ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে সুবাতাস

প্রকাশনার সময়: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৪:৪৩
ফাইল ছবি

করোনা মহামারিকালে বিপুলসংখ্যক মানুষকে ঘরে থাকতে হয়েছে। ফলে অনলাইনের দিকে ঝুঁকেছে বড় একটা অংশ। খোলা জায়গা হঠাৎ করোনার আঘাতে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনলাইনই ছিল সময় কাটানোর এক মাত্র মাধ্যম। যে কারণে দ্রুত বেড়েছে ভার্চুয়াল ব্যবসা-বাণিজ্য। সুবিধা হওয়ায় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাতে দেখা গেছে গ্রাহকদের। স্বাভাবিক কারণেই বেড়েছে ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যাংকিং ট্রানজেকশন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, গত জুলাইয়ে অনলাইনভিত্তিক ব্যাংকিং ট্রানজেকশন দাঁড়ায় ৯ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৬.১৩ শতাংশ বেশি।

ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরানুল হক বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ তার ব্যাংকিং সেবা গ্রহণের যে স্বাভাবিক অভ্যাস, সেটি পরিবর্তন করেছে। করোনার কারণে মানুষ এখন যত সম্ভব সরাসরি ব্যাংকে গিয়ে টাকা পাঠানোর যে অভ্যাস সেটি পরিবর্তন করেছে, তারা এখন প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করতেই বেশি পছন্দ করছেন, যাতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যাংকিং সেবাগ্রহণকারী গ্রাহকের সংখ্যাও বেড়েছে করোনাকালে। গত জুলাইয়ে ডিজিটাল মাধ্যমে সেবাগ্রহণকারী ব্যাংকের গ্রাহক ছিল ৩৭.১৪ লাখের বেশি। যা গত বছরের চেয়ে ৩০.৬৬ শতাংশ বেশি। করেনা পরিস্থিতির কারণ গত বছরের মার্চে যখন সরকার সারাদেশে বিধিনিষেধ আরোপ করে তখন, ব্যাংকগুলোও তাদের সেবার পরিধি অনলাইনে বাড়ায়। যাতে সারাদেশে তাদের শাখাগুলোতে গ্রাহকদের ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা দিতে পারে।

একই সঙ্গে অধিকাংশ ব্যাংক ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা দিতে, মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যাংকি এবং অনলাইন অ্যাকাউন্ট ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম চালু করে। ব্যাংকাররা বলছেন, এসব চালু করার ফলে করোনাকালে জারি করা লকডাউনের সময় শিক্ষিত ও দক্ষ গ্রাহকরা ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা নিয়েছেন। ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের পরিধি বাড়াতে এরইমধ্যে প্রযুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন সেবা চালু করেছে ঢাকা ব্যাংক। ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরানুল হক বলেন, গ্রাহকরা যাতে তাদের অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে পারে সেজন্য আমরা ‘ঢাকা ব্যাংক গো’ নামের একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করেছি। তিনি আরো বলেন, গ্রাহকরা অন্যান্য একাধিক পরিষেবা যেমন, এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে এমএফএস অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে পারছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন বিল পরিশোধ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফি প্রদান করতে পারছে এ মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে।

ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হোসাইন বলেন, গত বছর মহামারির সময় ব্যাংকগুলো ব্যাপক ডিজিটাল উন্নয়ন করেছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন পরিষেবা দেয়ার মাধ্যমগুলোর উন্নয়ন ব্যাংকগুলোকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ৪ থেকে ৫ বছর এগিয়ে নিয়ে গেছে।

গত বছর ব্র্যাক ব্যাংক একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করে। নাম দেয়া হয় ‘ব্র্যাক ব্যাংক আস্থা’। এর মাধ্যমে অনলাইনে ব্যাংকিং ট্রানজেকশন করতে পারছেন গ্রাহকরা।

আরএফ হোসাইন জানান, ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত শুধু ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার মান বাড়াতে ২০ মিলিয়ন টাকা বিনিয়োগ করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। মেঘনা ব্যাংকও তার ব্যাংকিং কার্যক্রমকে ডিজিটালাইজ করছে।

বেসরকারি এক ব্যাংকের ইন্টারনেট ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান জানিয়েছেন, ব্যাংকভেদে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যাংকিং হচ্ছে মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে। মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে গ্রাহকরা হিসাব খোলা, পরিবর্তন বা স্থানান্তর, বিল পরিশোধ, মোবাইল টপআপ, এটিএম ও শাখার লোকেশন, মিনি ও বিস্তারিত স্টেটমেন্ট, লেনদেনের সার্বিক বিবরণী, ঋণসংক্রান্ত তথ্য, ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ, ব্যালান্স, বকেয়া দেনার হিসাব ও পরিশোধ সীমা ইত্যাদি জানতে পারছেন।

ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহারকারীরা তাদের ইউজার আইডি, পাসওয়ার্ড ও ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে অ্যাপস ব্যবহার করছেন। একেক ব্যাংক একেক নামে অ্যাপস চালু করেছে। যেমন স্মার্ট ওপেনার স্কাই ব্যাংকিং, আইসার, আইস্মার্ট, আলফা ইত্যাদি নামে রয়েছে এসব মোবাইল অ্যাপস। গ্রাহকরা তাদের স্মার্টফোনের মাধ্যমে এসব অ্যাপস ব্যবহার করতে পারছেন। গুগল প্লে স্টোরে এ মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করা যায়। অনেক ব্যাংকের সঙ্গে মিলে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আবার অ্যাপভিত্তিক লেনদেনের প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ