নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলছে। সপ্তাহ ব্যবধানে দাম বেড়েছে পেঁয়াজ, মুরগি ও ডিমের। এছাড়াও দাম বেড়েছে চিনিরও। কাঁচামরিচ এখনো দুশ’র উপরে। মাংস আর তেলে বিরাজ করছে অস্বস্তি। সব মিলিয়ে নিত্যপণ্য এখন সীমিত আয় ও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে।
তবে কমেছে সবজি ও চালের দাম। অপরদিকে, অপরিবর্তিত রয়েছে অন্যান্য পণ্যের দাম। এদিকে খুলনায়ও উত্তাপ ছড়াচ্ছে পেঁয়াজ-মরিচ ও সয়াবিনের দাম। শুক্রবার সকালে রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, খিলগাঁওসহ রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এসব চিত্র উঠে এসেছে।
রাজধানীর বাজারে দাম বেড়েছে ডিমের। লাল ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। হাঁসের ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা। সোনালী (কক) মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকায়।
বাজারে আবারও বেড়েছে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম। ব্রয়লার কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা। সোনালি মুরগি (কক) কেজিতে ৩০ টাকা দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়। গত সপ্তাহে সোনালি মুরগির কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ২৯০ টাকা।
লেয়ার মুরগি আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। কেজি ২৩০ টাকা। রামপুরা বাজারের মুরগি বিক্রেতা জাবের হোসেন বলেন, বাজারের সব পণ্যের দাম বেড়েছে। এর সঙ্গে বেড়েই চলেছে মুরগির দামও। এছাড়া গরুর মাংস প্রতিকেজি ৫৬০ টাকা, খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়।
মুরগির দামের বিষয়ে কাপ্তান বাজারের ব্যবসায়ী মো. ইদ্রিস আলী বলেন, মাসখানেক আগেও ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম বেশ কম ছিল। এ কারণে ফার্ম মালিকরা মুরগির উৎপাদন কমিয়ে দেন। তাই এখন বাজারে মুরগি সরবরাহ কম। অন্যদিকে হোটেল-রেস্টুরেন্টসহ সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছে। আবার বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান হচ্ছে। ফলে মুরগির চাহিদা বেড়েছে। সবমিলিয়ে মুরগির দাম বেড়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, সামনে বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাড়বে। ফলে মুরগির চাহিদাও আরও বাড়বে। তাই আমাদের ধারণা সামনে মুরগির দাম আরও বাড়তে পারে। একমাসের মধ্যে ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০-২৫০ টাকা এবং সোনালি মুরগির কেজি ৪০০ টাকা হয়ে গেলেও অবাক হবো না।
বাজারে বেশিরভাগ সবজির দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কমেছে। এসব বাজারে প্রতি কেজি (গোল) বেগুন ৮০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০ টাকা, পাতা কপি ও ফুল কপি প্রতি পিস ৫০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, ইন্ডিয়ান টমেটো ১৪০ থেকে ১৭০ টাকা, সিম ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, চাল কুমড়া পিস ৪০ টাকা, প্রতি পিস লাউ আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, লতি ৬০ টাকা ও কাকরোল ৬০ টাকা।
ক্রেতা শাহাদাত হোসেন নয়ন বলেন, বাজারের সব পণ্যের দামই আকাশছোঁয়া। এমন কোন পণ্য নেই যা আমাদের জন্য সহনীয় পর্যায়ে আছে।
বাজারে সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ৫ টাকা কমেছে। শীতের মৌসুম আসছে আর বাজারে কমতে শুরু করছে সবজির দাম। এইসব বাজারে কাঁচামরিচের দাম কমে বিক্রি হচ্ছে ১৬০-২০০ টাকা কেজি। কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। পেঁপে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা। শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়।
এদিকে গত সপ্তাহে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পেঁয়াজের দাম বেড়ে এখন ৭৫ থেকে ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এ হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা। হঠাৎ পেঁয়াজের এমন দাম বাড়ার কারণ হিসেবে কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বলেন, পূজার কারণে কয়েকদিন ধরে ভারত থেকে পেঁয়াজ কম আসছে। আবার ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। এছাড়া বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহও কিছুটা কমেছে। সবমিলে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে।
এছাড়া শুকনা মরিচ প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, রসুনের কেজি ৮০ থেকে ১৩০ টাকা, দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। চায়না আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। হলুদের কেজি ১৬০ টাকা থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইন্ডিয়ান ডাল কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। দেশি ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। এসব বাজারে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। খুচরা প্রতি লিটার তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা। কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে চিনির দাম। প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়। এছাড়া প্যাকেট চিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। আটা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়। তবে বাজারে কমেছে চালের দাম। মিনিকেট চাল প্রতি কেজি ৬৫ টাকা, আটাশ চালের কেজি ৫০ টাকা, নাজিরশাইল চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৮ টাকায়।
চাল বিক্রেতা কামাল সরকার বলেন, বাজারে এখন চালের দাম কম আছে। প্রতি চালের বস্তায় দাম কমেছে ২০ থেকে ৫০ টাকা। এমন চালের দাম থাকলে, মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকবে।
মাছের বাজারেও অস্বস্তি স্পষ্ট। নদীর চিংড়ির কেজি ৭০০ টাকা। তবে বড় সাইজের চিংড়ির নাম আরও বেশি- ৮০৯ টাকা। লাল চিংড়ি ৪৪০ টাকায় মিলছে। চাষের ট্যাংরা মাছ ৪৬০ টাকা। রুই দিন দিন যেন ধরাছোঁয়ার বাইরে যাচ্ছে, এক থেকে দেড় কেজি ওজনের রুই ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আইর মাছ ৬০০, বোয়াল ৪৫০, কাতল ৪০০ টাকা।
তেলাপিয়া ১৬০ টাকা কেজিতে মিললেও নদীর সরপুঁটি ৪০০ টাকা, তবে চাষের দেশি সরপুঁটি ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাছ বিক্রেতা তরিকুল ইসলাম বলেন, ১৫ দিন আগেও রুই-কাতলা মাছের দাম ২০০ থেকে আড়াইশ টাকা ছিল। এখন কেজিতে ৭০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
খুলনা ব্যুরো জানান, খুলনায় পাঁচ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ২০ টাকা। ভোজ্যতেলের দামও সপ্তাহ ব্যবধানে প্রতি কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। বাজারে দেশি কাঁচা মরিচের সংকট থাকায় কদর বেড়েছে বরজ ঝালের। প্রতিকেজি বরজ (টেপা ঝাল) ঝালের খুচরা মূল্য এখন ২০০ টাকা।
নগরীর কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে জানা গেছে, প্রতিকেজি পেঁয়াজের খুচরা মূল্য ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত চার দিন আগে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৪৫ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৪০ টাকা। আর বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটারে বেড়েছে পাঁচ টাকা। বর্তমানে এক লিটারের সয়াবিন তেলেন বোতল ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সূত্র জানায়, গেল বছরের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধি পায়। তারপর থেকে দফায় দফায় বাড়তে থাকে তেলের দাম। ৯৫ টাকার তেলের লিটার এখন ১৫৫ টাকা।
খুলনার সোনাডাঙ্গার ট্রাক টার্মিনালের পোঁয়াজ ব্যবসায়ী ও জাকারিয়া বাণিজ্য ভান্ডারের মালিক মো. চাঁন মিয়া জানান, ভারতের বাজার দর বাড়ায় দেশীয় এ পণ্যটির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকায়। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৩৭ থেকে ৩৮ টাকায়। যেহেতু পেয়াজ ভারত নির্ভরশীল পণ্য। এ অবস্থা দেখে দেশের অসাধু ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মজুদ করে দাম অস্বভাবিক আকারে বাড়িয়ে দিয়েছে। দেশে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকদের কাছে যে পরিমাণ পেঁয়াজের মজুদ আছে তা দিয়ে চার মাস দেশের মানুষের পেঁয়াজের প্রয়োজন মেটানো সম্ভব বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বড় বাজারের তেল ব্যবসায়ী রুহুল আমিন জানান, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি খোলা সয়াবিন তেল ও বোতলে ৫ টাকা করে বৃদ্ধি করা হয়েছে। আবারো তেল কোম্পানি থেকে জানানো হচ্ছে আগামী সপ্তাহ থেকে তেলের দাম আরো ৫ টাকা করে বাড়ানো হবে। খুচরা বাজারে এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
রূপসা বাজারের তেল ব্যবসায়ী মো. লিটন হাসান জানান, ১ লিটারের প্রতিটি তেলের বোতলে ৫ টাকা ও পাঁচ লিটারের প্রতিটি বোতলে ২০ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে, বাজারে দেশী কাঁচা মরিচের সংকট থাকায় এলসি মরিচের ছড়াছড়ি। এলসির এ পণ্যটি উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল রয়েছে। বর্তমানে এ পণ্যটি মানভেদে প্রতিকেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ট্রাক টার্মিনালের কাঁচা মরিচ ব্যবসায়ী ও যমুনা বাণিজ্য ভান্ডরের মলিক রবিউল ইসলাম জানান, প্রতি কজি ভারতী কাঁচা মরিচের শুল্ক কর দিতে হয় ২৯ টাকা। যেখানে আগে দিতে হতো ২০ টাকা। আর কাঁচা মরিচ ভারত থেকে ক্রয় করতে হয় ৩০ টাকায়। সাথে রয়েছে পরিবহন খরচ। সব মিলিয়ে এ নির্ধারিত মূল্যের কম দামে বিক্রি করলে তাদের লস হবে।
অপরদিকে মিস্ত্রীপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী রাসেল মিয়া জানান, বাজারে দেশী এ পণ্যটি না থাকায় বরজ ঝালে কদর বেড়েছে। প্রতিকেজি এখন ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ