ডলার সংকটের মধ্যেই বিদেশি ঋণ পরিশোধে চাপ পড়েছে সরকারের ওপর। আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপের পরও রিজার্ভ মজুদ করে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধে নতুন রেকর্ড করেছে সরকার। ফলে দিন দিন কমছে বৈদেশিক মুদ্রার সংরক্ষণ। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশকে প্রায় ৩৩৬ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে। এই প্রথমবারের মতো এক বছরে বিদেশি ঋণ পরিশোধ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেল। পরিশোধ করা অর্থের মধ্যে আসল ২০১ কোটি ডলার, আর সুদের পরিমাণ প্রায় ১৩৫ কোটি ডলার। গতকাল রোববার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) বিদায়ী অর্থবছরের বৈদেশিক ঋণের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, বছর ব্যবধানে ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধ-দুটোই বেশ বেড়েছে। গত অর্থবছরের তুলনায় এ বৃদ্ধি ২৫ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সুদ ও আসল মিলিয়ে ২৬৮ কোটি ডলার পরিশোধ করেছিল বাংলাদেশ। কয়েক বছর ধরেই বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। ঋণ পরিশোধ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে গত দুই বছরে। বিদেশি ঋণ পরিশোধের এই চাপ শুরু হয়েছে এমন এক সময়ে, যখন দেশে দীর্ঘদিন ধরে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট চলছে। বিদেশি ঋণ পরিশোধ বাবদ অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বাজেটে বাড়তি চাপের সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে বিদেশি ঋণের আসল পরিশোধ যে গতিতে বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি গতিতে বেড়েছে সুদ বাবদ খরচ। গত অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় আসল পরিশোধ বেড়েছে ২৮ কোটি ডলার বা ১৬ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আসল পরিশোধ করতে হয়েছিল ১৭৩ কোটি ডলার।
অন্যদিকে এক বছরের ব্যবধানে সুদ পরিশোধ বেড়েছে ৪৫ শতাংশ। গত অর্থবছরে সুদ খাতে অতিরিক্ত খরচ করতে হয়েছে ৪২ কোটি ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরের সুদ বাবদ ৯৩ কোটি ডলার খরচ করতে হয়েছিল। বিদায়ী অর্থবছরে প্রথমবারের মতো শুধু সুদ বাবদ খরচও এক বিলিয়ন ডলার বা ১০০ কোটি ডলার ছাড়াল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইআরডির এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘বিদেশি ঋণ পরিশোধ প্রত্যাশার তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। তবে বিদেশি ঋণ পাওয়া আমাদের প্রত্যাশার মধ্যেই আছে। বিদায়ী অর্থবছরে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ের প্রত্যাশা করেছিলাম।’ ইআরডির তথ্য অনুসারে, গত অর্থবছরের জুলাই থেকে জুন সময়ে ৯৮৬ কোটি ডলারের বিদেশি ঋণ এসেছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ছাড় বেড়েছে ৫৫ কোটি ডলার। আগের অর্থবছর, অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৯২১ কোটি ডলার ছাড় করেছিল উন্নয়ন সহযোগীরা। এদিকে গত অর্থবছরে ঋণদাতা সংস্থা ও দেশগুলো ১ হাজার ৭২ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, চলতি অর্থবছরে ঋণ পরিশোধ ও রাজস্ব আয় এবং অনুদানের অনুপাত শতভাগ ছাড়িয়ে যাবে। এর অর্থ এই নয় যে, উদ্বেগের কিছু নেই। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দুটি উদ্বেগের বিষয় হলো—কম রাজস্ব আদায় ও চলমান ডলার সংকট। রাজস্ব আদায় ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ঋণ পরিশোধের চাপ এখনো অনেক বেশি এবং এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের কোনো পথ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। পাশাপাশি ভবিষ্যতে স্বল্প সুদে বিদেশি ঋণ নেয়ার চেষ্টা করতে হবে সরকারকে।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ