ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
৪০০ কোটি টাকা জালিয়াতি

সাবেক এমডিসহ এসবিএসসির ৯ কর্মকর্তাকে তলব

প্রকাশনার সময়: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২১:০৫ | আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২১:২৭

সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের (এসবিএসসি) সদ্য পদত্যাগী চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেনের ঋণ জালিয়াতির বিষয়ে তদন্তের জন্য সাবেক এমডি মো. রফিকুল ইসলামসহ ৯ জনকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

জানা গেছে, প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে ৯ শীর্ষ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুদক।

বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের সই করা নোটিশে তাদের আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে বলে দুদকের জনসংযোগ দফতর সূত্রে জানা গেছে।

যাদের তলব করা হয়েছে, তারা হলেন- এসবিএসি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী, জ্যেষ্ঠ নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মামুনুর রশীদ মোল্লা।

এছাড়া ব্যাংকের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. জিয়াউল লতিফ, ভিপি ও শাখা প্রধান এসএম ইকবাল মেহেদী, এফএভিপি ও অপারেশন ম্যানেজার মোহা. মঞ্জুরুল আলম, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিদ্যুৎ কুমার মণ্ডল ও ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার তপু কুমার সাহাকেও ওই দিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েন আমজাদ হোসেন। অভিযোগ রয়েছে, দেশে বিদেশে বিভিন্ন কোম্পানি খুলে ‘বিপুল পরিমাণ অর্থ’ আত্মসাৎ করেছেন তিনি।

অভিযোগ অনুসন্ধানে ২০১৭ সালের ২৩ জুলাই ব্যাংকটির চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রফিকুল ইসলাম ও সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। যদিও জিজ্ঞাসাবাদে অধিকাংশ অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন আমজাদ হোসেন।

দুদকে আসা অভিযোগ বলা হয়, আমজাদ হোসেন ক্ষমতার অপব্যবহার করে নামে-বেনামে দেশে বিদেশে বিভিন্ন কোম্পানি খুলে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের খুলনা সদর ও কাটাখালী শাখা ব্যবহার করে আমদানি-রফতানি ও ঋণের আড়ালে নানা দুর্নীতি, অনিয়ম, জালিয়াতির মাধ্যমে আমানতকারীদের বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, রূপসা ফিশ নামের একটি কোম্পানির নামে ৩৭৪ কোটি টাকার ঋণপত্র খোলা হয়েছিল। পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ব্যাংক চেয়ারম্যানের কোম্পানিটির ঋণপত্র খোলার কথা শতভাগ মার্জিনে। যদিও এ সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ঋণপত্রটি খোলা হয়েছিল মাত্র ৫ শতাংশ মার্জিনে। ব্যাংকিং রীতিনীতি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে কিছুদিনের মধ্যেই মার্জিনের অর্থ আমজাদ হোসেনকে ফেরতও দেওয়া হয়। এছাড়া আইন অনুযায়ী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে ঋণপত্রটি খোলার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নেওয়ার কথা। ব্যত্যয় ঘটেছে এক্ষেত্রেও। শুধু রূপসা ফিশ নয়, আমজাদ হোসেনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর প্রায় প্রতিটিই বড় মাত্রায় ছাড় পেয়েছে ব্যাংকটিতে।

এর আগে গত ৫ জানুয়ারি ঋণ জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগের প্রাথমিক অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে আমজাদ হোসেনের নামে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনে চিঠি দিয়েছিল দুদক।

ওই চিঠিতে বলা হয়, আমজাদ হোসেন সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের শেয়ারসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি করার চেষ্টা করছেন। এসব অর্থ অবৈধ প্রক্রিয়ায় দেশের বাইরে পাচারের চেষ্টা করছেন, যা মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ।

গত বছরের জানুয়ারিতে এস এম আমজাদ হোসেন ও তার স্ত্রী সুফিয়া আমজাদ এবং মেয়ে তাজরির বিদেশে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় দুদক।

খুলনা অঞ্চলের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান লকপুর গ্রুপের মালিক এস এম আমজাদ হোসেন। তার মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- লকপুর ফিশ প্রসেস কোম্পানি লিমিটেড, বাগেরহাট সিফুড ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, শম্পা আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড, রূপসা ফিশ অ্যান্ড অ্যালাইড ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, মুন স্টার ফিশ লিমিটেড, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড, খুলনা এগ্রো এক্সপোর্ট প্রাইভেড লিমিটেড, ইস্টার্ন পলিমার লিমিটেড, মেট্রা অটো ব্রিকস লিমিটেড, খুলনা বিল্ডার্স লিমিটেডসহ আরও বেশকিছু প্রতিষ্ঠান।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ