রাসুল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা পোষণ করা ইমানের দাবি। সবার চেয়ে তাকে বেশি ভালোবাসা প্রত্যেক মুমিনের ইমানি দায়িত্ব। এ ছাড়া কোনো মুমিনের ইমান পরিপূর্ণ হতে পারে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যার হাতে আমার প্রাণ তার কসম করে বলছি, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের পিতা, সন্তান এবং সব মানুষের চেয়ে আমি তোমাদের কাছে বেশি প্রিয় না হই।’ (বুখারি: ১৫)
সাহাবিগণ নিজেদের প্রাণের চেয়েও রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে অনেক বেশি ভালোবাসতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি তাদের ভালোবাসা এত বেশি ছিল যে, তার নির্দেশে তারা নিজেদের পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন ও বাড়িঘর ছেড়ে হাবশা ও মদিনায় হিজরত করেন। অনেক জুলুম-নির্যাতন সত্ত্বেও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ থেকে তারা এক চুল পরিমাণ বিচ্যুত হননি। তাঁর প্রতিটি নির্দেশ তারা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশে জিহাদের ময়দানে অসংখ্য সাহাবি হাসিমুখে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন।
উহুদ যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন রক্ষার জন্য বেশ কয়েকজন সাহাবি নিজেদের শরীরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। শত্রুদের নিক্ষিপ্ত তীর থেকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে হেফাজত করার জন্য তারা হাসিমুখে শাহাদাতবরণ করেন। সিরাত ও ইতিহাসের কিতাবে নবীজি (সা.)-এর প্রতি সাহাবিদের ভালোবাসার এ রকম অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা শুধু মুখে দাবি করলেই হয় না। তাঁর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জন্য শরিয়তসম্মত বিভিন্ন উপায় আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হচ্ছে- জীবনের সর্বক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নতগুলো মেনে চলা। সুন্নতের প্রতি ভালোবাসা ছাড়া কেউ রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে ভালোবাসার দাবি করতে পারে না। কেননা, সুন্নতের প্রতি ভালোবাসা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসার নামান্তর। এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে জীবিত করল সে যেন আমাকেই ভালোবাসল। আর যে ব্যক্তি আমাকে ভালোবাসল সে জান্নাতে আমার সঙ্গেই থাকবে।’ (তিরমিজি: ২৬৭৮)
জীবনে চলার পথে আমরা বিভিন্ন জনের মধ্যে নানা মতভেদ দেখতে পাই। অনেক সময় আমরা কোন পথে চলব এ ব্যাপারে দিশাহারা হয়ে পড়ি।
এ সময় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দিকনির্দেশনা সন্তুষ্টচিত্তে মেনে চলা উচিত। এটাও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। রাসুলুল্লাহ (সা.) জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদেরকে দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। এসব নিঃসঙ্কোচে মেনে চলা ছাড়া কেউ তার ইমানের পরিপূর্ণতা দাবি করতে পারে না।
এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আপনার রবের কসম, তারা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের মতভেদপূর্ণ বিষয়ে আপনার ফয়সালা মেনে নেয়। এরপর আপনার ফয়সালার ব্যাপারে তাদের অন্তরে কোনো সংকীর্ণতা থাকে না এবং তা সন্তুষ্টচিত্তে কবুল করে নেয়।’ (সুরা নিসা: ৬৫)
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ