ঢাকা, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

১২৪০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি!

প্রকাশনার সময়: ০৬ মে ২০২৪, ০৯:৩৮

নিটল মটরস নিটল নিলয় গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। ভারত থেকে গাড়ি আমদানি করে দেশের বাজারে বাজারজাত করে কোম্পানিটি। কিন্তু কোম্পানিটির বিরুদ্ধে উঠেছে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ। ভারত থেকে বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, পিক-আপ প্রভৃতি যানবাহন আমদানি করে ১ হাজার ২৪০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এমন অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটিকে নোটিশ পাঠিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এনবিআর সূত্র বলছে, নিটল মটরস লিমিটেড ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে এ অনিয়ম করেছে। এটি উদঘাটন করেছে এনবিআরের যশোর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট অফিস। ফাঁকি দেয়া অর্থ পরিশোধের জন্য দাবিনামা জারি করেছে ভ্যাট অনু বিভাগ। এ নিয়ে এখন চলছে চিঠি চালাচালি। সর্বশেষ চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে একটি শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, যশোর ভ্যাট অফিসের নিজস্ব অনুসন্ধানে নিটল মটরসের ভ্যাট ফাঁকি দেয়া বা এড়িয়ে যাওয়ার তথ্য-উপাত্ত উঠে এসেছে। তাদের বিরুদ্ধে ‘ইনকাম ফ্রম অপারেটিং ভেহিকেলস’ খাত এবং মূসক দলিলে অপ্রদর্শিত বিক্রয়ের ওপর পরিহার করা ভ্যাটসহ মোট ১ হাজার ২৩৯ কোটি ৯৫ লাখ ৭৫ হাজার ২০ টাকার দাবিনামা চূড়ান্ত করতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে শুনানি হয়েছে। ভ্যাট বিভাগের কাছে ফাঁকির বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। এখন চিঠি চালাচালি চলছে।

অভিযোগের বিষয়ে নিটল-নিলয় গ্রুপের ফিন্যান্স পরিচালক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ভ্যাট কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে। তারা বিষয়টি এখনো তদন্ত করছে। পুরো বিষয়টি অনেকটাই টেকনিক্যাল। তারা (ভ্যাট অফিস) তাদের মতো করে ব্যাখ্যা দিয়েছে। আমরাও কাগজপত্র ও বক্তব্য দিয়েছি। ভালো খবর হচ্ছে, আমরা তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। এখনো চূড়ান্ত দাবিনামা জারি হয়নি।’

মূসক দলিলপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ভারতের নীতা কোম্পানি লিমিটেড তাদের বিক্রয় করা পণ্যের কিছু অংশ নিটল মটরস লিমিটেডের কাছে সরাসরি মূসক-১১ চালানপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করেছে। অবশিষ্ট পণ্য বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বিক্রয় প্রদর্শন করা হয়েছে। ব্যাংকের কাছে বিক্রয় প্রদর্শন করলেও ঠিকানা হিসেবে নিটল মটরসের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। আবার নিরীক্ষাধীন নিটল মটরসের যেসব পণ্য নীতা কোম্পানির কাছ থেকে ক্রয় করা হয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে মূল্য ঘোষণা দাখিল করা হয়েছে। ঘোষিত পণ্য ভোক্তার কাছে মূসক-১১ এর মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে।

নিটল মটরসের নামে যত চালান (মূসক-১১) নীতা কোম্পানি ইস্যু করেছে শুধু সেই পরিমাণ পণ্যই ক্রয় খাতায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু যে পরিমাণ পণ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যাংকের নামে চালানপত্র ইস্যু করে নিটল মটরস লিমিটেড হিসেবে প্রদর্শিত হয়েছে, সেই পরিমাণ পণ্য নিটল মটরসের ক্রয় রেজিস্টার বা বিক্রয় রেজিস্টারে এন্ট্রি করা হয়নি। নীতা কোম্পানির কাছ থেকে সরাসরি প্রতিষ্ঠানের নামে ইস্যু করা মূসক-১১ চালানের মাধ্যমে যত সংখ্যক পণ্য নিটল মটরস ক্রয় করেছে, প্রতিটির ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন কর যুক্ত করে ভোক্তার কাছে বিক্রি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিধি মোতাবেক ক্রয় রেজিস্টার, বিক্রয় রেজিস্টারে এন্ট্রি এবং চলতি হিসাবে সমন্বয়ের মাধ্যমে কর পরিশোধিত আছে।

আর ক্রয় রেজিস্টারে এন্ট্রি করা হয়নি এমন পণ্য ব্যাংকের নামে ক্রয় দেখানো হলেও তা প্রকৃতপক্ষে নিটল মটরসের অনুকূলে সংগ্রহ করা হয়েছে। কর পরিহারের উদ্দেশ্যে বিপণন ও হিসাবের কৌশল গ্রহণ করা হয়। একই উৎস থেকে সংগৃহীত একই মডেল ও বর্ণনার কতিপয় পণ্যে সংযোজন ঘটিয়ে ভোক্তার কাছে বিক্রি ও কর পরিশোধ এবং কতিপয় পণ্য ব্যাংকের মাধ্যমে বিক্রয়ের অজুহাতে কর পরিশোধ ছাড়াই সরবরাহ করা হয়েছে। অর্থাৎ বিক্রয়ের ওপর কোনো মূসক পরিশোধ করা হয়নি। এ কারণে অপ্রদর্শিত বিক্রয়ের ওপর দুটি দাবিনামায় ২৭০ কোটি ৭৯ লাখ ৬৮৭ টাকা ভ্যাট দাবি করা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি নিটল-নিলয় গ্রুপের চিফ ফিন্যান্স পরিচালক ওমর ফারুক।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ