ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

২১ দিনে ১২০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স 

প্রকাশনার সময়: ২৫ অক্টোবর ২০২১, ২২:০৪

করোনার মধ্যেও রেমিট্যান্স চমক দেখিয়েছে। প্রতি মাসেই বেড়েছে। তবে করোনা কমে যাওয়ার পর উল্টো পথে হাঁটছে। গত তিন মাসে নিম্নমুখী রেমিট্যান্স প্রবাহ। চলতি অক্টোবরেরও একই অবস্থা। মাসের প্রথম ২১ দিনে ১২০ কোটি ৭০ লাখ (১.২০৭ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৫০ পয়সা ধরে) যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ হাজার ৩১৯ কোটি টাকা। চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে মাসের শেষে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ১৭০ কোটি ডলার আসবে বলে ধারণা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা, যা পূর্বের থেকে সামান্য কম।

রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের শুরুতে মহামারি করোনার কারণে প্রবাসীরা এক ধরনের অনিশ্চয়তা থেকে তাদের জমানো টাকা দেশে পাঠিয়েছিলেন। অনেকে চাকরি হারিয়ে কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে সব অর্থ দেশে এনেছেন। তাছাড়া গত বছরের শুরুতে করোনার স্থবিরতার কারণে হুন্ডি প্রবণতা কমে যায়। ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থের পাঠানো বেড়ে যায়। এসব কারণে মহামারির মধ্যেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ে। এখন করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।

অনেক দেশে ভ্রমণ-যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য সচল হয়েছে। ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে অর্থের চাহিদা বেড়ে গেছে। এ কারণে বৈধ চ্যানেলে প্রবাসী আয় কমছে। এছাড়া অনেকে দেশে এসে আটকা পড়েছেন। আবার অনেক প্রবাসী নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে দেশে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন। এসব কারণে রেমিট্যান্স নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। তবে শ্রম রফতানি শুরু হওয়ায় শিগগিরই আবার প্রবাসী আয় ইতিবাচক হবে বলে প্রত্যাশা করছেন ব্যাংকাররা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, চলতি অক্টোবর মাসের ৩ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ২৪ কোটি ৫৪ লাখ মার্কিন ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৯২ কোটি ৯৪ লাখ মার্কিন ডলার। বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫৫ লাখ ডলার। দুটি বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে একটিতে এসেছে দুই কোটি ৬৪ লাখ মার্কিন ডলার।

চলতি মাসের ২১ দিনে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকটির মাধ্যমে ৩১ কোটি ১৫ লাখ ডলার এসেছে। এরপর ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে প্রায় ১৩ কোটি ৭৯ লাখ ডলার, অগ্রণী ব্যাংকে ৯ কোটি ৯৪ লাখ ও সোনালী ব্যাংক ৮ কোটি ১৩ লাখ ডলার এবং ব্র্যাক ব্যাংকে এসেছে ৬ কোটি ৩২ লাখ ডলারের প্রবাসী আয়।

আলোচিত সময়ে সরকারি বিডিবিএল, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, পুলিশের কমিউনিটি ব্যাংক, বিদেশি ব্যাংক আল-ফালাহ, হাবিব ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সবশেষ গেল সেপ্টেম্বর মাসে দেশে ১৭২ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। প্রবাসী আয়ের এ অঙ্ক গত ১৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। তার আগে ২০২০ সালের মে মাসের দেশে ১৫০ কোটি ডলার সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স এসেছিল।

এছাড়া তিন মাস ধরে ধারাবাহিক রেমিট্যান্স কমছে। এর আগে গত আগস্ট মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮১ কোটি ডলার। যা তার আগের মাস জুলাইয়ের চেয়ে ৬ কোটি ১৪ লাখ ডলার কম। এছাড়া আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ কোটি ৩৮ লাখ বা প্রায় ৮ শতাংশ কম। এর আগে চলতি বছরের জুলাইয়ে দেশে ১৮৭ কোটি ১৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে। যা তার আগের মাস জুনের চেয়ে ৬ কোটি ৯৩ লাখ ডলার কম। এছাড়া আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৮ শতাংশ কম।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে আসে। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। এর আগে কোনো অর্থবছরে এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি বাংলাদেশে। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। অর্থবছর হিসেবে যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ। তারও আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণের রেকর্ড হয়। ওই সময় এক হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে।

২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে আরো ২ টাকা যোগ করে মোট ১০২ টাকা পাচ্ছেন সুবিধাভোগী।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ