ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ঋণ সহজ করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

প্রকাশনার সময়: ৩০ অক্টোবর ২০২১, ০৫:১৮ | আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২১, ০৫:২১
সংগৃহীত ছবি

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, কৃষক ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। স্কিমটি বাস্তবায়নে আরও সহজ করে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে প্রান্তিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও কৃষক স্কিমের আওতায় শরীয়া ঋণ নীতিমালা অনুসরণ করে ঋণ পাবেন। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্ট এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন এ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পেশাজীবী, কৃষক ও প্রান্তিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে স্কিমের বাস্তবায়ন আরও সহজতর করা হয়েছে। স্কিমের জন্য পূর্বে জারি করা সব নির্দেশনা সমন্বিত করে এবং নতুন কিছু নির্দেশনা যোগ করা হয়েছে। স্কিম থেকে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান (এমএফআই) বা এনজিও মাধ্যমে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হবে। তিন বছর মেয়াদি এ ঋণের সুদহার হবে ৯ শতাংশ।

নতুন নির্দেশনার মধ্য রয়েছে, ইসলামী শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোর শরিয়া ঋণ নীতিমালা অনুসরণ করে এ স্কিমের আওতায় ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো (এমএফআই) এই তহবিল থেকে অর্থ নিয়ে উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে পারবে। এমএফআই প্রতিষ্ঠানগুলো স্কিমের আওতায় এতদিন তিনটি ব্যাংক থেকে অর্থ নিলেও এখন পাঁচটি ব্যাংক থেকে এ অর্থ নিতে পারবে। স্কিমের মেয়াদ হবে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। স্কিমের আওতায় অংশগ্রহণকারী ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদহার কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে এক শতাংশ সুদহার হলেও এখন বাংলাদেশ ব্যাংক পুনঃঅর্থায়নের বিপরীতে দশমিক পাঁচ শতাংশ সুদে ব্যাংকগুলোকে অর্থ দেবে। আর অর্থায়নকারী ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান বা এনজিওকে ৩ শতাংশ সুদহারে অর্থ দেবে, যা এর আগে ছিল ৩.৫ শতাংশ।

একক গ্রাহকের ক্ষেত্রে ঋণের পরিমাণ হবে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা এবং গ্রুপভিত্তিক ন্যূনতম পাঁচ জনের সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের এককভাবে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা এবং গ্রুপভিত্তিক অর্থায়নের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৬০ লাখ টাকা ঋণ দিতে পারবে। ন্যূনতম ৫ সদস্যবিশিষ্ট যৌথ প্রকল্পে ঋণ মিলবে সর্বোচ্চ ৬০ লাখ টাকা। এতদিন এ প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা এককভাবে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা এবং যৌথভাবে ৩০ লাখ টাকা ঋণ নিতে পারতেন।

তাছাড়া এতদিন এ তহবিল থেকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ দুই বছরের জন্য ঋণ দেওয়া হতো। এখন থেকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা এ তহবিল থেকে সর্বোচ্চ তিন বছরের জন্য ঋণ পাবেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এ তহবিল নেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলো সুদবাবদ খরচ করবে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। এতদিন ব্যাংকগুলোকে এ তহবিল থেকে পুনঃঅর্থায়ন করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ১ শতাংশ সুদ দিতে হতো।

অর্থাৎ ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো আগের থেকে কম খরচে এ ঋণ পাবেন। ফলে ঋণ বিতরণে ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের তহবিল খরচ কমবে। তফসিলি ব্যাংকগুলো এখন থেকে তাদের নিজস্ব নীতিমালায়ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পর্যায়ে সরাসরি ঋণ দিতে পারবে এবং এর বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রণোদণা তহবিল থেকে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা পাবে।

নতুন নীতিমালায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণসীমা বাড়ানো হলেও ক্ষুদ্রঋণের সর্বোচ্চ সীমা আগের মতোই রাখা হয়েছে। অর্থাৎ এ তহবিল থেকে ক্ষুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো একক গ্রাহকের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা এবং আয় উৎসারী কর্মকাণ্ডে অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের যৌথ প্রকল্পে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করতে পারবে।

এ প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের বিষয়ে আগের নীতিমালায় আলাদাভাবে কোনো নির্দেশনা দেওয়া ছিল না। এবারের নীতিমালা বলা হয়, ইসলামিক ব্যাংকগুলো শরিয়াহ নীতিমালা অনুসরণ করে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অনুকূলে বিনিয়োগ অনুমোদনের পর এ স্কিমের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থায়ন সুবিধা নিয়ে বিনিয়োগ প্রদান করতে পারবে।

এ ছাড়া অন্যান্য সব নির্দেশনা যেমন ব্যাংকের সঙ্গে অংশগ্রহণ চুক্তি, ব্যাংক র্কর্তৃক ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান নির্বাচন ও ঋণ বিনিয়োগ মঞ্জুরি প্রক্রিয়া, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) ভূমিকা, ঋণ আদায় ও ফোকাল পয়েন্ট নিয়োগের নির্দেশনা আগের মতোই রাখা হয়েছে। তবে আগে একটি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ কতটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণ করতে পারবে সে বিষয়ে কিছু বলা ছিল না। নতুন নীতিমালায় বলা হয়, একটি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ পাঁচটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণ করতে পারবে।

এ ছাড়া একটি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান এখন থেকে তার বিতরণ করা ঋণের সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ বা ৩ হাজার কোটি টাকার ৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৫০ কোটি টাকার মধ্যে যেটি কম হবে সেই পরিমাণ ঋণ বিতরণ করতে পারবে। মোট ঋণের মধ্যে নারীদের দিতে হবে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ