ঢাকা, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তৃতীয় কিস্তিতে সবুজ সংকেত

প্রকাশনার সময়: ০৮ মে ২০২৪, ০৮:০৬

অবশেষে তৃতীয় কিস্তি পাওয়ার সবুজ সংকেত দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ)। ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তি হিসেবে ৬৮ কোটি ডলার ছাড়ের বিষয়ে আগামী জুনে এই অর্থ ছাড় দেয়ার কথা সংস্থাটির। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির সফররত প্রতিনিধিরা। আইএমএফ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তারা জানান, গত সোমবার আইএমএফ ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উইংয়ের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকে তৃতীয় কিস্তি নিশ্চিত করার জন্য চুক্তির বিভিন্ন দিক চূড়ান্ত করা হয়েছে।

এ বছরের জুন নাগাদ দেশের নিট বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ২০.১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ, ঋণদাতাটি এটা কমিয়ে ১৭-১৮ বিলিয়ন ডলারে নামিয়ে আনতে পারে বলেও জানান তারা।

ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়ার জন্য মার্চ শেষে ১ হাজার ৯২৬ কোটি ডলার ও জুন শেষে ২ হাজার ১০ কোটি ডলার নিট রিজার্ভ সংরক্ষণের শর্ত ছিল আইএমএফের। অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের নিট রিজার্ভের পরিমাণ প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার। এ শর্ত পূরণ না হলেও তৃতীয় কিস্তি পাওয়ার বিষয়ে কোনো সংশয় নেই।

ওই কর্মকর্তা বলেন, আইএমএফের সঙ্গে সরকারের উল্লেখ করার মতো কোনো দ্বিমত নেই। ভর্তুকি কমানো, রাজস্ব ও রিজার্ভ বাড়ানোসহ আইএমএফ যেসব বিষয় বাস্তবায়ন করতে শর্তারোপ করছে, সরকারও সেগুলো বাস্তবায়নে কাজ করছে।

দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার আগেও নিট রিজার্ভের শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। তখন মার্চ ও জুনের জন্য লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে নির্ধারণ করে এমওইউ স্বাক্ষর করে আইএমএফ।

অপর এক কর্মকর্তা বলেন, আগামী জুন-ভিত্তিক রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করা নিয়েও সংশয় রয়েছে সরকারের। তাই জুনভিত্তিক রাজস্ব আদায়ে আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রাতেও ছাড় চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। নতুন এমওইউতে (সমঝোতা স্মারকে) এক্ষেত্রেও ছাড় দিতে পারে সংস্থাটি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব আহরণের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৪০ কোটি টাকার বিপরীতে ১ লাখ ৬২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা আদায় করেছে সরকার। তবে অর্থবছর শেষে আগামী জুন পর্যন্ত ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা কর রাজস্ব আহরণ করতে হবে।

চলতি অর্থবছরের ৯ মাসের রাজস্ব আহরণ প্রবৃদ্ধি বিশ্লেষণ করে জুন শেষে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আহরণের পরিমাণ অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা কম হতে পারে বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, এবার আইএমএফ মোটাদাগে কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে- তার মধ্যে রয়েছে বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া, রাজস্ব আহরণ আরেকটু বাড়ানো ও সরকারের ভর্তুকি কমিয়ে আনা। সরকারও আইএমএফের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নীতি গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছে। জুনভিত্তিক নিট রিজার্ভের শর্ত ২০.১০ বিলিয়ন ডলার থেকে কমিয়ে ১৭-১৮ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করে দিতে পারে আইএমএফ। তবে জুনের আগে এটি অর্জন করাও কঠিন হবে।

অর্থ বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব ড. মাহবুব আহমেদ বলেন, ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়ার জন্য আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছে, সেগুলো পূরণ করতে সরকার কাজ করছে। যদিও নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা রাজস্ব আহরণের শর্ত পূরণ হয়নি, তবুও তৃতীয় কিস্তি পাওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।

তিনি বলেন, আইএমএফের শর্ত সন্তোষজনকভাবে পূরণ করতে না পারলে আগামী অর্থবছরের দুটি কিস্তি পাওয়া কঠিন হবে। কারণ শর্তগুলো বাস্তবায়নের জন্য সরকারের হাতে আগামী অর্থবছর পর্যন্ত সময় রয়েছে। তাই কিস্তি ছাড়ের ক্ষেত্রে এখন বিভিন্ন শর্তে সরকারকে ছাড় দিলেও শেষ সময়ে কঠোর হতে পারে আইএমএফ। তিনি আরও বলেন, শর্ত পূরণ করতে না পারার কারণে বাংলাদেশের ইতিহাসে একবার ছাড়া কখনো আইএমএফের ঋণের শেষ কিস্তি পায়নি বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে আমি অর্থসচিব থাকার সময় আইএমএফের এক বিলিয়ন ডলার ঋণের শেষ কিস্তি পেয়েছিলাম। এর আগে বাংলাদেশ কখনো ঋণের শেষ কিস্তি নিতে পারেনি। ঋণের তৃতীয় এবং চতুর্থ কিস্তির জন্য ব্যাংকিং খাতের শর্ত সামঞ্জস্য করতে গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন আইএমএফের কর্মকর্তারা।

আজ (বুধবার) প্রেস ব্রিফিং করে ঢাকা ছাড়বে আইএমএফের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রো-ইকোনমিক্স ডিভিশনের প্রধান ক্রিস পাপাগেওর্জিউর নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলটি। ঋণ কর্মসূচির পর্যালোচনা করতে গত ২৪ এপ্রিল ঢাকায় আসে এই প্রতিনিধি দল। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমতে থাকার মধ্যে গত বছরের জানুয়ারিতে আইএমএফের সঙ্গে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি করে বাংলাদেশ। ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট সাতটি কিস্তিতে এই ঋণ ছাড় করা হবে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফ ৪৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের প্রথম কিস্তি ছাড় করে। আর ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ছাড় করে।

নয়াশতাব্দী/ডিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ