ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘ভুল তথ্যে’ বাড়ল সয়াবিনের দাম!

প্রকাশনার সময়: ২৩ অক্টোবর ২০২১, ০৪:৫২ | আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২১, ০৪:৫৫
ফাইল ছবি

দেশের বাজারে গত এক বছরে লিটার প্রতি ৫৫ টাকা দাম বেড়েছে ভোজ্যতেলের। যেখানে গত পাঁচ মাসেই লিটারপ্রতি দাম বেড়েছে ১৯ টাকা! সবশেষ গত মঙ্গলবার লিটারপ্রতি ৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে। যেখানে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে দাম তো বাড়েইনি, উল্টো গত মে থেকে প্রতি মাসেই তেলের দাম কমেছে। যেখানে পাঁচ মাসেই কমেছে প্রতি টনে ১৮০ ডলার। ডিসেম্বর মাসেও আরো কমতে পারে বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মিডিয়ার খবর।

বাংলাদেশ ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী ও বনস্পতি উৎপাদক সমিতি দাম বাড়ানোর ‘ভুল তথ্যে’ প্রভাবিত হয়ে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তেলের দাম বৃদ্ধিতে সায় দিয়েছে। যাতে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ ক্রেতারা। সংগঠনটির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি তারা এড়িয়ে যান।

নিত্যপণ্যের বাজার বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম কমছে। সেপ্টেম্বর মাস শেষে প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল এক হাজার ৩৯৮ ডলারে বেচাকেনা হয়েছে। গত আগস্টে প্রতি টনের দাম ছিল এক হাজার ৪৩৪ ডলার। অর্থাৎ আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরে প্রতি টনে কমেছে ৩৬ ডলার। তার আগে জুলাইয়ে প্রতি টন অপরিশোধিত ভোজ্যতেলের দাম ছিল এক হাজার ৪৬৮ ডলার, জুনে এক হাজার ৫১৮ ডলার এবং মে মাসে এক হাজার ৫৭৪ ডলার। মে মাস থেকে জুনে ৬০ ডলার, জুন থেকে জুলাইয়ে কমেছে ৫০ ডলার এবং জুলাই থেকে আগস্টে ৩৪ ডলার।

গত মে থেকে প্রতিমাসেই আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে তেলের দাম। যা চলতি অক্টোবরে আরো কমেছে। অথচ দেশের বাজারে পণ্যটির দাম বাড়ছেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, দেশে বছরে ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে দেশে উৎপাদিত সরিষা, সূর্যমুখীসহ অন্যান্য তেলবীজ থেকে সোয়া দুই লাখ টন তেল পাওয়া যায়। বাকিটা আমদানি করতে হয়। মালয়েশিয়া, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে থেকে এসব তেল আমদানি হয়ে থাকে। হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানি পরিশোধিত ও অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানি করে বাজারজাত করছে।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য বাংলাদেশ ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী ও বনস্পতি উৎপাদক সমিতিতে ফোন দেয়া হলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বার বার ভোজ্যতেলের দাম বাড়া প্রসঙ্গে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সরকারের উচিত সব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া। এখন মূল্যস্ফীতি যদি গড়হারে বাড়ে, কিন্তু আয় যদি না বাড়ে তাহলে জনসাধারণের জীবনযাত্রায় ব্যয় সমন্বয়ে কষ্ট হবে। এজন্য মানুষের আয় বৃদ্ধির বিষয়েও সরকারকে মনোযোগ বাড়াতে হবে।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার সয়াবিনের লিটারপ্রতি দাম বাড়ানো হয়েছে ৭ টাকা। ১৫৩ টাকায় বিক্রি হওয়া তেল এখন থেকে কিনতে হবে ১৬০ টাকায়। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন ও অপরিশোধিত পাম তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে এই দাম নির্ধারণ করা হয়। ওই দিন থেকেই প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬০ টাকায় কিনতে হবে। এ ছাড়া পাঁচ লিটারের এক বোতল তেল বিক্রি হচ্ছে ৭৬০ টাকায়, যা আগে ছিল ৭২৮ টাকা। এ ছাড়া খোলা সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১৩৬ টাকা ও বোতলজাত পাম সুপার তেল ১১৮ টাকা দরে কিনতে পারবেন ক্রেতারা।

এর আগে গত ২৭ মে সয়াবিন তেলের দাম এক লাফে লিটারে ৯ টাকা বাড়ানো হয়। তবে পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে সয়াবিন তেলে লিটারপ্রতি তিন টাকা ছাড় দেয়ায় সেবার সব মিলিয়ে দাম বাড়ে ১২ টাকা।

এই দাম বৃদ্ধির খবরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সাধারণ ক্রেতারা। সিদ্দিক হোসেন নামের এক ক্রেতা নয়া শতাব্দীকে বলেন, দাম বৃদ্ধির কথা মুখে নিতে দেরি, কিন্তু দাম বাড়তে আর দেরি হয় না। এভাবে সবকিছুর দাম বাড়লে সাধারণ মানুষের যাওয়ার জায়গা থাকবে না। এরআগেও সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন উচিত ছিল কমানো। কিন্তু না কমিয়ে আরো বাড়িয়ে দিল। দেশটা এখন মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে। যা যে ইচ্ছে করে যাবে, আর সরকার বসে বসে দেখবে। এদিকে সাধারণ মানুষের কথা কেউ চিন্তা করে না।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ