দীর্ঘদিন থেকে দেশের ব্যাংক খাত খেলাপির ক্যান্সারে ভুগছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সময়ে হুহু করে বাড়ছিল ব্যাংকে কোটিপতি হিসাবের সংখ্যা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর কোটিপতির জোয়ারে ভাটা নেমেছে। এতে ব্যাংক খাত থেকে বেরিয়ে গেছে ২৬ হাজার কোটি টাকা। আর মাত্র তিন মাসেই কোটিপতি কমেছে দেড় হাজারের বেশি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার পতনের পর ফ্যাসিবাদের সঙ্গে জড়িত রাজনীতিবিদ ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তারা পালিয়ে যাওয়ার সময় ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়ে গেছেন। এ কারণে কোটিপতির সংখ্যা কমছে। আগামীতে এ সংখ্যা আরও কমে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তিন মাসের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ব্যবধানে ২৬ হাজার কোটি টাকার বেশি তুলেছেন—এমন ব্যক্তিদের সবাই কোটিপতি। অন্যদিকে জমা টাকা উত্তোলন করার কারণে দেড় হাজারের বেশি সংখ্যক মানুষের ব্যাংক হিসাব কোটি টাকার নিচে নেমে গেছে। অর্থাৎ বিপুলসংখ্যক ধনী তাদের জমানো টাকা ব্যাংক থেকে তুলে ফেলেছেন।
একই সঙ্গে আলোচিত সময় (সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে) এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে—এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৭ হাজার ১২৭টি। কোটি টাকার ওপরে এসব হিসাবে জমা আছে সাত লাখ ৪৬ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতের ৪১ শতাংশ কোটি টাকার হিসাবধারীদের। এর আগে গত জুন প্রান্তিকে কোটি টাকার বেশি আমানত ছিল এক লাখ ১৮ হাজার ৭৮৪টি। ওই সব হিসাবে জমা ছিল সাত লাখ ৭৩ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে কোটি টাকার ওপরে থাকা হিসাব ও তাদের জমানো টাকা দুটোই কমেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, কোটি টাকার হিসাবে ব্যক্তির পাশাপাশি অনেক প্রতিষ্ঠানের নামও রয়েছে। আবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক হিসাবও রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিল পাঁচজন, ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। ১৯৮০ সালে কোটিপতিদের হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৮টি। এরপর ১৯৯০ সালে ৯৪৩টি, ১৯৯৬ সালে দুই হাজার ৫৯৪ জন, ২০০১ সালে পাঁচ হাজার ১৬২টি, ২০০৬ সালে আট হাজার ৮৮৭টি এবং ২০০৮ সালে ছিল ১৯ হাজার ১৬৩টি।২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে এই আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৮৯০টি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দাঁড়ায় এক লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টিতে এবং গত জুনে সেই হিসাবের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ১৮ হাজার ৭৮৪টিতে। সবশেষ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে সেই হিসাবের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৭ হাজার ১২৭টিতে।
নয়াশতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ