ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

চিনি নিয়ে নতুন জটিলতা

প্রকাশনার সময়: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৪:২২

খোলাবাজারে প্রতিকেজি চিনির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। তবে নির্ধারিত দামে মিলছে না পণ্যটি। বেঁধে দেয়া মূল্যের চেয়ে রাখা হচ্ছে বেশি দাম। অতিরিক্ত মূল্য ঠেকাতে অভিযান পরিচালনা করছে সরকার। আর এ অভিযানের ভয়ে চিনি বিক্রি করছেন না অনেক পাইকার। ফলে বাজারে দেখা দিচ্ছে কৃত্রিম সংকট। সব মিলিয়ে চিনি নিয়ে বাজারে তৈরি হয়েছে নতুন জটিলতা।

রাজধানীর অন্যতম বড় পাইকারি আড়ত কারওয়ান বাজারের অনেক দোকানে নেই চিনি। কারণ একটাই মিলগুলো থেকে চিনি সরবরাহ করা হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে যেখানে যেটুকু চিনি মিলছে দাম রাখা হচ্ছে বেশি। অন্যদিকে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হলেই নেমে আসছে অভিযানের খড়গ। ফলে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

জানা গেছে, খোলা চিনির দাম প্রতি কেজি ৭৪ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। প্যাকেটজাত হলে কেজিপ্রতি দাম পড়বে ৭৫ টাকা। বাজারে অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বমূল্য রোধে গত ৯ সেপ্টেম্বর চিনির দাম নির্ধারণ করেছিল বাংলাদেশ সুগার রিফাইনারস অ্যাসোসিয়েশন। গতকাল সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনি ৮০-৮২ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ৮৪ থেকে ৮৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা নির্ধারিত দামের অনেক বেশি। অতিরিক্ত দামে চিনি বিক্রির দায় পাইকারদের দুষছেন খুচরা বিক্রেতারা। পাইকাররা দুষছেন আবার মিল মালিকদের। তবে এ নিয়ে মুখ খুলছেন না মিল মালিকরা। রাজধানীর বাড্ডার

বিক্রেতা ইলিয়াস হোসেনের কাছে জানতে চাইলে বলেন, চিনি কেজিপ্রতি ৮০ টাকা দামে বিক্রি করছেন। সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি না করার কারণ জানতে চাইলে এ খুচরা বিক্রেতা চিনি কেনার রসিদ দেখিয়ে বলেন, প্রতি কেজি চিনি পাইকারি ৭৭ টাকা কেজি দামে কিনে কীভাবে ৭৪ টাকায় বিক্রি করব? ওই একই এলাকার মামুন নামের এক বিক্রেতা বলেন, আমরা বাড়তি দামে চিনি কিনি বলেই সরকারের নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে পারছি না।

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, দাম নির্ধারণ করা হলেও সেটা মিল পর্যায় থেকে হোক। মিল বেশি দামে বিক্রি করলে, পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে কিনতে হলে, খুচরা বিক্রেতাদের অতিরিক্ত দামে বিক্রি করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। বাজারে সরকারের চিনির মিলে উৎপাদিত লাল চিনির দাম কেজিপ্রতি ৯৫ টাকায় উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে অনেক দোকানে ‘চিনি নেই’ বলা হচ্ছে।

রাজধানীর সেগুনবাগিচার মাহিন জেনারেল স্টোরে দুদিন আগে বাড়তি দামে চিনি বিক্রি করায় ম্যাজিস্ট্রেট দোকান মালিককে এক হাজার টাকা জরিমানা করেন। ওই দোকানের মালিক বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটকে সব কাগজপত্র দেখিয়েছিলাম, তারপরও জরিমানা করেছেন। আমরা খুব বিপদে আছি।

গত ৯ সেপ্টেম্বর অপরিশোধিত চিনির আন্তর্জাতিক বাজারদর এবং স্থানীয় পরিশোধনকারী মিলসমূহের উৎপাদন ব্যয় বিবেচনায় এনে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে চিনির দাম নির্ধারণ করে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনারস অ্যাসোসিয়েশন। আন্তর্জাতিক বাজারে গত ৫ সেপ্টেম্বরের পর থেকে চিনির দাম বাড়ায় প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ৮৫ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম ৯৮ টাকা করার প্রস্তাব করেছিল সুগার রিফাইনারস অ্যাসোসিয়েশন। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার পর কেজিপ্রতি খোলা চিনির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৭৪ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

গত ১০ অক্টোবর বাজারে নির্ধারিত দামে চিনি বিক্রির কথা থাকলেও সেটা হয়নি। এমনকি এ সিদ্ধান্তের কোনো প্রভাবও পড়েনি বাজারে। উল্টো প্রতিদিনই এ নিত্যপণ্যটির দাম বাড়ছে। ৮০ টাকা কেজির কম কোথাও চিনি মিলছে না। এ নিয়ে কদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় জরিমানাও করেছে ভোক্তা অধিদপ্তর। ঊর্ধ্বমূল্যের বাজারে প্যাকেটজাত কোম্পানিগুলোও সুযোগ বুঝে চিনির দাম বাড়িয়েছে। কোম্পানিভেদে ৮৪ থেকে ৮৬ টাকা গায়ের দাম রাখা হয়েছে। আবার অনেক দোকানে পুরোনো চিনির প্যাকেটে আগের সংখ্যাগুলো মুছে বসানো হচ্ছে নতুন দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারিতে প্রতি কেজি চিনি ৭৬ টাকায় কিনলেও পরিবহন ও অন্যান্য খরচ মিলে সামান্য লাভ ধরে কেজিপ্রতি চিনি ৮০ থেকে ৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্যাকেটজাত চিনিতে প্যাকেটপ্রতি তাদের লাভ হচ্ছে মাত্র দু-এক টাকা। অন্যদিকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম বছরের ব্যবধানে ২৪ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরও এসব চিনি বিক্রি হয়েছে ৬০-৬৫ টাকা কেজি দামে।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ