হলে এই পরিমাণ বাড়ত। দেরিতে হলেও ভিত্তি বছর নেয়ায় এই হিসাব সহজ হয়েছে বলে মত তাদের।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০১৫-১৬ অর্থবছরকে নতুন ভিত্তি বছর নির্ধারণ করায় সাম্প্রতিক বছরগুলোর প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা কমে গেলেও সার্বিক বিবেচনায় অর্থনীতির আকার বেড়েছে। উদাহরণ হিসেবে, ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরকে ভিত্তি ধরে নিয়ে বাংলাদেশের মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ২০১৮-১৯ অর্থবছরে নতুন রেকর্ড গড়ে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ হয়েছিল। তবে ভিত্তি বছর হিসেবে ২০১৫-১৬ নির্ধারণ করায় এই হার কমে ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ হয়েছে।

ভিত্তি বছর হচ্ছে একটি মানদ- যার প্রেক্ষাপটে একটি দেশের উৎপাদন, সঞ্চয় ও মূলধনের মোট পরিমাণের মতো উন্নয়ন সূচকগুলোর প্রবৃদ্ধি হিসাব করা হয়।

নতুন ভিত্তি বছর অনুযায়ী, বর্তমান মূল্য বিবেচনায় ২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল্যমান ৩৪ হাজার ৮৪০ বিলিয়ন টাকা। এটি আগের ভিত্তি বছরের হিসাবে পাওয়া ৩০ হাজার ১১১ বিলিয়নের চেয়ে ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। বিবিএস এর একটি নথি অনুযায়ী, স্থিরমূল্যে নতুন ভিত্তি বছর অনুযায়ী, ২০২১ অর্থবছরে অর্থনীতির আকার ২৭ হাজার ৯৩৯ বিলিয়ন টাকা। আগের হিসাবে এই আকার ছিল ১২ হাজার ৭২ বিলিয়ন টাকা।

গত অর্থবছরে জিডিপির আকার দাঁড়ায় ৪০৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এক্ষেত্রে বিনিময় মূল্য হিসেবে ১ ডলারের বিপরীতে ৮৫ টাকা ধরা হয়েছে। নতুন হিসাবে ২০২১ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ২২৭ ডলার থেকে বেড়ে ২ হাজার ৫৫৪ ডলার হয়েছে।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম জানান, আরো আগেই নতুন ভিত্তি বছর নির্ধারণ করা উচিত ছিল। যদিও নতুন ভিত্তি বছর নেয়ায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে গেছে, তবুও এটি অর্থনীতির বাস্তব চিত্র প্রকাশ করছে। তিনি বলেন, বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে পারলে তা সরকারকে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নিতে আরো সহায়তা করবে। বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক শীর্ষ অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনও নতুন ভিত্তি বছর নির্বাচনের বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, জিডিপি ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে সময় মতো সংশোধন করা হলে তা জাতীয় সূচকের পূর্বাভাসের গ্রহণযোগ্যতা এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করার ক্ষেত্রে উপযোগিতা নিশ্চিত করে।

নতুন হিসাব চূড়ান্ত হলে জাতীয় অ্যাকাউন্টের ভিত্তি বছরের সাম্প্রতিকতা বিবেচনায় বাংলাদেশ অন্য সকল সার্কভুক্ত দেশের চেয়ে এগিয়ে থাকবে। এক্ষেত্রে শুধু মালদ্বীপ (২০১৪) ও ভারত (২০১১-১২) কাছাকাছি আছে। পাকিস্তান (২০০৫-০৬) এবং শ্রীলঙ্কা (২০১০) যথেষ্ট পিছিয়ে আছে।

তিনি আরো বলেন, তথ্যের উৎসের উন্নয়ন হলে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ব্যাপ্তি বাড়ে, কারণ নতুন মানদ- অর্থনীতিতে বর্ধনশীল শিল্পের অবদানের আরো সঠিক প্রতিফলন নিশ্চিত করে।

এর আগে ভিত্তি বছরের সর্বশেষ সংশোধন করা হয়েছিল ২০১৩ সালে। নতুন ভিত্তি বছরের প্রেক্ষাপটে কৃষি, শিল্প এবং সেবা খাতের সম্প্রসারণ ঘটেছে। নতুন ভিত্তি বছর অনুযায়ী, জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান হিসাব করার সময় ১৪৪ ধরনের শস্যের তথ্য আমলে নেয়া হয়েছে, যেটি আগের হিসাবে ১২৪ ছিল। বিবিএসের নথি অনুযায়ী, কৃষি খাতের মোট মূল্য সংযোজন (জিভিএ) বর্তমান মূল্যে বিগত অর্থবছরে ৪ হাজার ৬১ বিলিয়ন টাকা হয়েছে, যেটি আগের হিসাবে ৩ হাজার ৮৪৬ বিলিয়ন টাকা ছিল। শিল্প খাতে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি, নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, পল্লী বিদ্যুৎ কোম্পানি, খাদ্য সংরক্ষণের জন্য কোল্ড স্টোরেজ, রাজশাহী ওয়াসা ও জাহাজ ভাঙা শিল্পের তথ্য অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

নতুন ভিত্তি বছরের হিসাবে এই খাতের জিভিএ ২০২১ অর্থবছরে ১১ হাজার ৩৬২ বিলিয়ন টাকা হয়েছে, যেটি আগের হিসাবে ৮ হাজার ৯৪৪ বিলিয়ন টাকা ছিল। বিবিএস দেশে চালু হওয়া বিভিন্ন নতুন সেবার অবদান জানতেও সমীক্ষা পরিচালনা করেছে।

রাইড-শেয়ারিং সেবা, বেসরকারি মোটরযান, জাতীয় উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান, বেসরকারি নভো এয়ার ও ইউএস বাংলা, বেসরকারি হেলিকপ্টার সেবা, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি, চলচ্চিত্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান, সিনেমা হল, নতুন ব্যাংক, মোবাইল আর্থিক সেবা, এজেন্ট ব্যাংকিং এবং বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ